Image of সোহেল মিয়া

নাম: সোহেল মিয়া

জন্ম তারিখ: ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: হোটেল কর্মচারী শাহাদাতের স্থান : মেরুল বাড্ডা, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন, ঢাকা

শহীদের জীবনী

বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলে গেলেন পরপারে।” শহীদ পরিচিতি শহীদ সোহেল মিয়া ছিলেন একজন অকুতোভয় সাহসী নির্ভীক যোদ্ধা। তিনি ১৯৯৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের গোয়াতলা ইউনিয়নের জোকা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জনাব হাকিম বয়স ৬০ বছর এবং মাতা মোছা: আমিনা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও শহীদ সোহেল মিয়া ছিলেন একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন আপোষহীন। স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে একজন বড় মানুষ হবেন। কিন্তু বৃদ্ধ বাবা অকর্মক্ষম হয়ে পড়লে নিজেই কাধে তুলে নেন সংসারের সব দায়-দায়িত্ব। অদম্য ইচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন। বেঁচে থাকার জন্য জীবনের প্রতিটি মূহূর্তে তাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায়, পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব তার উপরে এসে বর্তায়। পড়াশোনা বাদ দিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান জীবিকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় এসে একটি হোটেলে কাজ নেন। সেখানেই দীর্ঘ ৭ বছর ধরে মাত্র ১৮ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে গিয়েছেন।তার বেতনের টাকা দিয়েই কোনোরকম টেনেটুনে সংসার চলত। অনেকটা নূন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তার ঘরে একটি ছোট্ট ছেলেও আছে। ওর বয়স মাত্র ৪ বছর। পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি ঢাকার ভাটারায় তার শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। তার শ্বশুরের অর্থনৈতিক অবস্থাও শোচনীয়। সামান্য ঝুট ব্যবসা করে তিনি সংসার চালান। দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। নিজের আয় দিয়ে বিদেশ যাওয়ার অর্থ যোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব না। তাই তিনি অন্যের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসার কাজ শুরু করেন। তিনি ভেবেছিলেন বিদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে সকল ধার দেনা শোধ করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন। তিনি শুধু একজন জীবন যোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজন সাহসী যোদ্ধা। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন। যেখানে থাকবে না কোন অন্যায়, জুলুম, অবিচার। কিন্তু সহসা তার সকল স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের দিন আনন্দ মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৃশংস গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের হৃদয় বিদারক ঘটনা ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। শত শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে ছাত্রজনতার চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ৫ আগস্ট সারা দেশে আনন্দ মিছিল বের হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে সাধারণ মানুষ গণভবনে ছুটে আসে বিজয়ের অংশীদার হতে। সবার মতো সোহেল মিয়াও ছুটে এসেছিলেন। আনন্দ মিছিল শেষে রাতে বাড়ির দিকে ফিরছিলেন। মেরুল বাড্ডায় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসলে আওয়ামী হায়েনার দল তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। সেখানে তারা অনবরত গুলি ছুড়তে থাকে। একটি গুলি এসে শহীদ সোহেলের গায়ে বিদ্ধ হয়। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসে রক্ত। মূহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সোহেল মিয়া। কংক্রিটের রাস্তা মুহুর্তেই শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। মাটিতে পড়ে কাতরাতে কাতরাতে শাহাদাত বরণ করেন শহীদ সোহেল মিয়া। মৃত্যু হয় এক স্বপ্নবাজের। আওয়ামী নরপিশাচরা তার মৃত্যুর পরও ক্ষান্ত হয় না। তারা শহীদের লাশ গুম করার চেষ্টা করে। অবশেষে ৫২ হাজার টাকার বিনিময়ে অনেক অনুনয়-বিনয় করে তাদের কাছ থেকে লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কতটা অমানবিক, পাষাণ হৃদয়ের হলে মানুষ এমন হীন কাজ করতে পারে? এটিই তার পরিবারের প্রশ্ন। ঘটনার পরদিন ৬ আগস্ট সকালে তার লাশ ঢাকার ভাটারায় আনা হয়। সেখানে তাকে শেষ বিদায় জানাতে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। বিদায় জানাতে এসে আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এরপর রাত ৯ টার দিকে শহীদের লাশ তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় আনা হয়। সেখানেই তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। পারিবারিক অবস্থা তার পারিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। তিনি একটি হোটেলে সামান্য বেতনে কাজ করতেন। তার সামান্য আয়ে সংসার চলত। শহীদের একটি ৪ বছরের ছেলে সন্তান আছে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন। পাসপোর্ট ভিসা করতে তাকে অনেক টাকা ঋণ করতে হয়। শেষ পর্যন্ত বিদেশ যাওয়ার আগেই শাহাদাত বরণ করলেন। এই ঋণের বোঝা বর্তমানে তার পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ব্যক্তিগত পরিচিতি নাম : সোহেল মিয়া পেশা : হোটেল কর্মচারী পিতা : জনাব মো: হাকিম, বয়স: ৬০ বছর মাতা : মোছা: আমিনা খাতুন জন্ম তারিখ ও বয়স : ০৬/০৯/১৯৯৭ শাহাদাতের সময় বয়স ছিল ২৭ বছর শাহাদাত বরণের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, স্থান: মেরুল বাড্ডা, ব্রাক বিশ্বিবদ্যালয়ের সামনে দাফন : ৬ আগস্ট ২০২৪, ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় তার নিজ গ্রামে স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: জোকা, ইউনিয়ন: গোয়াতলা, থানা: ধোবাউড়া, জেলা: ময়মনসিংহ বর্তমান ঠিকানা : খ্রিস্টান গলি খিলবাড়ির টেক, ভাটারা, ঢাকা পরিবার সংক্রান্ত তথ্য : স্ত্রী, ৪ বছর বয়সী এক ছেলে, বৃদ্ধ বা-মা প্রস্তাবনা: ১. শহীদের পরিবারে মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা করা প্রয়োজন। ২. শহীদের সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে। ৩. শহীদের স্ত্রীকে কর্মসংস্থান করে দেওয়া যেতে পারে। ৪. স্থায়ী বাসস্থান করে দেওয়া যেতে পারে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of সোহেল মিয়া
Image of সোহেল মিয়া

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আলী হোসেন

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ

মো: জাহাঙ্গীর

মো: সোহাগ

মো: মনিরুল ইসলাম

মো: জাকির হোসেন

হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমাদ

মো: সাইফুল ইসলাম

মোঃ মমিনুল ইসলাম রিদয়

মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত

মিরাজ হোসেন

মো: নাঈম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo