Image of মো: সোহেল রানা

নাম: মো: সোহেল রানা

জন্ম তারিখ: ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: পোশাক শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : আদাবর থানার সামনে

শহীদের জীবনী

নিজের নামকে শহীদি নাম দ্বারা অলংকৃত করলেন ১৮ মাস বয়সী কন্যা সন্তানের বাবা মো: সোহেল রানা মো: সোহেল রানা জন্মগ্রহণ করেছিলেন ২০০২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেওলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভূইয়া পাড়া শিউলি বাড়ি গ্রামে। জীবন জীবিকার তাগিদে সোহেল রানা নিজের জন্মভূমি ছেড়ে পাড়ি জমান স্বপ্নের শহর ঢাকাতে। স্ত্রী, শিশু কন্যা ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার আদাবর এলাকায়। আদাবরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করে বৃদ্ধা মা এবং স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কোন মতে নিজের সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলেন। এদিকে লাল সবুজের পতাকার দেশ তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের জোয়ারে ভাসছে। ঘাতক সরকার ছাত্রদের প্রাণের ও যৌক্তিক দাবিকে উপেক্ষা করলে প্রথম পর্যায়ের কোটা সংস্কার আন্দোলন বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রূপ লাভ করে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে সেই আন্দোলন এক দফা তথা সরকার পতনের আন্দোলনে ধাবিত হয়। শহীদের মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ স্মরণীয় ৫ আগস্টে গত ১৭ বছরের নির্মম নির্যাতন, নিপীড়ন, জুলুম, নিষ্পেষণ ও স্বাধীনতা হীনতার আধার শেষে স্মরণকালের সর্বনিকৃষ্ট কুখ্যাত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ থেকে পলায়নের সংবাদ যখন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে তখন এদেশের আপামর জনসাধারণ, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সর্বোপরি দেশের সকল স্তরের মানুষ তাদের বুকে চেপে বসা জগদ্দল পাথরের থেকে মুক্তির নৈসর্গিক আনন্দে রাজপথে নেমে আসে। অন্যান্য সকলের মত সোহেল রানা ও বাহির হয়েছিলেন দীর্ঘদিনের কুক্ষিগত স্বাধীনতার নৈসর্গিক নির্যাস উপভোগ করার জন্য কিন্তু ঘাতকের থাবা যে তখনো শেষ হয়ে যায়নি সেটার জলজ্যান্ত প্রমান আমাদের শহীদ মো: সোহেল রানা। সকলের সাথে স্বাধীনতার নতুন সূর্যের আবেশে রাজপথে নেমে উল্লাস করার জন্য যখনই মাত্র সে এবং তার মতো অনেকে আদাবর থানার সামনে দিয়ে এগিয়ে চলছিল তখনও ঘাতকের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী স্বাধীনতার আবেশে মত্ত মুক্তিকামী মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করে তাদের ওপরে নির্বিচার ও নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ঘাতকের এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণে সোহেল রানা গুলিবিদ্ধ হন। ঘাতকের ছোড়া তিনটি বুলেট সোহেলের সিনা ভেদ করে বাহির হয়ে যায় এবং একটি বুলেট শহীদের বাম চোখ বিদ্ধ করে। সাথে সাথেই সোহেলের তাজা রক্ত এই সবুজ জমিনকে লাল করে দেয়, গুলিবিদ্ধ সোহেল ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এবং এই বাংলাদেশের পতাকার যৌক্তিকতা আবারো প্রমাণ করে দিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী এদেশের নির্মল বাতাসের স্বাদ নেয়ার আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরকালের জন্য। শহীদের স্ত্রীর ভাষ্যমতে, তাঁর স্বামীর গুলি লাগার পরে সেখানে থাকা আন্দোলনকারী ছাত্ররা তাঁর স্বামীকে দ্রুত সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহেল রানাকে মৃত হিসেবে সনাক্ত করে এবং জানায় যে, সে ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিল। তাঁর স্ত্রী আরো জানান যে, তাদের কাছে কোন ফোন ছিল না এজন্য তাঁরা সোহেল রানার এক বন্ধুর মাধ্যমে সরাসরি সোহেল রানার মৃত্যুর সংবাদ জেনেছিলেন। এরপর তাঁরা দ্রুত সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে যায় এবং সেখানে সোহেল রানাকে হাসপাতালের বারান্দার একটি বেডের উপরে পড়ে থাকে দেখেন। তারপর ডাক্তার তাদের কয়েকটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়ে লাশ নিয়ে চলে যেতে বলে। তাঁরা লাশের পোস্টমর্টেম না করে আঞ্জুমান মফিদুল হক কর্তৃপক্ষের সহায়তায় লাশের গোসল ও কাফন শেষে আদাবরে প্রথম জানাযা সম্পন্ন করে শহীদের লাশ নিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি ভোলার উদ্দেশ্য রওয়ানা করে। পরের দিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট আসরের নামাজের পরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে শহীদকে তাঁর নিজের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে প্রতিবেশী/বন্ধু/সহপাঠী/নিকটাত্মীয়দের মন্তব্য/বক্তব্য/অনুভূতি শহীদের স্ত্রী সেলিনা বেগমের ভাষ্য, "তাঁর স্বামী অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ ছিলেন। তিনি সমস্ত প্রকারের যৌক্তিক আন্দোলনে প্রথম থেকেই শামিল হতেন যদিও তিনি লেখাপড়া করার খুব বেশি সুযোগ পান নি কিন্তু তিনি সবসময় লেখাপড়া করতে চাইতেন এবং ছাত্রদের দাবির সাথে একত্বতা পোষণ করতেন। তাঁর স্বামী সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেন। একই সাথে তিনি তাঁর রেখে যাওয়া কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট এর একটি যথাযথ বিহিত করার দাবি রাখেন।" শহীদের শ্যালক মো: ইরশাদুল ইসলাম বলেন, "তাঁর দুলাভাই সর্বদা যৌক্তিক আন্দোলনে শামিল হতেন। ইতোপূর্বে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সহ সমস্ত যৌক্তিক আন্দোলনে সে শামিল হয়েছিল। আর ২৪ এর আন্দোলনে সে তাঁর কাজের ফাঁকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করত আন্দোলনে শামিল থাকার। সে লেখাপড়ার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী ছিল।" আদাবর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মুঠোফোনে বলেন, “সোহেল রানা তাদের অধীনেই কাজ করতো। সর্বদা হাস্যজ্জল, সদালাপী সোহেল রানা অত্যন্ত কর্মঠ এবং দায়িত্ববান একজন ছেলে ছিল। তাঁর সকলের সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার চান। এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত করে সোহেল রানার রেখে যাওয়া ১৮ মাস বয়সী কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুসংহত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করার দাবি জানান।" শহীদের পরিবার সম্পর্কে বিশেষ তথ্য ১। শহীদের গ্রামের বাড়িতে কোন বাড়ি-ঘর নেই। ২। শহীদের বিধবা স্ত্রী সেলিনা বেগম বর্তমানে তাঁর ১৮ মাস বয়সি কন্যা সন্তান তৈয়্যেবাকে সাথে নিয়ে নিজের বাবার বাড়ি চুয়াডাঙ্গাতে অবস্থান করছেন। শহীদের পরিবারের বর্তমান আর্থিক অবস্থার বিবরণ: শহীদের পরিবারের বাড়িতে ভিটেবাড়ি সংশ্লিষ্ট সামান্য পরিমাণ জমি আছে। আনুমানিক ১০ শতাংশ। সোহেল রানা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বর্তমানে উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে সোহেল রানার বিধবা স্ত্রী এবং তাঁর রেখে যাওয়া ১৮ মাস বয়সী কন্যা তাঁর স্ত্রীর বাবার বাসাতে একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছে। শহীদের পরিবারকে সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা: শহীদ সোহেল রানার পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় সুতরাং তাঁর পরিবারের সহযোগিতার বিশেষ প্রয়োজন। বলে রাখা ভালো যে, সোহেল রানার গ্রামের বাসা বরিশালের ভোলা জেলাতে কিন্তু সোহেল রানার স্ত্রীর বাবার বাসা খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলাতে। শহীদের বিধবা স্ত্রী তাঁর ১৮ মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে নিয়ে তাঁর বাবার বাসা চুয়াডাঙ্গাতে অবস্থান করছেন। শহীদের রেখে যাওয়া কন্যা সন্তানের জন্য বিশেষ কোন ধরনের আর্থিক ফান্ডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং এটা করা অত্যন্ত জরুরী। তা নাহলে ছোট্ট শিশু তৈয়্যেবার ভবিষ্যৎ মসৃণ নাও হতে পারে। অতএব তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের সুরক্ষার জন্য, তাঁর সুন্দর মত বেড়ে ওঠা, লেখাপড়ার খরচ সহ বিবিধ বিষয়ে সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করার জন্য সোহেল রানার পরিবার বিশেষ আর্থিক সুবিধার দাবিদার। শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: সোহেল রানা পিাতা : মৃত আব্দুল হক মাতা : শাফিয়া খাতুন, পেশায় গৃহিণী পেশা : পোশাক শ্রমিক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ভুইয়াপাড়া শিউলি বাড়ি, ইউনিয়ন: ৩ নং দেওলা, থানা: বোরহানউদ্দিন, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : মহল্লা: শনির বিল, এলাকা: আদাবর, থানা: ঢাকা, জেলা: ঢাকা পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন ঘটনার স্থান : আদাবর থানার সামনে আক্রমণকারী/ঘাতক : আদাবর থানার পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪ আনুমানিক বিকাল ৫.০০ ঘটিকা মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক বিকাল ৫ঃ২০ ঘটিকা শহীদের দাফনের স্থান : ভোলার নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয় শহীদের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা : ৪ : ১। স্ত্রী, নাম: সেলিনা বেগম, বয়স: ১৮, শিক্ষাগত যোগ্যতা : অষ্টম শ্রেণী, পেশা: গৃহিনী : ২। মেয়ে, নাম: তৈয়্যেবা, বয়স: ১৮ মাস : ৩। মা, নাম: শাফিয়া খাতুন, বয়স: ৫৫, পেশা: গৃহিনী

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সোহেল রানা
Image of মো: সোহেল রানা
Image of মো: সোহেল রানা
Image of মো: সোহেল রানা

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আবু ইসাহাক

মো: হাবিব

মো: সাব্বির হাওলাদার

মোঃ সাইফুল ইসলাম

নাসির হোসেন

তাহিদুল ইসলাম

মো: সালাউদ্দিন সুমন

মোঃ মমিনুল ইসলাম রিদয়

ওবায়দুল ইসলাম

মো: নাঈম

মো: মাসুদ

সাজিদ হাওলাদার

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo