জন্ম তারিখ: ৮ এপ্রিল, ১৯৯১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : রং মিস্ত্রী, শাহাদাতের স্থান : বানিয়াচং থানার সামনে
“আমার জন্য সবাই দোয়া কইরো আমি জিহাদে যাইতাছি” মো: আকিনুর রহমান সবসময় শহীদি তামান্না পোষণ করতেন। তিনি ১৯৯১ সালের ৮ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো: তাহের আলী ইন্তেকাল করেছেন এবং ৬৫ বছর বয়সী মাতা মিনারা খাতুন একজন গৃহিণী। ব্যক্তিগত জীবন মো: আকিনুর রহমান শহীদের অমীয় সুধা পান করতে নিজেকে সবসময় প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করার চেষ্টা করতেন। নিজে নামাজ পড়ার পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের নামাজের দিকে আহ্বান করতেন। তার ৩ জন সন্তানকেই তিনি দ্বীনের পথে পরিচালনা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি নিজে খুব বেশি পড়ালেখা করতে না পারলেও সন্তানদেরকে মানুষ করার জন্য দিন-রাত আপ্রান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শহীদ মো: আকিনুর রহমান নিজেকেসহ গোটা পরিবারকে ইসলামের রঙে রঙিন করতে চেয়েছিলেন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ আকিনুর রহমানের পারিবারিক অবস্থা খুবই দুর্বল। তিনি রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। এছাড়াও যখন যে কাজ পেতেন তাই করে সংসার চালাতেন। মৃত্যুকালে তিনি ৩ সন্তান রেখে গেছেন। বড় মেয়ে উম্মে সালমা (০৯) ৩য় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। মেজো মেয়ে সামিয়া সুলতানা (৩.৬) এবং ছোট ছেলের বয়স মাত্র (১.৬) বছর। মৃত্যুকালে তিনি সংসারের জন্য তেমন কোন কিছুই রেখে যেতে পারেন নি। তার কোন ফসলি জমি নেই। ঘরের ভিটাটুকুই তার পরিবারের একমাত্র সম্বল, তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ছোট। রান্না করার মতো তাদের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তিনি তার ঘরের এক কোণায় কোনমতে রান্না করার ব্যবস্থা করেন। তাদের শৌচকাজ করার জন্য কোন বাথরুম না থাকায় বড় ভাইয়ের টয়লেট ব্যহহার করেন। শহীদ আকিনুর রহমান ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ৩ সন্তান নিয়ে আকিনুরের স্ত্রী দিশেহারা প্রায়। তার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে সংঘঠিত ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসীস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নীরিহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় জনতা। “আমি শহীদ হবো, ইনশাআল্লাহ” আন্দোলনে যোগদান ছোটবেলা থেকেই মো: আকিনুর রহমান ছিলেন আন্যায়ের বিরুদ্দে আপোষহীন। তিনি নিজে কখনো কারো সাথে অন্যায় আচরন করা বা মানুষের হক নষ্ট হয় এমন কোন কাজ করতেন না। জুলাই মাসে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে রুপ নেয়; তখন থেকেই তিনি আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা শুর করেন। তিনি নিজে আন্দোলনে শরিক হওয়ার পাশাপাশি এলাকার আন্যান্যদেরও আন্দোলনে শরিক করার চেষ্টা করেন। শাহাদাত বরণ ৫ আগষ্ট আনুমানিক সকাল ১০ টায় মসজিদের মাইক থেকে আন্দোলনের ঘোষণা আসার পর আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি শহীদি তামান্না পোষণকারী মো: আকিনুর রহমান। তিনি যখন ঘর থেকে বের হয়ে বানিয়াচং থানার সামনে আন্দোলন করতে যাচ্ছিলেন তখন তার স্ত্রীকে বলেছিলেন “আমার জন্য সবাই দোয়া কইরো আমি জিহাদে যাইতাছি” সে তার স্ত্রীকে প্রায়ই বলতেন “আমি শহীদ হবো, ইনশাআল্লাহ” আল্লাহ তার ফরিয়াদ শুনেছেন। মো: আকিনুর রহমান অন্যান্যদের সাথে বানিয়াচং থানার সামনে আন্দোলন করতে গেলে স্বৈরাচারী সরকারের লেলিয়ে দেয়া ঘাতক পুলিশ ও সন্ত্রাসী আওয়ামিলীগ এর সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। আন্দোলনের একপর্যায়, একটি গুলি এসে আকিনুর রহমানের বুকের ডান পাশে বিধে এবং পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন সদা হাস্যোজ্জ্বল আকিনুর রহমান। পাড়া প্রতিবেশিরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ করে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে নিজ এলাকায় শহীদের নামাজে জানাজা শেষে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। শহীদ সম্পর্কে বড় ভাইয়ের বক্তব্য শহীদ মো: আকিনুর রহমানের বড় ভাই মো: শাহিনুর রহমান আপন ছোট ভাই সম্পর্কে বলেন, আকিনুর রহমান অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিল। সে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। মাঝে মাঝে তাবলীগেও যেতো। পাড়া প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করতো। সহজ সরল একজন নির্ভেজাল মানুষ ছিল। নিজেও নামাজ আদায় করতো; অপরকেও নামাজের জন্য ডাকতো। গ্রামের মানুষের কাছে একজন ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল। না খেয়ে থাকলেও কারো কাছে ধার নিত না। প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া ২. এককালীন আর্থিক অনুদান ও নিয়মিত মাসিক ভাতা প্রদান ৩. শহীদের সন্তানদের সকল খরচ নিশ্চিত করা এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: আকিনুর রহমান পেশা : রং মিস্ত্রী জন্ম তারিখ : ৮ এপ্রিল ১৯৯১ আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর ১.৩০ মিনিট শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট, ২০২৪ দাফনের স্থান : বানিয়াচং, হবিগঞ্জ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চানপুর, ইউনিয়ন: ১ নং, থানা: বানিয়াচং, জেলা: হবিগঞ্জ পিতা : তাহের আলী মাতা : মিনা খাতুন বাড়ী ঘর ও সম্পদের অবস্থা : শুধুমাত্র বাড়ি ভিটা আছে সন্তানের বিবরণ ১) উম্মে সালমা : বয়স: ৯ বছর, পেশা: ছাত্রী, প্রতিষ্ঠান: আল জামেয়াতুল বাইতুল কোরআন, শ্রেণী: ৩য়, সম্পর্ক: মেয়ে ২) সামিয়া সুলতানা : বয়স: ৩.৫ বছর, সম্পর্ক: মেয়ে ৩) আব্দুল্লাহ আল মামুন : বয়স: ১.৫ বছর সম্পর্ক: ছেলে