জন্ম তারিখ: ৮ এপ্রিল, ১৯৯১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে
শহীদ আনাস ২০০৪ সালের ২৫ আগস্ট হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার খন্দকার মহল্লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হোসেন ও মাতার নাম খাইরুন্নেছা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আনাস নবম শ্রেনিতে পড়াশোনা করতো। ৭ ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। কেমন ছিলো শহীদ আনাস বাবা হারা আনাছ ছিল তার মায়ের চোখের মণি। এলাকার মানুষের ভাষ্যে সে অত্যন্ত সাহসী ও বিনয়ী ছিল। কোনোদিন কারও সাথে বেয়াদবী বা খারাপ আচরণ করেনি। ফলে এলাকাবাসীর অত্যন্ত আদরের ছিলো। সদা হাস্যজ্বল ছেলেটি সামাজিক কাজকর্মে ছিলো স্মার্ট ও দক্ষ। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো সে। অন্যদেরকেও নিয়মিত নামাজের জন্য ডাকতো। তাঁর মেধা ও নম্রতা বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেও তাকে প্রিয় করে রেখেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সে ছিল প্রতিবাদী তরুণদের আইকন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত নৈতিক ছিল সে। মিথ্যা কথা, ছল-ছাতুরী বা অশ্লীলতা থেকে সে থাকতো যোজন-যোজন দূরে। যেভাবে আল্লাহর কাছে গেলেন ৫ আগস্ট ২০২৪, জুলাই থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৪ তারিখের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ছাত্র-জনতা সেনাবাহিনীর একেবারে সম্মুখে আন্দোলন করলেও সেনাবাহিনী তাদের উপর আক্রমণ করেনি। বরং ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করতে আসা পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীকে ফাঁকা গুলি করে ঠেকিয়ে দিয়েছে। চরম আত্মবিশ্বাস চলে আসে সারাদেশের মানুষের মধ্যে। সেনাবাহিনীর সমর্থন হারিয়ে সরকারের পতন হচ্ছে বলেই গুঞ্জন উঠতে থাকে। গণভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রথমে ৬ তারিখে গণভবন ঘেরাওয়ের কথা বলা হলেও আরও কৌশলগত কারণে ৫ তারিখ করতে পরামর্শ দেয় আন্দোলনে সমর্থনদানকারী বিভিন্ন পক্ষ। ঘোষণা আসে, "পরশু নয়, কালই।" বানিয়াচং থেকে গণভবন যাওয়ার কোনো উপায় ছিলো না। গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিল স্বৈরাচারী সরকার। তাই বানিয়াচং থানার সামনেই বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত আনাছ ও তার সহযোদ্ধারা। মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় আনাছ। স্বৈরাচারী সরকারের লালিত হিংস্র পুলিশ বাহিনীর রক্তপিপাসা তখনও মিটে নি। জিগাংসা নিয়ে থানা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে থানা থেকে বের হয়ে আসে তারা। তাদের সাথে যুক্ত হয় স্বৈরাচারের দোসরেরা যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামীগের বিভিন্ন পদের পাওয়ার দেখিয়ে মানুষকে শোষণ করতো। পুলিশ ও দোসর বাহিনী গুলাবারুদ নিয়ে হামলে পড়ে আন্দোলনকারীদের মিছিলে। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় বেশ কয়েকজন। বীরদর্পে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে আনাছরাও। হঠাৎ একটা গুলি এসে লাগে আনাসের পেটে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। আনাসের মেজো ভাই রাসেলসহ বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আনাছকে তৎক্ষনাৎ হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পেট থেকে গুলি বের করার জন্য অপারেশন করা হয়। গুলি লাগায় ও অপারেশনের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। ৮ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন হয়। দীর্ঘসময় ধরে চলে অপারেশন। অপারেশনের পর কিছুক্ষণের মধ্যেই এনেস্থিসিয়ার কার্যকারিতা শেষ হয়। তীব্র ব্যাথায় ছটফট করতে করতে শেষ রাতের দিকে অজ্ঞান হয়ে যায় আনাছ। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার শাহাদাৎ বরণ করে আনাছ। দাফন ৬ আগস্ট বাদ এশা রাজবাড়ী মাঠে শহীদ আনাছের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। পারিবারিক অবস্থা আনাস মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ভাইবোনেরা সবাই মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। বাবা বেঁচে থাকতে একটা অর্ধ-পাকা বাড়িও বানিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আনাছকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিদেশ পাঠাতে চেষ্টা করছিলেন ভাইয়েরা। আগস্ট মাসের শেষের দিকে ইতালি যাওয়ারও কথা ছিল তার। এজন্য ৫ লাখ টাকা ঋণ করতে হয়। সেই ঋণ এখনো অপরিশোধিত। সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা ঋণ পরিশোধের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: আনাছ মিয়া জন্ম : ২৫ আগস্ট ২০০৪, ঢাকা শহীদের পেশা : ছাত্র, নবম শ্রেণি পিতা : মো: আবুল হোসেন (মৃত) মাতা : খাইরুন্নেসা (৬০), গৃহিণী স্থায়ী ঠিকানা : হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার খন্দকার মহল্লা বর্তমান ঠিকানা : হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার খন্দকার মহল্লা পরিবারের অন্যান্য সদস্য : ৫ ভাই, ২ বোন : বড় বোন: মুনমুন আক্তার (৩৮), গৃহিণী : বড় ভাই: রাজিব মিয়া (৩৫), ব্যবসায়ী : ২য় ভাই: রাসেল মিয়া (২৮), ইলেক্ট্রিশিয়ান : ৩য় ভাই: তোফায়েল আহমেদ (২৬), ব্যবসায়ী : ৪র্থ ভাই: মিদুল মিয়া (২৩), ব্যবসায়ী : ২য় বোন: রুনি আক্তার (১৭), ছাত্রী, একাদশ শ্রেণি শহীদ হওয়ার সময়কাল ও স্থান : ৫ আগস্ট দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬ আগস্ট সকাল ৭ টায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে