জন্ম তারিখ: ৮ এপ্রিল, ১৯৯১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : ছাত্র ও ফ্রিল্যান্সার, শাহাদাতের স্থান:কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়
চির হাস্যোজ্জ্বল শহীদ মো: মামুন আহমেদ রাফসান সর্বশেষ ৯ম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০০০ সালের ১ জানুয়ারী হবিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো: ছালেক মিয়া ইন্তেকাল করেছেন এবং মাতা নিশামন বিবি একজন গৃহিণী। ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিজীবনে শহীদ মামুন অত্যন্ত নম্র-ভদ্র মানুষ ছিলেন। তিনি নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করতেন। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি একজন ভাল ছেলে হিসেবে পরিচত ছিলেন। মসজিদের নানান সৌন্দর্য কিভাবে বাড়ানো যায় এ নিয়ে নামাজের পরে ছাত্র বন্ধুদের সাথে, পাড়া-প্রতিবেশির সাথে আলোচনা করতেন। মেধাবী ছাত্র মামুন পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রি-ল্যান্সিং এর কাজ করতেন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ মামুনের পারিবারিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। মেধাবী ছাত্র মামুন পরিবারকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রি-ল্যান্সিং এর কাজ করতেন। তার বড় ভাই রুবেল মিয়া গাজিপুরে পরিবারসহ বাস করেন। মামুনের বড় বোন মাইনুর আক্তার রিফা বিবাহিতা এবং গৃহিণী। তার মেঝো ভাই মো: রানু মিয়ার গ্রামের বাড়িতে হাসের খামার রয়েছে। তাদের বাড়ি ঘর পাকা দালানের তৈরি। শহীদের সবচেয়ে ছোট ভাই মোঃ আমির হামজা গাজিপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার গাউসুল আজম মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগে অধ্যয়নরত। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে জনগণ নানান অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন ও জুলুমের নির্মম ভুক্তভোগী। এদেশের মুক্তিকামী জনতা সময়ের দাবিতে সাড়া দিয়ে এহেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারংবার রুখে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে হুংকার দিয়ে সংগ্রামী জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্রবৃন্দ। উপরুন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সাক্ষী, দেশের ক্রান্তিকালে বরাবরই ছাত্রদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতিন, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামীসরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয়। আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসীস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। আন্দোলনে যোগদান কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসীস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ৫ই আগস্ট সকালে মামুন অন্যান্য দিনের মতোই ফ্রি-ল্যান্সিং এর উপর একটি কোর্স করতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় যান। সেখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল দেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার তরুণ মামুন নিজেকে মেলে ধরেন এবং ধীরে ধীরে মিছিলের স্মমুখভাগে নিজের শক্ত অবস্থান নেন। মিছিলে যুক্ত হয়ে বজ্রকণ্ঠে স্লোগান দিয়ে মুখরিত করেন রাজপথ। এমতাবস্থায় ফ্যাসীস্ট সরকারের পালিত ঘাতক সন্ত্রাসী সশস্ত্র আওয়ামী ছাত্রলীগ নিরস্ত্র মিছিলকারীদের উপর চড়াও হয়। শাহাদাত বরণ ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার বিরোধী এক দফা এক আন্দোলনে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট সকালে মেধাবী ছাত্র মামুন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যুক্ত হন। ফ্যাসীস্ট রাষ্ট্রযন্ত্র অজস্র নিরীহ লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ঘৃণ্য নীল নকশা রচনা করেছিল। সে লক্ষ্যে আওয়ামী ঘাতক সশস্ত্র ছাত্রলীগ নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর লেলিয়ে দেয়। মিছিলের এক পর্যায় কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট এলাকায় সাধারণ ছাত্র ও ঘাতক ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায় ক্ষুধার্ত হায়েনার মত তারা সংগ্রামী ছাত্র জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রতিবাদী তরুণ মামুনের পায়ে কুখ্যাত ছাত্রলীগের এক সন্ত্রাসী চাপাতি দিয়ে গুরুতর জখম করলে; মুহুর্তেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখনো ক্ষান্ত হয়নি নর পিশাচ ঘাতক; ছাত্রলীগের অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তার বুকে,মাথায় ও পিঠে এলোপাতাড়ি কোপ ও লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে। চির হাস্যোজ্জ্বল মামুনের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকে; রাজপথ পরিণত হয় রক্তগঙ্গায়। গুরুততর অবস্থায় ছাত্র-জনতা মামুনকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে শহীদের নামাজে জানাযা শেষে নিজ এলাকায় দাফন করা হয়। শহীদ মামুন পরিবারের সকলের নিকট ছিলো অতি আদরের সন্তান। তাকে হারিয়ে তার পরিবারে নেমে এসেছে এক শোকের ছায়া। নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি শহীদ মামুনের বোন জামাই (দুলাভাই) মো: সোহেল রানা বলেন, “মামুন অত্যন্ত ভাল ছেলে ছিল। ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করতো। গ্রামের মানুষের কাছে একজন ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। এক নজরে শহীদের ব্যাক্তিগত তথ্য নাম : মো: মামুন আহমেদ রাফসান পেশা : ছাত্র ও ফ্রিল্যান্সার জন্ম তারিখ : ৮ এপ্রিল ১৯৯১ আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, সকাল ১০.০০টা শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ দাফনের স্থান : হবিগঞ্জ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: তেঘরিয়া, ইউনিয়ন: কালাউক থানা : লাখাই, জেলা: হবিগঞ্জ পিতা : মো: ছালেক মিয়া (মৃত) মাতা : নিশামন বিবি প্রস্তাবনা ১. শহীদ মামুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করা ২. পরিবারকে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান