জন্ম তারিখ: ১৭ আগস্ট, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : চাকুরীজীবী, শাহাদাতের স্থান: আদাবর, ঢাকা
১৭ আগস্ট ২০০৯ সালে হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক গ্রামের সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ নাহিদুল ইসলাম। পিতা মাতাহীন নাহিদ ছিল সবার আদরের মধ্যমণি। এতিম নাহিদের দেখাশোনা করেন তার দাদি। তার বাবা ইসলাম ধর্মের পান্ডিত্য অর্জন করায় নাহিদেরও বাবার মতো হওয়ার প্রচন্ড আগ্রহ ছিল এবং তার হাতে খড়ি হয় এলাকার কওমি মাদ্রাসায়। সুঠাম দেহের অধিকারী নাহিদ তার মাদ্রাসাতেও ছিল সবার আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। তার মেধা ও নৈতিক চরিত্রের মাধ্যমে সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন খুব সহজেই। তার তীব্র ইচ্ছে ছিল বাবার মত আলিমে দ্বীন হয়ে ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য পৌঁছে দিবে বাংলাদেশের পথে প্রান্তরে কিন্তু তার এ প্রবল আকাঙ্ক্ষা অধরাই থেকে যায়। আওয়ামী পুলিশ লীগের বুলেটের আঘাতে স্বপ্নটি অকালেই ঝড়ে যায়। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ৫ আগস্ট। বিকাল ৫ ঘটিকা। বাংলাদেশের উপর জগদ্দল পাথর হিসেবে বসে থাকা স্বৈরাচারী হাসিনার পলায়নে ছাত্র-জনতা বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা। স্বাধীনতার নতুন সূর্য দেখতে পুরো ঢাকা শহরে হাজারো মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। কারো হাতে ব্যানার, কারো হাতে ফেস্টুন, নতুন জামা পড়ে এ যেন এক ঈদ আনন্দ। শহীদ নাহিদুল ইসলামও এই আনন্দ উপভোগ করার জন্য ঢাকার আদাবরের রাস্তায় নেমে যান। কিন্তু তার এ বিজয় মিছিলটি জীবনের শেষ মিছিলে পরিণত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই এ উল্লাস বিষাদে পরিণত হয়। আদাবর থানার অতি উৎসাহী ওসির নেতৃত্বে বিজয়ী জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। একটি প্রতিবিপ্লব ঘটানোর জন্য। সুসংগঠিত মিছিলটি পরিণত হয় একটি বেদনার মিছিলে। সবার সামনে থাকা নাহিদের বুকে বিদ্ধ চারটি গুলি তাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। যেই হৃদয়ে কোরআনকে জায়গা দেয়া, সেখানে বুলেটের আঘাত যেনো প্রকারান্তরে কোরআনকেই আঘাত করা। আহত নাহিদ চিৎকার করার সুযোগ পায়। তিনি শুধু একটি কথা বারবার বলছিলেন, আমাদের বাঁচান, আমাদের বাঁচান। অসংখ্য মানুষের আর্তনাত পিশাচ পুলিশলীগের কর্ণকুহরে পৌঁছে নাই সেদিন। তারা আরও পাশবিক হয়ে উঠে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাকে আতঙ্কিত করার জন্য পুলিশ নিজেরাই নিজেদের গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। চারিদিকে তীব্র ধোঁয়ায় এক অমানিশার মতো তৈরি হয়। এর মধ্যে নরপিশাচ এক পুলিশ নাহিদের ছোট্ট দেহকে আগুনের কুন্ডলীর মধ্যে নিক্ষেপ করে। আগুনের তীব্রতাকে বাড়ানোর জন্য নাহিদকে মনে হয়েছিলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেছিলো। সাথে সাথেই নাহিদের কোমল দেহের চামড়া খসতে থাকে। ছটফট করে গগন বিদারী চিৎকারে আশেপাশে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। কিছু মানুষ নাহিদকে পুলিশের হাত থেকে উদ্ধার করতে এলে, গুলির সামনে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। ধীরে ধীরে নাহিদের হাড্ডি থেকে গোশতো খসে পড়তে থাকে। পরে জনতার তীব্র ক্ষোভের মুখে পুড়ে পুলিশ পিছু হটলে নাহিদকে আগুন থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে হাসপাতাল কতৃপক্ষ মৃত ঘোষণা করে। শহীদ নাহিদের ছিলো শাহাদাতের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। মহান আল্লাহ তা’আলা হয়তো তার কথা কবুল করে নিয়েছেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি শহীদ নাহিদুল ইসলাম সম্পর্কে তার বড় ভাই মাওলানা নাঈমুল ইসলাম বলেন নাহিদুল ইসলাম অত্যন্ত মেধাবী নম্র ভদ্র ছেলে ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তিনি মাসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করতেন। সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত সবাইকে মুগ্ধ করতো এবং সুযোগ হলেই মসজিদে নামাজ পড়াতো। গ্রামবাসীরা তাকে বাবার প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখতো। বাবা মরহুম আব্দুল আজিজ সারা দেশব্যপী মাহফিল করতেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পুরো নাম : নাহিদুল ইসলাম পেশা : ছাত্র ক্বওমী মাদরাসায় মাদানী নেসাবে পড়তেন জন্ম তারিখ : ১৭/০৮/২০০৭ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মুড়িয়াউক, ইউনিয়ন : ৩নং মুড়িয়াউক, থানা: লাখাই, জেলা: হবিগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : ৬ডি/৭, আজিজ মহল্লা, থানা পল্লবী, জেলা: ঢাকা পিতার নাম : আব্দুল আজিজ মায়ের নাম : নাসিমা আজিজ পারিবারিক সদস্য : ৩ জন ভাই বোনের সংখ্যা : ১ বোন ১ ভাই ১. বোন : সাদিয়া সুলতানা, বয়স: ৩২, পেশা: প্রবাসী, সাউথ আফ্রিকা ২. ভাই : মাওলানা নাইমুল ইসলাম, বয়স ২৯ পেশা : চাকুরীজীবী ঘটনার স্থান : আদাবর, ঢাকা আঘাতকারী : ঘাতক পুলিশ বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার সময় কাল : ০৫/০৮/২০২৪ বিকাল ৫ টা, ঢাকা শহীদের কবরে অবস্থান : গ্রামের মসজিদের পাশে কবরস্থ করা হয়েছে প্রস্তাবনা ১. রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা ২. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান