Image of রিপন চন্দ্র শীল

নাম: রিপন চন্দ্র শীল

জন্ম তারিখ: ১৪ নভেম্বর, ১৯৯৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: সিলেট

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : নরসুন্দর শাহাদাতের স্থান: হবিগঞ্জ টাউন হলের সামনে

শহীদের জীবনী

১৯৯৮ সালের ১৪ নভেম্বর পিতা রতন চন্দ্র শীল ও মাতা রুবিনা রানী শীলের কোলজুড়ে আসেন রিপন চন্দ্র শীল। ছোটবেলা থেকেই এলাকায় অত্যন্ত নম্র-ভদ্র ও স্মার্ট ছেলে হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। পরিবারের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে বাবার সাথে তিনিও পরিবারের হাল ধরেন। হবিগঞ্জ শহরে একটি সেলুনে চুল কাটার কাজ করতেন। ঘটনার বর্ণনা ২৫ বছর বয়সী রিপন তার বুঝ জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আওয়ামীলীগ ও তার ফ্যাসিবাদী শাসন দেখেই বড় হয়েছেন। ভিন্নমতের প্রতি দমন-পীড়ন, ট্যাগিং এর মাধ্যমে দিনদুপুরে পিটিয়ে মানুষ খুন, বিরোধী দল ও মতের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরন, ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহার, বাহ্যিক চাকচিক্য ও অভ্যন্তরীণভাবে ফোকলা অর্থনৈতিক অবস্থা, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, সীমান্তে মানুষ হত্যা সর্বোপরি দেশের সামগ্রিক দুরবস্থা একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ হিসেবে রিপনকে ভাবিয়ে তুলতো। তিনি অনন্তপুর, ৯ নং ওয়ার্ড, হবিগঞ্জ পৌরসভার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন কর্মী ছিলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী নায্য আন্দোলন যখন সরকারের ক্রমাগত অবহেলা ও দমননীতির কারনে বৈষম্যবিরোধী গনআন্দোলনে রূপ নেয় তখন রিপনও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আন্দোলনে যোগদান করেন। সুশৃঙ্খল আন্দোলনকারীদের উপর লাঠিচার্জ, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, ছররা গুলির ব্যবহার সর্বোপরি শান্তিপূর্ণ গনআন্দোলনকে ব্যপকভাবে উসকে দেয়। সরকারিভাবে ইন্টারনেট শাটডাউন, দেশব্যাপী কারফিউ জারি, রাতের অন্ধকারে এলাকাভিত্তিক ব্ল্যাকআউট করে মানুষের বাসায় বাসায় তল্লাশি ও গন গ্রেপ্তার জনগণের সহ্যের সীমাকে অতিক্রম করে। ফলশ্রুতিতে বিগত ১৫ বছরের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ সাধারণ জনতা ফ্যাসিস্ট সরকারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে নেমে পড়ে রাজপথে। যোগ দেয় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে। ছাত্র আন্দোলন রূপ নেয় গনআন্দোলনে। কিন্তু আন্দোলনে সারা দেশবাসীর প্রবল জনসম্পৃপ্ততাও সরকারের বোধদয় ঘটাতে পারেনি। ক্ষমতার লোভ ও লুটপাটের অন্ধ সরকার আন্দোলনকে দমাতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে। হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশ চুরি, হত্যা করে লাশ জ্বালিয়ে দেওয়া, গণকবর, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নিজ দেশের জনগণের উপরই গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ সহ হেন কোন অপরাধ নেই যা খুনি হাসিনা সরকার আর দোসর আওয়ামী বাহিনী করেনি। কিন্তু এক পর্যায়ে যখন বুঝতে পারে তাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে এই বাংলার মানুষ তাদের আর কোনভাবেই মেনে নিবে না, তখন তারা মরণ কামড় দিতে প্রস্তুত হয়। নির্বিচারে হত্যা করতে শুরু করে নিজের দেশের মানুষকেই। কিন্তু তবুও মানুষকে তারা দমিয়ে রাখতে পারেনি। ৪ আগস্ট ২০১৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল চলাকালীন সময়ে সেই মিছিলে যোগদান করেন রিপন চন্দ্রশীল। সেদিনও দেশব্যাপী কারফিউ বলবৎ ছিল। ছাত্রদের মিছিলটি টাউনহলের সামনে গেলে ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশ আওয়ামী লীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে রিপন চন্দ্র শীলকে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সদস্যরা ধরে নিয়ে সরাসরি তার বুকে গুলি করে। সন্ত্রাসীদের বুলেট ডান বুকের পাঁজর ভেদ করে সরাসরি ফুসফুসে বিদ্ধ হয়। মাটিতে পড়ে কাঁতরাতে থাকেন রিপন। গল গল করে বেরিয়ে আসে বুকের তাজা রক্ত। শুকনো মাটি সিক্ত হয় বীরের লাল খুনে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়েন রিপন চন্দ্র শীল। নিভে যায় জীবন প্রদীপ। পাড়ি জমান পরপারে, এ পারে রেখে যান পিতা-মাতা, স্ত্রী পরিজনসহ মাত্র চার মাস বয়েসী একমাত্র ছেলে আবির বিশ্বাস শীলকে। শহীদ সম্পর্কে বোনের অনুভূতি রিপন চন্দ্র শিলের বড় বোন রুবিনা রানি শীল বলেন “রিপন অত্যন্ত ভাল ছেলে ছিল। নম্র-ভদ্র, স্মার্ট ছেলে ছিলো। বাসা থেকে দোকানে যেতো। দোকান শেষে আবার বাসায় চলে আসতো। কোথাও কোন বাজে আড্ডা দিতো না। রিপন চন্দ্র শীল বিড়ি সিগারেট বা ধূমপান করতো না। আত্বীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে ভাল ব্যবহার করতো। সে সহজ সরল মনের একজন মানুষ ছিল। সে নিজের যা উপার্জন করতো তা দিয়েই নিজের সংসার চালাতো এবং বাবা-মাকেও খরচ দিতো”। তার ছেলেবেলার বন্ধু আশরাফুল নিশাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে লিখেন "ওপারে ভালো থাকিস"। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা রিপন চন্দ্র শিলের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। সে অন্যের সেলুনে চুল কাটার কাজ করে যা উপার্জন করেন তা দিয়ে অতি কষ্টে তাদের সংসার পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি তার স্ত্রী, পুত্র সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে হবিগঞ্জ শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। মৃত্যুকালে তিনি চার মাসের একটি পুত্র সন্তান রেখে গেছেন। তিনি স্ত্রী সন্তানের জন্য কোন কিছুই রেখে যেতে পারেননি। তার বাবার যে বস্তুভিটা ছিলো তা বিক্রি করে ৫ বছর আগে বড় বোনকে বিয়ে দিয়েছিলেন। রিপন চন্দ্র শীল পরিবারের সকলের নিকট ছিলো অতি আদরের সন্তান। তাকে হারিয়ে তার পরিবারে নেমে এসেছে এক শোকের ছায়া। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : রিপন চন্দ্র শীল জন্ম তারিখ : ১৪-১১-১৯৯৮ পিতা : রতন চন্দ্র শীল মাতা : রুবিনা রানী শীল স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: অনন্তপুর, ইউনিয়ন: ৯ নং মাছুলিয়া , থানা: হবিগঞ্জ সদর , জেলা: হবিগঞ্জ বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত সন্তান : আবির বিশ্বাস শীল (বয়স: ৪ মাস) পেশা : নরসুন্দর ঘটনার স্থান : হবিগঞ্জ টাউন হলের সামনে আহত হওয়ার সময়কাল : ৪-০৮-২০২৪ বেলা ৩টা শাহাদাতের সময়কাল : ৪-০৮-২০২৪ বেলা ৩টা আঘাতের ধরন : বুকের ডানপাশে গুলি আক্রমণকারী : আওয়ামী লীগ প্রস্তাবনা ১. তার চার মাস বয়সী এতিম ছেলের দায়িত্ব নিতে পারলে ভালো হয় ২. ছোট ব্যবসার পুঁজির ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of রিপন চন্দ্র শীল
Image of রিপন চন্দ্র শীল
Image of রিপন চন্দ্র শীল
Image of রিপন চন্দ্র শীল

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সাদিকুর রহমান

মো: হাসাইন মিয়া

মো: সোহেল আখঞ্জি

গৌছ উদ্দিন

মো: নাজমুল ইসলাম

মো:  কামরুল ইসলাম পাভেল

মো: মামুন আহমেদ রাফসান

মো: আনাছ মিয়া

শেখ নয়ন হোসেন

তাজউদ্দিন

কারিমুল ইসলাম

মিনহাজ আহমদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo