জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : মোটর মেকানিক, শাহাদাতের স্থান : সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ
শহীদ মিনহাজ আহমদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০২ সালে। তার জন্মস্থান সিলেট জেলার দত্তরাইল গ্রামে। তার পিতা আলউদ্দিন ও মাতা সিতাই বেগম। তার পেশা ছিল মোটর মেকানিক। শহীদ মিনহাজ আহমদের ৪ ভাইয়ের মাঝে বড় ২ ভাই মোটর মেকানিকের ব্যবসা করেন। ছোট ভাই সিলেট মদনমোহন কলেজে অনার্সে পড়াশোনা করেন। তার বাকি ভাই বোন সাঈদ আলম, নাঈম আহমেদ, ইনা বেগম ও রিমা বেগম ঢাকা দক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ঘটনার বিবরণ ৪ আগষ্ট ২০২৪, রবিবার। স্বৈরাচারের গতি যখন নড়বড়ে শেষ মুহূর্তে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একের পর এক চরম সিদ্ধান্ত নেয় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। ইতিমধ্যে দেশের এক প্রান্তে সিলেটে বেলা তিনটার দিকে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনী এলাকায় বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্বৈরাচারের দোসর টোকাই বাহিনী গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে আসে। পরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকেল বেলা গোলাপগঞ্জ উপজেলা শহরে সানরাইজ নামক স্কুলের বিপরীত পাশে কদম গাছ তলায় অসংখ্য ছাত্র-জনতা সমবেত হয়। বিকেলে ওয়ার্কশপ থেকে একটি হোটেলে ভাত খেতে যাচ্ছিলেন মিনহাজ। তার মোটর মেকানিকের কারখানার সামনে দিয়ে মিছিলটি অতিক্রম করার সময় মিছিলে যোগদান করে তিনি। এক পর্যায়ে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে খুনি হাসিনার ঘাতক পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে এবং একটি গুলি তার বুকে লাগলে তাকে সিলেটের নর্থ ইস্ট মেডিকেলে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করে তাকে সিলেট উসমানী মেডিকেলে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেয়। মিনহাজের অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা মিনহাজ অবশেষে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। আগস্ট মাসের ৪ তারিখে মারা গেলেও মিনহাজের লাশ দিতে গড়িমসি শুরু করে হাসপাতাল ও পেটোয়া পুলিশ প্রশাসন। খুনি হাসিনার গদি টিকিয়ে রাখতে লাশের তথ্য লোপাট করা শুরু করে তার তাবেদাররা। মিনহাজ আহমদের লাশ পেতে তার বড় ভাই সাঈদ আহমদকে এই মর্মে লিখিত দিতে হয় যে, 'আমার ছোট ভাই মোঃ মিনহাজ আহমদ (২৩) এর মৃতদেহ বিনা ময়না তদন্তে নেওয়ার আবেদন করিতেছি যে, সিলেট গোলাপগঞ্জ থানাধীন কদমতলী বাজারস্থ আমাদের হাফিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ০৪/০৮/২০২৪ তারিখ মতে বিকাল অনুমান ৫.০০ ঘটিকার সময় আমার ভাই আমাদের উক্ত ওয়ার্কশপের সামনে দাড়ানো থাকাবস্থায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজন লোক আমার ভাইকে মারপিট করে আহত করে। তখন আশপাশের লোকজনের সহায়তায় আমরা তাহাকে গত ০৪/০৮/২০২৪ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৬.৩০ ঘটিকার সময় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়া গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আমার ভাইকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়া মৃত ঘোষণা করেন। আমার ভাইয়ের মৃতদেহ বর্তমানে উক্ত হাসপাতালের হিমাগারে রহিয়াছে। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের পরিবারের কাহারো কোন প্রকার অভিযোগ নাই এবং উক্ত বিষয়ে ভবিষ্যতে কোন অভিযোগ বা থানা মামলা মোকদ্দমা করিব না। এমতাবস্থায় আমার ভাইয়ের মৃতদেহ বিনা ময়না তদন্তে নিয়া দাফন করিতে ইচ্ছুক।' উপজেলা চেয়ারম্যান এর চাপে পড়ে তারা মামলা না করার শর্তে লিখিত দিয়ে অবশেষে ৬ তারিখে লাশ নিয়ে আসেন। তার লাশের সুরতহাল ও ময়না তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে তাকে দাফন করা হয়। সন্তানহারা পরিবারের জন্য যে কতটা কষ্ট ছিল এই বিষয়টি তা শুধুমাত্র তার পরিবারই জানে। সন্তান হত্যায় ব্যবহৃত বুলেটের দিকে তাকিয়ে বাবার করুন চেহারা। নির্মমতার শিকার হয়ে তার মৃত্যুতে সারা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। মিনহাজের চাচী বললেন, মিনহাজ অবিবাহিত ছিলেন। সাদাসিধে একজন ছেলে, তার রাজনৈতিক কোন পরিচয় নেই, কোন দলের রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না। নিজের জীবন দানের মাধ্যমে ’২৪ এর স্বাধীনতা দিয়ে গেলেন শহীদ মিনহাজ। দেশের মানুষ যেন তার এই মহান আত্মত্যাগের কথা জানতে পারে সেজন্য প্রয়োজন স্বীকৃতি। মিনহাজ তার পরিবারের অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। মিনহাজের বিশাল পরিবারের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মিনহাজ আহমদ জন্ম তারিখ : ০১/০১/২০০২ পিতার নাম : আলাউদ্দিন, বয়স: ৬০, পেশা: বাবুর্চি মায়ের নাম : সিতাই বেগম, বয়স: ৫৫, পেশা: গৃহিণী পারিবারিক সদস্য : ৭ জন স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: দত্তরাইল, ইউনিয়ন: ঢাকা দক্ষিন, থানা: গোলাপগঞ্জ, জেলা: সিলেট ঘটনার স্থান : গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সানরাইজের বিপরীত পাশে, কদম গাছের তলে আঘাতকারী : ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রসীদের আক্রমণে, ঘাতক পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট বিকাল ৫টা নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টার সময়, সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ২. তার ওয়ার্কশপের মূলধন বৃদ্ধি ও সঠিকভাবে পরিচালনা করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা