জন্ম তারিখ: ৬ এপ্রিল, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান: সিলেট শহরে আলী আমজাদের ঘরের দোকানের পাশে
মো: কামরুল ইসলাম পাভেল ৬ এপ্রিল ২০০১ সালে সিলেট জেলার উত্তর কানিশাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো: রফিকুল উদ্দিন এবং মাতা দিলারা বেগম দম্পতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬। এই পরিবারের চার ছেলে এক মেয়ে। পিতা দোকানদার ও মাতা গৃহিনী। শহীদের পিতা জনাব রফিক উদ্দিন অন্যের দোকানে মাসিক বেতনে কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়ে ছয় জনের সংসার চালাতেন। পাভেল ২৮ পারা কোরআনের হাফেজ ছিলেন।সিলেট শহরে আসেন পড়াশোনার আশায়। পড়াশুনার পাশাপাশি সিলেট শহরে পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে অন্যের ভুসিমাল এর দোকানে খন্ডকালীন কাজ করতেন। পরিবারের ছোট ছেলে কামরুল ইসলাম পাভেল। তাদের কোন আবাদি জমি নেই এবং পাভেলের বড় ভাই গুলো বেকার থাকায় সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে রফিকুলের। পাভেলের বড় ভাই পিকলু আহমেদ বয়স ২৮, ব্লু বার্ড উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। মেজ ভাই টিপু সুলতান ২৬, ঢাকা দক্ষিণ ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। সেজ ভাই সায়েল আহমেদ (১৯), জামিয়া ইসলামিয়া দক্ষিণ দত্তরাইল মাদ্রাসার চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। বোন মাসুম আক্তার পাপিয়া (২৪), ঢাকা দক্ষিণ ডিগ্রী কলেজে বিএ পড়াশোনা করেছেন। শহীদ হয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া ছাত্ররাই অজেয়- এটা শুধু বাংলাদেশী নয়। এ সফলতা যতোটা না সরকার পরিবর্তন করে দেখিয়েছে তার চেয়ে বেশি পুরো রাষ্ট্র সমাজ ব্যবস্থার বৈকল্যকে তুলে ধরেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু দেশের ছাত্র বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তন আসে। যার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ইতিহাস বদলে দেয়া ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্ব সংঘটিত ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এক অভূতপূর্ব মিল রয়েছে। দীর্ঘ সময়ের শাসন ক্ষমতা পরিবর্তনের মাধ্যমে ইতিহাসে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন ১ জুলাই ২০২৪ থেকে সূচনা করে। সরকারি চাকরিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ অগ্রাধিকার সহ কথিত দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে আয় ব্যয়ের বিপুল ব্যবধান তৈরি করা হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করা নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও একপর্যায়ে নির্মমভাবে আন্দোলন দমনের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন অভ্যুত্থানে তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পরিণত হয়। জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে; লাগাতার কর্মসূচি চলে। এ আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগায়। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল ও বিভাগ ভিত্তিক নেটওয়ার্ক তৈরি করে ছাত্ররা সুসংগঠিত হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেরাই কোটা বিরোধী পোস্টার,প্লেকার্ড ও ব্যানার বানিয়ে আন্দোলনে শরিক হয়। আন্দোলনের প্রয়োজনে নিজেরাই ক্ষুদ্র তহবিল সৃষ্টি করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে এ আন্দোলনে একক কাউকে মুখপাত্র নির্বাচন করা হয়নি। সারাদেশ থেকে আন্দোলনকে সুসংগঠিত করতে ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন সমন্বয় করেছেন। এদের হাত ধরেই বাংলার নতুন সূর্য উদয় হয়েছে। এই আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট রিজিম পরিবর্তন করে সফল হয় ছাত্র আন্দোলন। তবে এ আন্দোলনের প্রভাব অনেক গভীর ও ব্যাপক। আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য বিভিন্ন ধাপে ভাগ করা হয়। কখনো বাংলা ব্লকেড শুরু হয় ৭ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ,কমপ্লিট শাটডাউন ১৮ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত, গণ পদযাত্রা ১৪ জুলাই পালন করা হয়। ফ্যাসিবাদ ,মার্চ ফর জাস্টিস ৩১ জুলাই পালিত হয়। রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস পালন করে ১ আগস্ট, রেমিটেন্স উইক, ৩ তারিখ ঘোষণা করা হয় মার্চ ফর ঢাকা। মার্চ ফর ঢাকা কে কেন্দ্র করে যখন এক দফার দাবিতে সারা দেশ অগ্নিগর্ভে নিমজ্জিত। গণমানুষ সুনামির মত গণজোয়ারে রূপান্তরিত হয়ে যখন এই স্বৈরাচার সরকারের বিরোধী হুংকারে মেতে উঠেছে তখন কামরুল ইসলাম পাভেল ঘরে বসে থাকতে পারে কি? পাভেল ৫ আগস্ট গণমানুষের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে শুরু করে মিছিল। মিছিলটি এসপির বাসার সামনে আসলে পুলিশ মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ করে। পাভেল মিছিলের সামনের সারিতেই ছিল। একটি গুলি পাভেলের বুকে এসে লাগে। লাগার সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পাবেল। তাৎক্ষণিক তার মৃত্যু হয়। তার লাশ ময়নাতদন্ত করা হয় নাই। শহীদের সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শহীদ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম পায়েল (২৩) সম্পর্কে তার বড় ভাই পিপলু আহমেদ বলেন- সে অনেক সাহসী ও মেধাবী ছিল। নিয়মিত নামাজ আদায় করত এবং সবাইকে নামাজের দিকে আহ্বান করত। ২৮ পারা কুরআনের হাফেজ ছিল। তার স্বপ্ন ছিল মস্ত বড় আলেম হবার। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: কামরুল ইসলাম পাভেল জন্ম তারিখ : ০৬-০৪-২০০১ পেশা : ছাত্র ও খন্ডকালীন কাজ পিতার নাম : মো: রফিক উদ্দিন মায়ের নাম : দিলারা বেগম, পেশা: গৃহিণী পারিবারিক সদস্য : ৬ জন পরিবারের মাসিক আয় : ২০০০০ টাকা স্থায়ী ঠিকানা : সিলেট জেলার গোপালগঞ্জ থানার উত্তর কানিশাইল গ্রাম ঘটনার স্থান : সিলেট শহরে আলী আমজাদের ঘরের দোকানের পাশে আঘাতকারী : ফ্যাসিস্ট হাসিনার খুনি সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর গুলিতে আহত হওয়ার সময় কাল : বিজয় মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলিতে আনুমানিক বিকাল চারটা থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে আহত হন নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ৫ আগস্ট ২৪ বিকাল ৪:০০ থেকে ৪:৩০টা শহীদের কবরে বর্তমান অবস্থান : পারিবারিক কবরস্থান সিলেট প্রস্তাবনা ১. রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা ২. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান