জন্ম তারিখ: ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : দর্জি, শাহাদাতের স্থান: সিলেটের ব্রিটিশ আইডিয়াল স্কুলের সামনে
শহীদ জয় আহমেদ হাসান অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। পাশাপাশি অন্যকেও নামাজের দাওয়াত দিতেন। মাঝে মধ্যেই তিনি দ্বীনের খেদমতে তাবলীগ জামায়াতে চলে যেতেন। তিনি ছিলেন একজন আপাদমস্তক ভালো মানুষ। সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। তার অমায়িক ব্যবহারে সকলেই মুগ্ধ হতেন। না খেয়ে থাকলেও কখনো কারও কাছে হাত পাতেন নি। শহীদ জয় আহমেদ হাসান ২০০৬ সালে সিলেটের দক্ষিণ রায়গড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জনাব মো: সুরাই মিয়া এবং মাতা মোসা: সালমা বেগম। শহীদ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। ছোটকালেই তিনি তার বাবাকে হারান। অনেকগুলো ভাইবোন নিয়ে তাঁরা ছোট্ট একটি দালান ঘরে বসবাস করতেন। দরিদ্রতার কারনে পড়াশোনা ছেড়ে টেইলার্সে দর্জির কাজ শুরু করেন শহীদ জয় আহমেদ। অল্প বয়সেই পরিবারের হাল ধরেন। জুলাইয়ের আন্দোলনে স্বৈরশাসন এর কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শহীদ হন জয় আহমেদ হাসান। ৩৫ জুলাই (৪ আগস্ট) স্বৈরাচারের বুলেটের আঘাতে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। জয়ের মৃত্যুতে তার পরিবারে বয়ে যায় শোকের ঢেউ। মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত হয়ে থাকবে এই মহানায়কের নাম। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা দেশের জন্য মহান ব্রত নিয়ে আত্মত্যাগের ইতিহাস অল্প কয়েকজনই রচনা করেন। যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন, তারা শুধু নিজেদের জন্য নয় পুরো জাতির জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকেন। তাদের মহান আত্মত্যাগ তখন হয়ে দাঁড়ায় দেশেরে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সমৃদ্ধির রক্ষাকবচ। এমন ব্যক্তিরা শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিক এবং নৈতিক শক্তি দিয়ে আগলে রাখেন জাতিকে। তাদের সাহসিকতা এবং নিষ্ঠা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হয়ে ওঠে আলোকবর্তিকা। ইতিহাসের পাতায় দেশের জন্য আত্মত্যাগ করা বীরদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে এবং তারা জাতির হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকেন। তেমনি এক সাহসী যুবক শহীদ জয় আহমেদ হাসান। রক্তাক্ত জুলাই যেন শেষই হচ্ছিল না। ৩৫ জুলাই (৪ আগস্ট) মসজিদে মাইকিং করে ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলনে শামিল হন শহীদ জয় আহমেদ হাসান। সিলেটের ব্রিটিশ আইডিয়াল স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে, জাস্টিস জাস্টিস, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন, আপোষ না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রাম প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে ঘাতক পুলিশ। সেখানে পুলিশের সাথে যুক্ত হয় বিজিবি। ছাত্র-জনতা ইট পাটকেল ছুঁড়ে পুলিশকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনার পেটোয়া পুলিশ বাহিনী অতর্কিত গুলি চালালে সেখানে ছাত্র-জনতা টিকে থাকতে পারে না। কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। একের পর এক সাধারণ শিক্ষার্থী গুলি বিদ্ধ হয়ে রাস্তায় মুখ থোবড়ে পড়ে। একটি গুলি এসে শহীদ জয় আহমেদ হাসানের বুকে বিদ্ধ হয়। ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাতে কাতরাতে রাত ৮ টার দিকে তার দেহ থেকে নিষ্পাপ আত্মাটি উড়ে যায়। চলে যান শহীদ জয়, রেখে যান অমুছনীয় প্রেরাণাদায়ক স্মৃতি। শহীদ সম্পর্কে নিকটত্মায়ীর বক্তব্য ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার বড় ভাই মনসুর আলম বলেন, “৪ আগস্ট সকালে মসজিদে মাইক দিয়ে ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে শহীদ জয় আহমেদ হাসান মিছিলে শরীক হন। মা ডেকে নিয়ে আসবে বলে সে মোবইল বন্ধ করে রাখে। হঠাৎ পুলিশের একটি গুলি এসে তার বুকে লাগে। উপস্থিত ছাত্ররা ধরাধরি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে তিনি জীবনের মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান। রেখে যান বহু স্মৃতি।” পারিবারিক অবস্থা তার বাবা নেই। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। অনেকগুলো ভাইবোন নিয়ে তাদের সংসার। দরিদ্র পরিবারের হাল ধরতে টেইলার্সের কাজ করতেন। ছোট্ট দালান ঘরে পরিবারের সবাই মিলে চাপাচাপি করে বসবাস করেন। তাদের কোন আবাদি জমি নেই। অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। দাফন শহীদ জয় আহমেদ শাহাদাত বরণের পর তার লাশ নিয়ে তৈরি হয় নানান জটিলতা। তার লাশ কোন প্রকার ময়না তদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত দাফন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। পরে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই তাকে নিজ গ্রামের কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : শহীদ জয় আহমেদ হাসান পেশা : টেইলার্সের কাজ জন্ম তারিখ : ০৮/০২/২০০৬ জন্ম স্থান : দক্ষিণ রায়গর, সিলেট পিতা : জনাব মো: সুরাই মিয়া মাতা : সালমা বেগম আহত হওয়ার তারিখ : ৪ আগষ্ট ২০২৪ সকাল ১:০০-১:৩০ স্থান : সিলেটের ব্রিটিশ আইডিয়াল স্কুলের সামনে শাহাদাতের তারিখ : ৪ আগষ্ট ২০২৪ রাত ৮টা প্রস্তাবনা ১. রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা ২. বাসস্থান করে দেয়া ৩. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ৪. পরিবারের সকল সদস্যের ভবিষ্যত নিরাপদ করার ব্যবস্থা করা