জন্ম তারিখ: ৮ এপ্রিল, ১৯৯১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান : সিলেট
শহীদ সানি আহমেদ ২০০০ সালে সিলেটের শিলঘাটে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জনাব মো: কয়ছর আহমদ একজন দিনমজুর। তার মা মোসা: রুবিয়া বেগম গৃহিণী। পিতা-মাতার এক মাত্র ছেলে সন্তান শহীদ সানি আহমেদ। দারিদ্রতার কারণে অল্প বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে বাবার সাথে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। তাদের নিজস্ব কোন বাড়ি নেই। তাই তাদের ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়। বাবা-ছেলে মিলে যা আয় করত তার অর্ধেক বাড়ি ভাড়া দিতেই চলে যেত। বাকি টাকা দিয়ে কোনমতে ডাল-ভাত খেয়ে পরিবারের সাথে দিন পার করতেন শহীদ সানি আহমেদ। তাঁরা ৬ ভাইবোন। ৪ বোনের মধ্যে মাত্র ১ বোনের বিয়ে হয়েছে। তাঁর বাকি ভাইবোনরা সবাই পড়াশোনা করে। ছোট ভাই সামি আহমদকে কোরআনের হাফেজ বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। এজন্য সামিকে স্থানীয় একটি হাফেজী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। শহীদ সানির পিতা জনাব কয়সার আহমদ বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন। যার ফলে পুরো পরিবার শহীদ সানির উপরেই নির্ভরশীল ছিল। নিজেদের কোন জমিজমা না থাকায় অন্যের জমিতে কাজ করেই তাদের সংসার চলত। এভাবেই তারা মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। শহীদ সানি আহমেদ ছিলেন অত্যন্ত নম্র-ভদ্র ও মিশুক একজন ছেলে। এলাকার বন্ধুদের সাথে সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে অল্প বয়সেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজে নেমে পড়তে হয়। দারিদ্রতার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে কিশোর সানির স্বপ্নগুলো মলিন হয়ে যায়। স্বপ্ন গুলো যখন অন্ধকার হতাশার সাগরে ডুবে যায় মৃত্যুই যেন তখন হয়ে উঠে কঠিন সত্য। নির্মম অন্ধকারকে আড়াল করে নিজের বুক চিতিয়ে উদ্ধ্যত চিত্তে সানি আহমেদ দেখিয়ে দেয় স্বপ্ন দেখার সাহস। ৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে ঘাতক পুলিশের গুলিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শাহাদাতের ঘটনা ৪ আগস্ট ২০২৪ মসজিদে মাইকিং করে ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলনে শামিল হন শহীদ সানি আহমেদ। সিলেটের ব্রিটিশ আইডিয়াল স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে, জাস্টিস জাস্টিস, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন, আপোষ না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রাম প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে পুলিশ। সেখানে পুলিশের সাথে যুক্ত হয় বিজিবি। ছাত্র-জনতা ইট পাটকেল ছুঁড়ে পুলিশকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ বাহিনী অতর্কিত গুলি চালালে সেখানে ছাত্র-জনতা টিকে থাকতে পারে না। কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। একের পর এক সাধারণ শিক্ষার্থী গুলি বিদ্ধ হয়ে রাস্তায় মুখ থোবড়ে পড়ে। একটি গুলি এসে শহীদ সানি আহমেদের বুকে বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে গুলি বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত সানি আহমেদকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আবু সাইদ, মুগ্ধর মত সানিও যুক্ত হন মৃত্যুর মিছিলে। তার লাশের ময়না তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে দ্রুত দাফন সম্পন্ন করা হয়। দাফন নিজ গ্রামেই তার দাফন-কাফন সম্পন্ন হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি সন্তানকে হারিয়ে পিতা মাতা দুজনেই পাগলপ্রায়। মায়ের অনুভূতি প্রকাশ করার মত না। তার গর্বিত বাবা বলেন, “আমার ছেলে অত্যন্ত নম্র-ভদ্র স্বভাবের ছিল। তার একমাত্র আয়েই সংসার চলত। তার দিকেই পরিবারের সকলে তাকিয়ে থাকতাম। তাকে হারিয়ে আমরা নিস্ব হয়ে গেলাম। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচব। আমার যে আর কেউ রইল না।” পারিবারিক অবস্থা শহীদ সানি আহমেদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। তারা ৬ ভাইবোন। ৪ বোনের মধ্যে মাত্র ১ বোনের বিয়ে হয়েছে। তার বাকি ভাইবোনরা সবাই পড়াশোনা করে। ছোট ভাই সামি আহমদকে কোরআনের হাফেজ বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। এজন্য সামিকে স্থানীয় একটি হাফেজী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। শহীদ সানির পিতা জনাব কয়সার আহমদ বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন। যার ফলে পুরো পরিবার শহীদ সানির উপরেই নির্ভরশীল ছিল। নিজেদের কোন জমি-জমা না থাকায় অন্যের জমিতে কাজ করেই তাদের সংসার চলত। এভাবেই তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন। তাদের নিজস্ব কোন বাড়ি নেই। তাই তাদের ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়। বাবা-ছেলে মিলে যা আয় করত তার অর্ধেক বাড়ি ভাড়া দিতেই চলে যেত। বাকি টাকা দিয়ে কোনমতে ডাল-ভাত খেয়ে পরিবারের সাথে দিন পার করতেন শহীদ সানি আহমদ। এর মধ্যে সানির শাহাদাত বরণ পরিবারে চরম সংকট তৈরি করেছে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : শহীদ সানি আহমদ, পেশা: দিনমজুর জন্ম তারিখ : ০৩/১১/২০০০ জন্ম স্থান : সিলেটের শিলঘাটে পিতা : মো: কয়সর আহমদ মাতা : রুবিয়া বেগম আহত হওয়ার তারিখ : ৪ আগষ্ট ২০২৪ স্থান : ব্রিটিশ আইডয়াল স্কুলের সামনে শাহাদাতের তারিখ : ৪ আগষ্ট ২০২৪, ঘটনাস্থলেই স্থায়ী ঠিকানা : কুমাড়পাড়া, শিলঘাট, সিলেট প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ২. বাসস্থান করে দেয়া ৩. অসুস্থ বাবার সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ৪. শহীদের বাকি ভাই বোনের নিরাপদ ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করা
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা-প্রাপ্ত হয়ে থাকে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৬৯)
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৮)




