জন্ম তারিখ: ২০ মার্চ, ১৯৮৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান: বিয়ানীবাজার থানার সামনের রাস্তায়
শহীদ ময়নুল ইসলাম সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার ৫ নং ওয়ার্ডের নয়াগ্রামে ২০ মার্চ ১৯৮৩ সালে অত্যন্ত দরিদ্র এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা (মৃত) সিরাজ মিয়া ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক এবং মাতা (মৃত) লাল বানু ছিলেন একজন গৃহিণী। তিনি মূলত দারিদ্রতার মধ্যেই তার শৈশব কৈশোর কাটিয়েছেন। শহীদ ময়নুল ইসলাম একজন সহজ সরল নির্ভেজাল মানুষ ছিলেন। তিনি নিজে নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন এবং এলাকাবাসীকে নামাজের জন্য ডাকতেন। নিজের সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি এলাকার মানুষের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতেন। কখনো কারো কাছে ধার-দেনা করেননি, এমনকি খাবারের অভাবে থেকেও কাউকে বিরক্ত করেননি। ঘরসংসার ও ধর্মীয় কর্মসূচির বাইরে তিনি কোনো খারাপ কাজে জড়িত ছিলেন না। পারিবারিক জীবন ময়নুল পারিবারিক জীবনেও দারিদ্রর্যের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারেননি। তাই সে রাস্তার পাশে ফুটপাতে সবজি এবং কলার ব্যাবসা করে। কিন্তু তা দিয়ে পরিবারের খরচ চালানো ছিল দুরহ ব্যাপার। তার পরিবারে স্ত্রী এবং দুটি ছোট সন্তান রয়েছে।যদিও তিনি দারিদ্রতার মাঝে জীবনযাপন করেন কিন্তু তার সন্তান্দের পড়াশোনার বিষয়ে অনেক সচেতন ছিলেন। তার বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১২) তোফাজ্জল বশির উচ্চবিদ্যালয়ে এবং ছোট ছেলে শিহাব আহমেদ (১০) নয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিই ছিলেন ময়নুল ইসলাম। তার মৃত্যুর পর পরিবারটির কষ্টের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তার অবর্তমানে পরিবারের ভরণ-পোষণের কোন ব্যবস্থা নেই। তার সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শহীদ হওয়ার ঘটনা ২০২৪ সালের ৫ জুলাই শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন ধীরে ধীরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে রূপ নেয়। পরবর্তীতে ১৬ জুলাই থেকে আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করে স্বৈরাচার হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনী ছাত্রলীগ, পুলিশ ও বিজিবি। দেশের প্রতিটি জেলায় তারা রাস্তায় সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ছাত্রদেরকে নির্মমভাবে অত্যাচার করতে থাকে। এরকম পরিস্থিতির মাঝে ময়নুল ইসলাম বিভিন্নভবাবে শিক্ষার্থীদেরকে, রাস্তার নির্যাতিত মানুষদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ময়নুল।বিজয় মিছিলে গিয়েও বিজয়ের স্বাদ ভোগের সুযোগ হয়নি ময়নুলের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন যখন চরম আকার ধারণ করে এর কিছুদিন তিনি আন্দোলনে যোগদান করেন। অবশেষে ৫ আগস্ট বেলা ১২ টায় যখন সাইকো শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় তখন সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও অনেক বড় বিজয় মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। সেই বিজয় মিছিলেই যোগদান করেন ময়নুল ইসলাম। কিন্তু খুনি হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনী ছাত্রলীগ এবং বন্দুক বাহিনী পুলিশ ও বিজিবি তখনও ধূর্ত হাসিনার পলায়নের খবর না জেনে পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। যখন ময়নুল ইসলাম সহ সেই বিজয় মিছিল বিয়ানীবাজার থানা গেটের সামনে যায় তখন পুলিশ বিজিবির মুহুর্মুহু গুলির মধ্য থেকে একটা ময়নুলের বুকে লাগে। বুলেটটি ময়নুলের বুক ভেদ করে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যেতে থাকে শরীর থেকে। এমন সময় আরও একটি গুলি এসে তার হাতে লাগে। রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে পিচঢালা শক্ত রাস্তায়। গামছা রক্তে ভিজে যায় এবং গায়ের শার্ট ও লুঙ্গিতে রক্ত লেগে তা শরীরের সাথে লেপ্টে যেতে থাকে। একপর্যায়ে চোখ ঘোলা হয়ে আসে ময়নুলের এবং অবশেষে সেখানেই চিরজীবনের জন্য চোখ বন্ধ করতে বাধ্য হয় ময়নুল ইসলাম। ময়নাতদন্তের পূর্বে তার দাফন সম্ভব হয়নি, যা তার পরিবারের জন্য আরও এক বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। পরিবারের বর্তমান অবস্থা ময়নুল ইসলামের মৃত্যুতে তার পরিবারে গভীর শোক ও কষ্ট নেমে এসেছে, নেমে এসেছে অন্ধকার। দুই ছোট সন্তান এবং স্ত্রী এখন অর্থনৈতিকভাবে অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন। তাদের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানোও এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম: ময়নুল ইসলাম জন্ম তারিখ: ২০ মার্চ ১৯৮৩ পিতার নাম: সিরাজ মিয়া (মৃত) মাতার নাম: লাল বানু (মৃত) পেশা: ক্ষুদ্র সবজি ও কলা ব্যবসায়ী মেয়ে: ফাতেমা আক্তার (১২) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছেলে: শিহাব আহমেদ (১০) পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম: নয়াগ্রাম, উপজেলা: বিয়ানীবাজার, জেলা: সিলেট ঘটনার স্থান: বিয়ানীবাজার থানার সামনের রাস্তায় আঘাতকারী: পেটুয়া পুলিশ বাহিনীর ছোড়া বুলেট আহত হওয়ার সময়: ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৫:৩০ নিহত হওয়ার সময়: ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৫:৩০ প্রস্তাবনা ১. এই আবাসনহীন বীর সৈনিকের আবাসন সমস্যা মেটানো অত্যন্ত প্রয়োজন এবং তার দুই সন্তানের পড়ালেখা যাতে বন্ধ না হয় সেদিকেও নজর রাখা উচিত। এমনকি পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য রাষ্ট্রের এই দায়িত্ব নেয়া অত্যন্ত জরুরি। ২. মইনুল ইসলাম ছিলেন একজন আদর্শ মানব, যার জীবন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। তার আত্মত্যাগের জন্য তিনি আজীবন বাঙালির মনে তারা হয়ে জ্বলতে থাকবেন।