জন্ম তারিখ: ২০ আগস্ট, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার সামনে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী এক তরুণ ছাত্র শহীদ মোহাম্মদ রায়হান। ইতিহাসে যাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, যুগের পরে যুগ ধরে স্মরণ করা হবে, তাদের মধ্যে শহীদ রায়হান উদ্দিন অন্যতম। শহীদ রায়হানের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা ফারুক আহমেদ তার পানের দোকানের মুনাফা থেকে পরিবার পরিচালনা করেন। ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তেলকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রায়হান। তিনি গ্রামের বাড়িতে বেড়ে ওঠেন এবং শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেঝ। তার পিতার সামান্য পান বিক্রির টাকা থেকে পরিবার পরিজনের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সেটা দেখে শহীদ রায়হান শপথ নেন যে, পড়াশোনা শেষ করে মর্যাদা পূর্ণ একটি চাকরি করবেন। তিনি তার পরিবার-পরিজনের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেতে চান। তার ছোট দুই ভাইকে নিয়ে দেখতেন আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। সেই পথেই হাঁটতে গিয়ে তিনি নিজ জ্ঞান অন্বেষণের জন্য ছুটে যান কুড়ার বাজার কলেজে। সেখানে তিনি একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ছাত্র আন্দোলনের সময় পরীক্ষার্থী হলেও তিনি দেশকে এতটাই ভালবাসতেন যে, আন্দোলন থেকে কেউ তাকে দূরে রাখতে পারেনি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। তার অসাধারণ আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় বন্ধু বান্ধব, পরিবার-পরিজন সকলেই আকৃষ্ট হতেন। ধর্মপরায়ণ এই মেধাবী শিক্ষার্থী জাতিকে পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। শাহাদাতের ঘটনা বর্ণনা ২০২৪ সালের জুলাই মাস ব্যাপী চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটার সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলনের মূল কথা ছিল স্বাধীন সার্বভৌম দেশে কোন ব্যক্তির সাথে বৈষম্য করা যাবে না। দেশকে গঠনের জন্য নিয়োগকৃত সরকারি বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অবশ্যই মেধাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তবেই দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে বিশ্ব দরবারে। একথা সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য যে, কোটা একটি বৈষম্যের নাম। এই কোটা বৈষম্য থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে রাজপথে নামে তরুণ ছাত্রসমাজ। জুলাইয়ের ১ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন চলছিল বেশ শান্ত ভাবেই। কিন্তু স্বৈরাচার সরকারের এমপি মন্ত্রী এবং তাদের দলীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপরে নির্মমভাবে আক্রমণ চালানো হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপরে চরম নির্যাতন করা হয়। এমনকি মেয়েদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি। ১৫ তারিখে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাত উপলক্ষে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ায় আইনজীবী, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজ এবং অভিভাবক সমাজ। ৪ দফা, ৮ দফা, ৯ দফার মতো অনেকগুলো দফাই দেওয়া হয় ছাত্রদের পক্ষ থেকে। সরকার তাদের কোন দফার দিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। বরং তাদের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়। খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর দ্বারা বাংলার মেধাবী শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ আমজনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মৃত্যুর বন্যা বইয়ে দেওয়ার জন্য আকাশ থেকেও করা হয় গুলিবর্ষণ। খালি হতে থাকে অসংখ্য মায়ের কোল। অসংখ্য বাবা তার ছেলেকে হারায়, অসংখ্য ভাই তার ভাইকে হারায়, অসংখ্য ভাই তার বোনকে হারায় এই আন্দোলনে। সর্বশেষে ৪ আগস্টে এক দফা ঘোষণা করা হয় ৫ তারিখে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি অর্থাৎ অর্থাৎ স্বৈরাচারী হাসিনার পতন। সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতা আসে ঢাকায়। ৫ তারিখে ঢাকাসহ সারাদেশে রাজপথে নামে মানুষের ঢল। বিজয় হয় বাংলার ছাত্র জনতার। ১৫ বছরের স্বৈরাশাসক থেকে রক্ষা পেয়ে বিজয় উল্লাস করে দেশ-বিদেশের মানুষ। আন্দোলনের বিজয়ের পর তেমনিভাবে শহীদ রায়হান সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার সামনে তাঁর বন্ধুদের নিয়ে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করে। থানার সামনে গেলে পুলিশ সদস্যরা বিজয় মিছিলের উপর এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। প্রথমে দুইটা গুলি এসে লাগে শহীদ রায়হানের শরীরে। পরবর্তী আরেকটা গুলি আসে লাগে তার বুকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান শহীদ রায়হান। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ রায়হানের পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বল। তার বাবা একসময় কাপড়ের ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। অসুস্থতার দরুণ তিনি আর ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে না। তার বড় ভাই টমটম চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে। মেঝ ভাই পানের দোকান দিয়ে রুটি রুজির ব্যবস্থা করেন। তারা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। শহীদের প্রিয়জনদের অনুভূতি শহীদ রায়হানের ছোট ভাই মো: সিয়াম আহমেদ বলেন: রায়হান ভাই অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। বন্ধু বান্ধব ও পরিবারের প্রতি কর্তব্য পরায়ণ ছিলেন। ধার্মিক ও সুন্দর মানসিকতার মানুষ ছিলেন। তিনি ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলেন। এক নজরে শহীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি নাম : মো: রায়হান উদ্দিন জন্ম তারিখ : ২০-০৮-২০০৪ পিতার নাম, পেশা, বয়স : ফারুক আহমেদ (৬০), পান দোকানদার মায়ের নাম, বয়স, পেশা : রাহেলা বেগম (৪৫), গৃহিণী বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৩ জন ভাই বোন সংখ্যা : চার ভাই ১. বোরহান উদ্দিন, বয়স: ২৭, পেশা: টমটম চালিয়ে, সম্পর্ক: ভাই ২. শহীদ মো রায়হান উদ্দিন স্থায়ী ঠিকানা : টেলকান্দি, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বর্তমান ঠিকানা : বাসা: ১৪৪/নয়াগ্রাম, এলাকা: বিয়ানীবাজার পৌরসভা, থানা: বিয়ানীবাজার, জেলা: সিলেট ঘটনার স্থান : বিয়ানীবাজার থানা গেটের সামনে আঘাতকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশ আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট, আনুমানিক বিকাল ৫.৩০ মিনিট নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : কাল: ৫ আগস্ট, আনুমানিক বিকাল ৫.৩০ মিনিট শহীদের কবরে বর্তমান অবস্থান : নিজ গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ২. বাবাকে ভালো কোনো ব্যবসা ধরিয়ে দেয়া ৩. মেঝ ভাইয়ের চাকরির ব্যবস্থা করা ৪. ছোট ভাইয়ের পড়াশুনার খরচ বহন করা