জন্ম তারিখ: ২ ডিসেম্বর, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : সিএনজি চালক, শাহাদাতের স্থান : কালিঘাটের মসজিদ, সিলেট
"আনন্দ মিছিলে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন" শহীদ পঙ্কজ কুমার জন্মগ্রহণ করেন ২০০১ সালের ২ ডিসেম্বর। তার জন্মস্থান ঝালোপাড়া, ভার্থকলা, সিলেট। তার পিতা নিখীল চন্দ্র কর পেশায় একজন সিএনজি চালক। আর মাতা অর্চনা রানী কর একজন গৃহিণী। তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। শহীদ পঙ্কজ ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। দারিদ্র্যতার কারনে আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে সিএনজি চালানো শিখেন পঙ্কজ। বাবা-ছেলে দুজনেই ভাড়ায় সিএনজি চালিয়ে সংসার চালাতেন। আর ছোট দুই ভাইবোনকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। ছোট ভাই পল্লব কুমার কর দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আর ছোট বোন অনন্যা কর ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বিস্তারিত ঘটনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন ঘটে। স্বৈরশাসক খুনী হসিনা সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে গোপনে পালিয়ে যায়। এর আগে খুনী হাসিনার সরকার দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে। গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, অন্যায়, জুলুম, অবিচার, অত্যাচার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, অর্থ পাচার ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে। তাদের অন্যায় অত্যাচারের মাত্রা পূর্বাপর সকল স্বৈরশাসককে ছাড়িয়ে যায়। দীর্ঘদীনের ক্ষোভ জনগনের মনে দানা বেঁধে উঠে আন্দোলনে রুপ লাভ করে। দলীয় পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে জনগনের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পুলিশের পৈশাচিকতা ৭১’র পাক হানাদার বাহিনীকেও ছাপিয়ে যায়। ছাত্র-জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলন রুপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে সরকার মারমুখি নীতি অবলম্বন করে। ক্যাম্পাসগুলাতে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলো ছিল ছাত্রলীগের টর্চার সেল। শিবির ট্যাগ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। দেশের পক্ষে কথা বলায় বুয়েটের আবরার ফাহাদ কে ছাত্রলীগের টর্চার সেলে নিয়ে রাতভর অত্যাচার চালায়। সকালে তার মৃত দেহ বের করে আনে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিবির সন্দেহে হিন্দু ধর্মের বিশ্বজিৎ কে কুপিয়ে হত্যা করে। ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তুলে নিয়ে নির্যাতন করত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ধর্ষণ, মাদক কারবারি, চোরাচালান, হল দখল সব ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিল কুখ্যাত ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ করলে যেন সকল কিছুই জায়েজ। শত শত অপরাধ করেও পার পেয়ে যেত ছাত্র সংগঠনের নামে ইতিহাসের কলঙ্কিত ঘৃণ্য ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসীরা। সরকারের এমপি মন্ত্রীদের শেলটারে অপরাধ করেও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরাত এসব অপরাধীরা। দীর্ঘদীনের ক্ষোভ জনগনের মনে দানা বেঁধে উঠে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। দীর্ঘ ৩৬ দিন রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈচারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট খুনি হাসিনার দেশ পলায়নের খবর ছড়িয়ে পরলে সারা দেশে আনন্দ মিছিল বের হয়। বিকেল ৪:৩০ এর দিকে পঙ্কজ তার এলাকার বন্ধুদের সাথে বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। কিন্তু আর বাড়ি ফিরেনি। এদিকে অনেক রাতেও বাড়িতে ফিরতে না দেখে তার পরিবার চিন্তিত হয়ে পড়ে। সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরিবার পরিজনের সাথে আত্মীয়স্বজনরাও যুক্ত হন। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে ব্যর্থ হয়। কোথাও না পেয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে খোঁজ করতে থাকেন। এদিকে ছেলেকে হারিয়ে মা পাগলপ্রায়। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেন। এভাবে ৩ দিন কেটে যায়। শহীদ পঙ্কজের কোন খোঁজ মেলে না। আগস্টের ৮ তারিখ সকাল সাড়ে দশটার দিকে একটা অজ্ঞাত নাম্বার থেকে কল আসে। ফোন কল থেকে জানতে পারে কোতোয়ালি থানায় কয়েকটি বেওয়ারিশ লাশ পড়ে আছে। পঙ্কজের লাশ আছে কিনা এসে দেখতে বলে। আবার কালিঘাটের মসজিদ থেকেও কয়েকটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। খবর পেয়ে দ্রুত থানায় যায় শহীদের পরিবার। থানায় গিয়ে অনেকগুলো লাশ দেখে হতম্ব হয়ে যান তারা। এমন ভয়ানক দৃশ্য তারা আগে কখনো দেখেননি। দেয়ালের পাশে ছেলের লাশ দেখে চিহ্নিত করতে আর কষ্ট হয়নি মায়ের। ছেলেকে এমন বীভৎস অবস্থায় দেখে কান্নায় ফেটে পড়েন। তাকে খুব নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ঘাতকের দল হায়েনার মত অত্যাচার করেছে শহীদ পঙ্কজ কে। কোন সুস্থ মানসিকতার মানুষের পক্ষে এমন নির্মমভাবে কাউকে হত্যা করা সম্ভব না। ঘাতকেরা হত্যার পূর্বে তার হাত-পা ও বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। তাতেও ক্ষান্ত হননা। বুকের ভিতর বুলেট নিক্ষেপ করে হত্যা করে। শেষকৃত্য সেদিনই থানা থেকে শহীদ পঙ্কজের লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। শহীদের লাশ চিতার আগুনে পুড়তে থাকে আর এদিকে তার পরিবার আত্মীয়স্বজনদের বুকে স্বজন হারানোর কষ্টের আগুন জ্বলতে থাকে। পারিবারিক অবস্থা শহীদ পঙ্কজের পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তার পিতা নিখীল চন্দ্র কর পেশায় একজন সিএনজি চালক। আর মাতা অর্চনা রানী কর গৃহিণী। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। শহীদ পঙ্কজ ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। দারিদ্র্যতার কারনে আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা দিতে সিএনজি চালানো শিখেন। বাবা-ছেলে দুজনেই ভাড়া সিএনজি চালিয়ে সংসার চালান। আর ছোট দুই ভাইবোনকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এক নজরে শহীদের ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি নাম : শহীদ পঙ্কজ কুমার কর পেশা : সিএনজি চালক জন্ম তারিখ : ০২/১২/২০০১ জন্ম স্থান : ঝালোপাড়া, ভার্থকলা, সিলেট পিতা : নিখীল চন্দ্র কর মাতা : অর্চনা রানী কর আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নৃ শিংহ, জিউর আখড়া ইউনিয়ন: ঝালোপাড়া, ভার্থখলা থানা: দক্ষিণ সুরমা, জেলা: সিলেট বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: নৃ শিংহ, জিউর আখড়া ইউনিয়ন: ঝালোপাড়া, ভার্থখলা থানা: দক্ষিণ সুরমা, জেলা: সিলেট প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া ২. এককালীন আর্থিক অনুদান ও নিয়মিত মাসিক ভাতা প্রদান ৩. শহীদ পরিবারের সকল খরচ নিশ্চিত করা