জন্ম তারিখ: ৫ মে, ১৯৮৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান : পিটিআই মোড়, মুন্সিগঞ্জ সদর, মুন্সিগঞ্জ।
সহায় সম্বলহীন একেবারেই নিঃস্ব পরিবারের সন্তান দিনমজুর রিয়াজুল ফরাজী ১৯৮৪ সালের ৫ মে ঢাকা বিভাগের মুন্সিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ভিটেমাটি এবং কৃষি জমি কিছুই ছিল না শহীদের। দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরতা মেয়ে খুকুমণি এবং স্ত্রীকে সাথে নিয়ে অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করতেন তিনি। মহাবীর রিয়াজুল ফরাজী দিনমজুরি করে কোনক্রমে জীবন নির্বাহ করতেন। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে চার সদস্যের এই পরিবারটি এখন দিশেহারা। বর্তমানে শহীদের স্ত্রী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোনক্রমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র জনতা কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। আন্দোলনের নামকরণ করা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যার যাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে গ্রাম হতে শহর অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। আন্দোলন দমাতে মারণাস্ত্র হাতে তৎপর ছিল খুনি হাসিনার পুলিশ, বিজিবি, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান সহযোগী বিতর্কিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। গত ১৫ বছরে সরকারি বাহিনী এবং দলীয় সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে পুরো দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল আওয়ামী হায়েনারা। তাদের অপতৎপরতা রুখে দিতে তৎপর হয়ে উঠে এদেশের স্বাধীনতাকামী আপমর জনসাধারণ। একপর্যায়ে আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। জনসাধারণের এমন তৎপরতায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ফ্যাসিস্ট সরকার। নির্বিচারে গণহত্যায় মেতে উঠে ঘাতক দল। এই গণহত্যায় বাদ পড়েনি শিশু থেকে শুরু করে দিনমজুর। মুক্তিকামী জনতা রাতের পর রাত নির্ঘুম অবস্থায় অতিবাহিত করে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নির্ভীক ছাত্র জনতা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। স্নাইপার, রাইফেল, হেলিকপ্টার হতে গুলিবর্ষণ কোন কিছুই তোয়াক্কা করেনা তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃবৃন্দের আহবানে সাড়া দিয়ে রাজপথে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সারাদেশে বাংলাব্লকেড, কমপ্লিট শাটডাউনসহ নানামুখী কর্মসূচী পালন করা হয়। আন্দোলনের একপর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়। ০৪ আগস্ট উক্ত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জ জেলার পিটিআই মোড়ে অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। মুক্তিকামী জনতার সাথে রিয়াজুল ফরাজিও সেদিন উক্ত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে উক্ত কর্মসূচিতে নরখাদক খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বেধড়ক লাঠি পেটা করে শহীদ রিয়াজুল ফরাজীকে। আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও ক্ষান্ত হয়নি নরখাদকেরা। মানবতার চরম দুশমন আওয়ামী হায়েনারা ফরাজীর মৃত্যু নিশ্চিত করতে এক পর্যায়ে তাঁর মাথায় কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। অতঃপর ঘটনাস্থলেই এই নিঃস্ব দিনমজুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। স্থানীয় লোকজন মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রিয়াজুল ফরাজীকে মৃত ঘোষণা করেন। মুন্সীগঞ্জের মাটিতেই তাঁকে কবরস্থ করা হয়। শহীদের পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য দেশ মাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গকারী রিয়াজুল ফরাজীর ভিটে-মাটি, কৃষি জমি কিছুই নেই। এই মুহূর্তে সংসারে দুমুঠো আহার যোগান দাতা কিংবা পরিবারের হাল ধরার মত কোন অবলম্বন অবশিষ্ট নেই। ফলে বাধ্য হয়ে হৃদরোগী বিধবা রুমা বেগম অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেছেন। অসুস্থ শহীদ পত্নীর দৈনন্দিন প্রায় দেড়শ টাকার ওষুধ প্রয়োজন হয়। রিয়াজুলের ছোট মেয়ে খুকুমণি দশম শ্রেণির ছাত্রী। বড় মেয়ে রিয়ামনি বিবাহিতা। তার একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। তবে স্ত্রী ও সন্তানের খবর রাখে না শহীদ জামাই। এমতাবস্থায় চার সদস্যের এই পরিবারটি দিশেহারা অবস্থায় উপনীত হয়েছে। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : রিয়াজুল ফরাজী পিতার নাম : মৃত কাজীম উদ্দিন ফরাজী মাতার নাম : মৃত শামসুন্নাহার বেগম জন্ম তারিখ : ৫ মে ১৯৮৪ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: উত্তর ইসলামপুর, ইউনিয়ন: উত্তর ইসলামপুর, থানা: মুন্সিগঞ্জ সদর, জেলা: মুন্সিগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: উত্তর ইসলামপুর, ইউনিয়ন: উত্তর ইসলামপুর, থানা: মুন্সিগঞ্জ সদর, জেলা: মুন্সিগঞ্জ স্ত্রী : রুমা খাতুন ছেলে-মেয়ে : দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়ামনি বিবাহিতা। ছোট মেয়ে খুকুমণি দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শহীদ হওয়ার স্থান : পিটিআই মোড়, মুন্সিগঞ্জ সদর, মুন্সিগঞ্জ শহীদ হওয়ার সময় : ৪ আগস্ট ২০২৪, সকাল ১০:৩০ মিনিট যাদের আক্রমণে শহীদ : খুনি হাসিনার পেটুয়া বাহিনী। (আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ বাহিনী) পরামর্শ ১. পরিবারে কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় পরিবারটির নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন ২. ছোট মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করা জরুরি ৩. অসুস্থ বিধবা স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করা দরকার ৪. বড় মেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার