Image of মো: শাকিল হোসেন

নাম: মো: শাকিল হোসেন

জন্ম তারিখ: ৩ নভেম্বর, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : আজমপুর উত্তরা পূর্ব থানার সামনে

শহীদের জীবনী

২০০২ সালের ৩ নভেম্বর লক্ষীপুর জেলার ১ নং উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের কাপিলাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মো: শাকিল হোসেন। শহীদ পিতা জনাব বেলায়েত হোসেন একজন ব্যবসায়ী। জননী পারভীন আক্তার চিরাচরিত গৃহিণী। শাহাদত বরণের পূর্বে টঙ্গী সরকারি কলেজের বিএসএস (পাস) ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন শাকিল। বাবা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের ব্যবহারে যে কেউ মুগ্ধ হত। অত্যন্ত উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন এই তেজস্বী বীর। শহীদ পিতা গাজিপুর টঙ্গির এরশাদনগর এলাকায় ব্যবসা করেন। তাঁর মাসিক আয় বার হাজার টাকা। এক সময় বেলায়েত হোসেনের ব্যবসা রমরমা ছিল। বর্তমানে বয়স হওয়ায় আগের মত চলাফেরা করতে পারেন না। বেশির ভাগ সময় দোকান বন্ধ রাখতে হয়। ফলে ব্যবসায় লাভের হার তুলনামূলক হ্রাস পেয়েছে। বাধ্য হয়ে দোকানের কর্মচারীকেও অব্যহতি দিতে হয়েছে। দোকান ভাড়া, বাড়ি ভাড়া, সংসারের যাবতীয় খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় শহীদ পিতাকে। সংসারের আর্থিক টানাপড়েন দেখে টিউশনি শুরু করেছিলেন শাকিল। পাশাপাশি দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করে পরিবারের হাল ধরেছিলেন তিনি। ধীরেধীরে অর্থাভাব কমতে শুরু করে। পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। শাকিল হোসেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। যেখানে সেমিস্টার ফি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ফলে প্রতি সেমিস্টারে একত্রে অনেক গুলো অর্থের প্রয়োজন হয়। যে কারণে শহীদ জনক নিকট আত্মীয়দের থেকে সন্তানের লেখাপড়া বাবদ ছয়লক্ষ টাকা ঋণ করেন। শহীদ ছিলেন বিবাহিতা তিন বোনের আদুরে একমাত্র ছোট ভাই। শহীদ জননী নয় বছর আগে স্ট্রোক করে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন- ‘যদি কোনদিন টিউশনি শেষে শাকিলের বাসায় ফিরতে দেরি হতো আমি ততক্ষণ পর্যন্ত না খেয়ে থাকতাম। এখন আমার শাকিল নেই। আমি ওঁর মা জীবিত হয়েও যেন জীবন্ত লাশ হয়ে পড়েছি।’ ছেলের শোকে প্রায় কাঁদতে কাদঁতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন পারভিন আক্তার। শাকিলের শার্টটি (জামা) সব সময় নিজের কাছে আগলে রাখেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শাকিলের বড় বোন বিউটি আক্তার ভাইয়ের শেষ স্মৃতির কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ১৮ জুলাই বেলা ১১টায় আমার ভাই টিউশনি শেষে উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যায়। বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে আমাকে ফোন করে জানায়, আপা উত্তরার পরিস্থিতি খুব খারাপ। হয়তো যে কোনো সময় মারা যেতে পারি। চিন্তা করো না। আমরা যারা অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছি, সবার জন্য মাকে দোয়া করতে বলো। মৃত্যুর আগে মেসেজ করে জানিয়ে দেব। পরবর্তীতে জানতেও পারিনি আমার ভাই কখন স্রষ্টার সান্নিধ্যে চলে গিয়েছে। আজ আন্দোলন সফল হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আমার ভাই আন্দোলনের ফসল দেখে যেতে পারেনি। আমার মায়ের মতো আর কারও মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়। শহীদ পিতা বেলায়েত হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- ‘আমি গ্রামের বাড়ি থাকাবস্থায় ১৮ জুলাই বিকাল ৫টার দিকে খবর পাই আমার ছেলে আর নেই। সেদিন বিভিন্ন স্থানে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে কুমিল্লার গৌরীপুর পর্যন্ত পৌছাতে পারি। ততক্ষণে শাকিলের লাশ নিয়ে মানারত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আমার স্বজনরা গৌরীপুর পোঁছায়। আমি ঢাকায় ফিরে না গিয়ে তাদের সঙ্গে গাড়িতে উঠে গ্রামের বাড়ি লক্ষ¥ীপুরের দিকে রওনা করি। সেখানে কাফিলাতলী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে আমার সন্তানকে নিজ হাতে দাফন করি। আমার ছেলেকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। গুলি তাঁর বুকে বিদ্ধ হয়ে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। আমি শাকিল হত্যার বিচার চাই। আমার বুকের মানিক হত্যার বিচার চাই। আমার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে শাকিল ছিল একমাত্র ছেলে। আজ সবই আমার কাছে স্মৃতি হয়ে আছে। আমি এখন ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। আমি চাই আমার ছেলে যে উদ্দেশ্যে দেশের স্বার্থে জীবন দিয়েছে, সেই উদ্দেশ্য সফল হোক। আমার ছেলেসহ যারা শহিদ হয়েছে, তাদের রক্তের বিনিময়ে যেন এ দেশে শান্তি ফিরে আসে। প্রস্তাবনা ১। শহীদ পরিবারের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে ২। শহীদ জননীর চিকিৎসা খরচ দেয়া যেতে পারে একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: শাকিল হোসেন জন্ম তারিখ : ০৩/১১/২০০২ পিতা : মো: বেলায়েত হোসেন মাতা : পারভীন আক্তার স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কাপিলাতলী, ইউনিয়ন: ১ নং উত্তর হামছাদী, থানাঃ লক্ষীপুর, জেলা: লক্ষীপুর পেশা : ছাত্র ঘটনার স্থান : আজমপুর উত্তরা পূর্ব থানার সামনে আহত হওয়ার সময়কাল : ১৮ জুলাই ২০২৪ ইং সময় : ৪:৩০ মিনিট শাহাদাতের সময়কাল : ১৮ জুলাই ২০২৪ ইং সময় : ৫:৩০ মিনিট, রেডিক্যাল হাসপাতাল আঘাতের ধরন : বুকে গুলি করা হয় আক্রমণকারী : পুলিশ

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, মারে ও মরে। (সুরা তাওবা ৯:১১১)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের আত্মা সবুজ পাখির পেটে থাকে।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৭)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
Image
Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo