জন্ম তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ছাত্র, সরকারি মোহম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা শাহাদাতের স্থান : নিউরোসাইন্স হাসপাতাল, ঢাকা
“অবিনাশী চেতনার সূর্য সন্তান শহীদ সৈকত” শহীদ পরিচিতি ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে চাপা উত্তেজনা। চায়ের টং দোকান গুলোতে সবার মুখে মুখে একই আলাপ। কী হবে? দেশের সকল ক্যাম্পাসগুলোতে কোটা সংস্কার-এর দাবীতে মিটিং মিছিল চলছে অবিরত। নূরজাহান রোডে বসবাসকারী সৈকতের বাবার ব্যবসাটি ছিল ঋণে জর্জরিত। ঋণগ্রস্ত বাবার মুখটার কথা মনে করে প্রায়ই আফসোস করতেন সৈকত। ছোট এই কিশোরের চেতনা জুড়ে একটি বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন। ছাত্রদের দাবি ছিল সবাই পড়ালেখা শেষ করে মেধার ভিত্তিতেই পাবে চাকরি। কিন্তু ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার কোনোভাবেই ছাত্রদের এই যৌক্তিক দাবী মেনে নিতে নারাজ। আন্দোলনের প্রথম থেকেই ছিল সৈকতের মৌন সমর্থন। সরকারী মোহম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে সৈকত। তার বাকি সহপাঠীরাও যে যার মতো সক্রিয় ছিল আন্দোলনে। রাজধানীর শাহবাগ থেকে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনের হাওয়া লাগে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মোহাম্মদপুরে। সেখানেই আন্দোলনে যোগ দেন শহীদ সৈকত। যার পুরো নাম মাহামুদুর রহমান সৈকত। ঘটনাটি ১৯ জুলাই এর। সেদিন পুরো রাজধানীই ছিল উত্তপ্ত। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সৈকতের পিতা জনাব মাহাবুবের রহমান তাকে ফোন করে বাসায় ফিরে আসার নির্দেশ দেন। যেন তার প্রাণপ্রিয় সোনার টুকরা সন্তানটি থাকে নিরাপদ। তাই শঙ্কিত বাবা থেকে তাগাদা আসছিল বারবার। কিন্তু সৈকত তার বাবাকে ফোনে জানান তিনি তার বন্ধুদের সাহায্য করতে যাবেন। কেননা তার সহপাঠীরা গুলিবিদ্ধ। এই কথাই যে বাবার সাথে সৈকতের শেষ কথা হবে, তা কে-ই বা জানতো! যেভাবে শহীদ হন সারা দেশে তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূর জাহান রোডে শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকত বাবার অনুপস্থিতিতে ব্যবসায় সময় দিচ্ছিলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত বিবেচনা করে, সৈকতের পিতা জনাব মাহাবুবের রহমান তাকে ফোন করে বাসায় ফিরে আসার নির্দেশ দেন যেন মাহামুদুর রহমান আন্দোলনের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে থাকতে পারেন। কিন্তু সৈকত তার বাবাকে জানায় যে, সে তার বন্ধুদের সাহায্য করতে যাবেন, কারণ তার এক বন্ধু আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। মুঠোফোনে কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই তার বাবার কাছে একটি মর্মান্তিক ফোনকল আসে। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে জানানো হয়, “আপনার ছেলে রায়েরবাজারে পুলিশের একটি গুলিতে মাথায় আঘাত পেয়েছে। গুলি তার মাথার সামনের দিকে বিদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যায়।” ১৯ জুলাই বিকেল ৩:৩৭, নূর জাহান রোডে শহীদ সৈকত গুলিবিদ্ধ হন। আন্দোলনকারীরা তাকে দ্রুত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরে মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের মাথার মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গভীর শোক ও ব্যথার মধ্যে দিয়ে তার দাফন সম্পন্ন হয় মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডস্থ কবরস্থানে। শহীদ সম্পর্কে শিক্ষকের কথা “আমার ছাত্র শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকত (২০)। ওর শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে ওকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। ওর মতো নম্র, ভদ্র, মেধাবী ও সুদর্শন ছাত্র খুব কমই পেয়েছি। ওর হাসিমাখা মুখখানি বারংবার ভেসে উঠছে মানসপটে। গত শুক্রবার গোধূলির রঙে হারিয়ে গেল সৈকত চিরতরে! কি অকাল প্রয়াণ! কি হাহাকার চারিদিকে! কি বেদনার অমানিশা মরমে মরমে!! তবুও আমাদের সৈকত বেঁচে রবে মুমূর্ষু চেতনার সঞ্জীবনী রূপে, বন্ধুবাৎসল্যের প্রতীক হিসেবে ও ন্যায়ের জন্য আত্মত্যাগের উপমা হয়ে ।” ব্যক্তিগত প্রোফাইল শহীদের পূর্ণ নাম : মাহামুদুর রহমান সৈকত (২০) পিতার নাম : মাহাবুবের রহমান (৬৫) পিতার পেশা : ব্যবসা মাসিক আয় : ২৫০০০ টাকা মাতার নাম : আফরোজা রহমান (৪৫) মাতার পেশা : গৃহিণী শহীদের জন্ম তারিখ : ১১/০৯/২০০৪ শহীদের পেশা : শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। এইচএসসি পাশ বোন : ১. শাহরিনা আফরোজ (২৪), ২. সাবরিনা আফরোজ (২০) স্থায়ী ঠিকানা : ০১ নং ওয়ার্ড, মুসাপুর, সন্দীপ, চট্টগ্রাম বর্তমান ঠিকানা : নুরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ আক্রমণকারী : রায়ের বাজার থানা পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, সময় : ৩:৩৭ মিনিট মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৩:৪০ মিনিট, নিউরোসাইন্স হাসপাতাল কবরস্থান : মোহাম্মদপুর, তাজমহল রোড কবরস্থান
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না। (সুরা আল-বাকারা ২:১৫৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের জন্য জান্নাতে ৭০ জন আত্মীয়কে সুপারিশ করার অধিকার থাকবে।” (সুনান আবু দাউদ ২৫২০)







