Image of মো: সাইদুল ইসলাম শোভন

নাম: মো: সাইদুল ইসলাম শোভন

জন্ম তারিখ: ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : ঢাকা, নিউ মার্কেট।

শহীদের জীবনী

‘সেদিন ছিল শুক্রবার। শোভন দুপুরে বিরিয়ানি খাচ্ছিল, ওর বন্ধুরা তখন বার বার ফোন দিচ্ছিল। ছেলেটা আমার তাড়াহুড়া করে খেয়ে চলে গেলো..আমি কি জানতাম ওটাই আমার ছেলের শেষ খাওয়া!’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন শোভনের মা শাহনাজ বেগম। শহীদ সাইদুল ইসলাম শোভন মুন্সিগঞ্জ জেলা শ্রীনগর থানার রাইখাল ইউনিয়নের উত্তর কোলাপাড়া গ্রামে ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মো: নজরুল ইসলাম এবং মাতার নাম শাহনাজ বেগম । তিনি ছিলেন পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। শহীদ পিতা ব্যবসায়িক কারণে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে বসবাস করতেন। শহীদ শোভন শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজে লেখাপড়া করতেন। সম্ভাবনাময় এই মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য জাপানে যাবার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন। এমনকি প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রাদিও প্রস্তুত করে ফেলেছিলেন। এই সময়টাতেই শুরু হয় দেশকে রক্ষা করার আন্দোলন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে হটিয়ে সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এদেশের আপামর জনসাধারণ রাজপথে নেমে আসে। এই আন্দোলনে শহীদ শোভন দ্বিধাহীন চিত্তে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র নিউ মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার সাথে অবস্থান নেন। উনিশে জুলাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং পুলিশ ছাত্র-জনতার সমাবেশে এলোপাথাড়ি গুলি চালালে তার মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। স্থানীয় জনগণ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯ জুলাই ২০২৪ ছিল একটি মাইলফলক দিন। এদিন ছাত্র নেতৃবৃন্দ কমপ্লিট শাটডাউন নামক এক অভূতপূর্ব কর্মসূচি ঘোষণা করেন। উক্ত কর্মসূচিতে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণ একত্ম ঘোষণা করেন। আমজনতার ব্যাপক অংশগ্রহণ দিশেহারা স্বৈরাচার খুনি হাসিনা সরকারকে ভীত বিহ্বল করে তোলে। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমাতে তারা তৎপরতা শুরু করে। ব্যাপক অপপ্রচার, আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কার্যসিদ্ধি হাসিল, পুলিশ বিজিবি দিয়ে মানুষ হত্যা প্রভৃত্তি কর্মসূচি গ্রহণ করে। ছাত্র জনতাও পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে উনিশে জুলাই। উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে ছাত্র জনতা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নিউমার্কেটে অবস্থান নেন। শহীদ সাইদুল ইসলাম শোভন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার সাথে একাত্ম হয়ে তিনিও নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করেন। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা পুলিশের সাথে এক হয়ে উক্ত কর্মসূচিতে হামলা চালায়। তাদের এলোপাথাড়ি গুলির আঘাতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। আন্দোলনরত জনতা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ শোভনের ব্যাপারে কথাগুলো জানিয়েছে আরেক আন্দোলনকারী আলমগীর হোসেন- ‘আমরা তখন নিউমার্কেট পেট্রোল পাম্পের সামনে। ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলছে। গুলির শব্দ হচ্ছে মুহুর্মুহু। পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে সেজদার ভঙ্গিতে উঁবু হয়ে বসে আছে। ততক্ষণে আমাদের ছাড়িয়ে পুলিশ আরো সামনের দিকে চলে গেছে। দৌড়ে গেলাম ছেলেটার কাছে। ওকে আঁকড়ে ধরলাম। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাকে একটু হাসপাতালে নিয়ে যান, প্লিজ।’ একথা বলতে না বলতেই আমার গায়ে শরীর এলিয়ে দিলো। আমরা দ্রুত একটা রিকশা নিলাম। তখনো বেঁচে ছিল ছেলেটা। ওর আঙুল দিয়ে ওর ফোন আনলক করালাম। গলায় ঝুলানো আইডি কার্ডে লেখা ‘সাইদুল ইসলাম শোভন, কলেজ শেখ বোরহানউদ্দিন’। ডায়ালড নাম্বার লিস্ট থেকে একটা নাম্বারে কল দিয়ে জানালাম, ‘শোভনের গুলি লেগেছে। ওকে আমরা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছি, তার পরিবারকে যেন খবর দেয়া হয়।’ ‘যাওয়ার পথে শোভন একটা বড় নিশ্বাস নিলো। আশঙ্কা হলো: হয়তোবা শোভন মারা গেছে।’ হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ওখানে আহত-নিহত মানুষের ছড়াছড়ি। চারদিকে কান্নাকাটি আর হুড়োহুড়ি। একজন ডাক্তার পার্লস দেখে বললেন, ‘আগেই মারা গেছে।’ শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য সন্ধ্যার দিকে পাশের বাড়ির এক ছেলে এসে বলে, ‘আন্টি শোভনের গুলি লেগেছে, ওকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হইছে। ওর বাবা তখন ইন্ডিয়াতে। পাগলের মত ছুটে গেলাম হাসপাতালে... গিয়ে দেখি ইমার্জেন্সির এক কোণায় একটা ট্রলিতে আমার শোভন পড়ে আছে, কয়েকটা ছেলে ওর পাশে দাঁড়ানো... শোভনের কাছে দৌঁড়ে গেলাম, আমার ছেলের দেহ নিথর। কত্ত ঝাঁকুনি দিলাম, ছেলে কিছু বলে না। আমার শোভন তখন আর নাই!’ একথা বলে ঢুকরে কেঁদে ওঠেন শাহনাজ। শোভনের মা শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আমরা তো জানতাম না আমার ছেলের দেশের প্রতি এই রকম ভালোবাসা ছিল, ও যে নিজেই দেশের জন্য শহীদ হয়ে গেল! কত স্বপ্ন ছিলো ছেলেটাকে নিয়ে, সব শেষ হয়ে গেলো। আমার সাজানো-গোছানো সংসারটা শেষ হয়ে গেলো! জানি না বাকি জীবনটা কিভাবে কাটবে আমাদের! সরকারের কাছে আমাদের কিছু চাওয়ার নাই। শোভন দেশের জন্য যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে মারা গেছে- শোভন যেমন দেশ চেয়েছিল সেরকম হোক এই দেশটা। দেশের মানুষ যেন আমার সন্তানকে মনে রাখে, ওর আত্মত্যাগের কথা ভুলে না যায়।’ বোরহানউদ্দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শোভন খুব সাহসী ছিল। সে আমাদের জাতীয় বীর। শোভনের মত তরুণদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই এই দেশের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। আমরা এই জাতীয় বীরদের অবদান ভুলব না’। শোভনের মামা মনির হোসাইন বলেন, ‘এই সন্তানকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। পরিবারের সবার ইচ্ছে ছিল শোভন বড় হয়ে বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু দেশের জন্য শহীদ হয়েছে শোভন।' এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : শহীদ মো: সাইদুল ইসলাম শোভন পিতার নাম : মো: নজরুল ইসলাম মাতার নাম : শাহনাজ বেগম জন্ম তারিখ : ১৬ ডিসেম্বর ২০০৫ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: উত্তর কোলাপাড়া, ইউনিয়ন: রাড়িখাল, থানা: শ্রীনগর, জেলা: মুন্সিগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত আহত হওয়ার স্থান : ঢাকা, নিউ মার্কেট আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই দুপুর ১২:৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, দুপুর ১২:৩০ মিনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাদের আক্রমণের শহীদ : আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী এবং পুলিশ। পরামর্শ ১. আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই তবে পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা দরকার

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাইদুল ইসলাম শোভন
Image of মো: সাইদুল ইসলাম শোভন
Image of মো: সাইদুল ইসলাম শোভন
Image of মো: সাইদুল ইসলাম শোভন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মারুফ মিয়া

মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব

মুহাম্মদ জান শরীফ

তামিন হৃদয়

মো: আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ

মো: জুয়েল রানা

মো: মনিরুজ্জামান মোল্লা

মোহাম্মদ সাইফুল হাসান

রাইফা

মোশারফ

মো: মনোয়ার হোসেন

নাদিমুল হাসান এলেম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo