Image of  আফিকুল ইসলাম সাদ

নাম: আফিকুল ইসলাম সাদ

জন্ম তারিখ: ৩০ মার্চ, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দ্বাদশ শ্রেণী, শাহাদাতের স্থান : হার্ডিঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ গেইট, ধামরাই, ঢাকা।

শহীদের জীবনী

'মা তুমি চিন্তা করো না, আমি মরে গেলে তোমাকে বীরের মা বলে ডাকবে মানুষ’ শহীদ আফিকুল ইসলাম মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার দরগ্রামে ৩০ মার্চ ২০০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শফিকুল ইসলাম মাতার নাম আঞ্জমান আরা। ছোটবেলাতেই মা-বাবার সাথে ঢাকায় চলে আসেন শহীদ সাদ। ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব মেধাবী এবং বুদ্ধিমান ছিলেন। পিতা মাতার কাছ থেকেই তিনি উত্তম আদর্শ শিক্ষা লাভ করেন। জীবনে নিজের সততা এবং উত্তম আদর্শ দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। ইসলামের প্রতি ছিল তার গভীর ভালোবাসা। ছোট ভাই সাজিদুল ইসলামকে বন্ধুর মত মনে করতেন। তার স্বপ্ন ছিল দেশ এবং ইসলামকে নিয়ে। ইসলামের বিজয়ের মাধ্যমে দেশের উন্নতি হবে এটাই ছিল তার চাওয়া। সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন তিনি। অনেক বড় স্বপ্ন থাকলেও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী পুলিশের মাধ্যমে তাকে হত্যা করে তার স্বপ্ন নস্যাৎ করে দেয়। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ 'মা তুমি চিন্তা করো না, আমি মরে গেলে তোমাকে বীরের মা বলে ডাকবে মানুষ, তুমি শহীদের মায়ের সম্মান পাবে। তোমাকে সবাই শ্রদ্ধা করবে' ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মা বাধা দিলে এ কথা বলে বেরিয়ে যান সাদ। এটাই মায়ের সঙ্গে সাদের শেষ কথা। দুই ভাইয়ের মধ্যে সাদ বড়। সাদের মা আঞ্জুমান আরা জানান, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আমার সাথেই শেষ কথা হয় আফিকুল ইসলাম সাদের। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে আমার কাছ থেকে ২০ টাকা চায় সে। তারপর সেই টাকা নিয়েই বেরিয়ে পড়ে সাদ। তখন আমি বারবার আন্দোলনে যেতে নিষেধ করি। এর কিছুক্ষণ পরই সাভার উপজেলা ও থানার মধ্যবর্তী হার্ডিঞ্জ স্কুলের সামনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আফিকুল ইসলাম সাদ। আঞ্জমান আরা আরোও বলেন, সাদ বের হওয়ার পরপরই আমার ছোট ছেলে সাজিদুলও ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এরপরই কানে ভেসে আসে গোলাগুলির শব্দ। এলাকাবাসী বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় সাজিদুলকে। সাজিদুলের কাছেই জানতে পারি সাদ আন্দোলনে গেছে। বারবার ফোনে খোঁজ নিচ্ছিলাম। দুপুরে পরপর দুবার কথাও হয়। তৃতীয়বার বিকেল ৩টার দিকে ফোন দিলে আর ফোন রিসিভ করে না। তখনই মনের ভেতর কেমন যেন করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন আসে আমার কাছে। বলে, আন্টি আফিকুল তো মাথায় আঘাত পেয়েছে, ওকে আমরা সবাই স্থানীয় ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষন পরে আবারও ফোন দিয়ে বলে, এখানে রাখেনি, আমরা ওকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, আপনারা চলে আসুন। তখন আমরা সবাই দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখি গুলিবিদ্ধ আমার ছেলে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তখন দ্রুত তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর ৮ আগস্ট সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাদ। সাদের মৃত্যুতে ভেঙ্গে গেছে একটি পরিবারের স্বপ্নও। আদরের সন্তানের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না শহীদ সাদের বাবা-মা। জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকেই সাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদী বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে নিজের সমর্থনের কথা জানান দেন। ৪ আগাস্ট ফেসবুকে পোস্ট করেন, 'কুড বি এ নিউ রাইজ'। এরপর লেখেন, 'যেই দেশের ইতিহাস রক্ত দিয়ে শুরু হয়েছে ওই ইতিহাস আবার লিখতে রক্তই লাগবে। সাদের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, 'কোথা থেকে কী হয়ে গেলো, আমি হতবাক। আমার পুরো পরিবারটি এলোমেলো হয়ে গেল। এ শোক কীভাবে কাটাব আমরা। তিনি বলেন, ৮ তারিখ সকালে যখন চিকিৎসকরা বলল সাদ আর নেই, তখন আমি সাদের সামনে গিয়ে ওকে তিনবার বাবা বাবা বলে ডাকি। কিন্তু আমার বাবা আর উঠল না। আমার ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী ছিল। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে তার গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। চাকরির প্রতি আগ্রহ না থাকলেও সাদের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পড়ার টেবিলে তার বিভিন্ন পুরস্কারের ট্রফি ও স্বপ্ন লেখা। একটি বুলেটে সবকিছুই শেষ হয়ে গেল। ট্রফিগুলো শোভা পাচ্ছে মতের অনাচে-কানাচে। সবই আছে নেই শুধু সাদ। সকাল গড়িয়ে দুপুর, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, আজও যেন প্রতীক্ষায় বাবা-মা আর ভাই। তবু ফেরে না সাদ। ছেলেকে হারিয়ে অ্যালবামের ছবি, আলমারিতে রাখা খেলার ট্রফির মাঝেই মা আঞ্জমান আরা খুঁজে নাড়ি ছেঁড়া ধন ছেলের স্মৃতি। সাদের অনুপস্থিতি মানতে পারছেন না বাবা শাফিকুল ইসলাম কিংবা আদরের ছোট ভাই সাজিদুল ইসলাম। তার ছোট ভাই সাজিদুল বলেন, 'সাদ আমার বড় ভাই হলেও তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। আমাকে অনেক ভালোবাসত সে। যেকোনো কিছুই আমার সঙ্গে শেয়ার করত। কোথাও গেলে আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেত। কেন যে আমাকে সেদিন সঙ্গে নিল না, বুঝতে পারছি না। ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। শহীদের বাবার বক্তব্য সাদ নিয়মিত মসজিদে যেত এবং নামাজের পর পড়তে বসতো। সর্বদা পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করতো। সে তার পিতা-মাতাকে সম্মান করতো। একনজরে শহীদ মো: আফিকুল ইসলাম সাদ নাম : আফিকুল ইসলাম সাদ জন্ম তারিখ : ৩০-০৩-২০০৬ জন্মস্থান : দড়গ্রাম সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ পেশা : ছাত্র, সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দ্বাদশ শ্রেণী, বিজ্ঞান বর্তমান ঠিকানা : বাসা: ডি-৮৫ এলাকা : পূর্ব কায়েতপাড়া , থানা: ধামরাই , জেলা: ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : দড়গ্রাম, সাটুরিয়া , মানিকগঞ্জ পিতার নাম : মোঃ শফিকুল ইসলাম (৫৩) সাধারণ চিকিৎসক মাতার নাম : আঞ্জমান আরা (৩৮) গৃহিণী আঘাতকারীর : পুলিশ আহত হওয়ার, স্থান ও সময় : হার্ডিঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ গেইট, ধামরাই, ঢাকা তারিখ ও সময় : ০৫-০৮-২০২৪ , বিকেল ৩:৩০ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ০৮-০৮-২০২৪ রাত ৭:৩০ টায়,এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঢাকা জানাজা : ০৯-০৮-২০২৪ দুপুর ২:৩০ কবরস্থান : দড়গ্রাম কবরস্থান, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ প্রস্তাবনা নিয়মিত মাসিক সহযোগিতা করা যায়

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  আফিকুল ইসলাম সাদ
Image of  আফিকুল ইসলাম সাদ
Image of  আফিকুল ইসলাম সাদ
Image of  আফিকুল ইসলাম সাদ
Image of  আফিকুল ইসলাম সাদ
Image of  আফিকুল ইসলাম সাদ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মোহাম্মদ নুরু

মো: আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ

ইমন মিয়া

আবদুল্লাহ আল রোমান

মো: আজিজুল মিয়া

রথিন বিশ্বাস

আনোয়ার মিয়া

মো: দুলাল

মামুন সরদার

ইসমাইল হোসেন রাব্বি

মোঃ জালাল উদ্দিন

মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo