জন্ম তারিখ: ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : প্রাইনাদি, সিদ্ধিরগঞ্জ।
“জানি না সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবনটা কিভাবে কাটাবো? সবার কাছে আমার একটাই চাওয়া— ‘আমাকে একটা চাকরির সুযোগ করে দিন। আমি আমার তিন সন্তানকে নিয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকতে চাই” শহীদ সৈয়দ মো: মোস্তফা কামাল রাজু লক্ষ্মীপুর জেলায় ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা: সৈয়দ আব্দুল হাকিম এবং মাতা: মায়া বেগম। শহীদ মুস্তফা কামাল ওয়ার্কশপের ব্যবসা করতেন। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সুখের সংসার। গ্রামের বাড়িতে বাবার কিছু আবাদী জমিও রয়েছে। তিনি তার ছেলেমেয়ে নিয়ে প্রাইনাদী সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। উপার্জনক্ষম কর্তাব্যক্তিকে হারিয়ে স্ত্রী আকলিমা আক্তার তিন সন্তান নিয়ে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে কিভাবে সামনের দিনগুলো অতিবাহিত করবেন তা নিয়ে তিনি চিন্তাগ্রস্ত। মাঝে মাঝে এইসব চিন্তা করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শিল্পাঞ্চল হিসাবে খ্যাত বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী শাসনামলে সন্ত্রাসের অভয়অরণ্যে পরিণত হয়। সন্ত্রাসীদের গডফাদার শামীম ওসমান এবং তাদের দোসরদের অপতৎপরতায় এ অঞ্চলটি বারবার নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। সন্ত্রাসের গডমাদার ও মাদার অফ মাফিয়া খ্যাত খুনি হাসিনার প্রচ্ছন্ন আশ্রয় প্রশ্রয়ে উসমান পরিবার এখানে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে। আলোচিত ত্বকী হত্যা মামলা, সেভেন মার্ডারসহ অসংখ্য জঘন্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এখানে। এখানকার মানুষ যেন সন্ত্রাসীদের কাছে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তারা মুক্তির প্রহর গুণছিল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে এখানকার জনগণ মুক্তির প্রত্যাশায় উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। ১৮ জুলাই ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে। হাসিনার দুঃশাসন হতে মুক্তি পেতে সর্বস্তরের জনতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগদান করেন। কারফিউসহ বিভিন্ন দমন পীড়ন চালিয়ে সরকার আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে। মুক্তিকামী মানুষও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। ২০ জুলাই ২০২৪ তারিখে শহীদ মোস্তফা কামাল আসরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন এমন সময় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র কর্মীরা গুলি ছুড়তে থাকে। এমন সময় একজন বৃদ্ধ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শহীদ মোস্তফা কামাল তাকে উদ্ধারে এগিয়ে যান। আওয়ামী হায়েনা লীগের সদস্যরা এই সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে একটি গুলি কপাল দিয়ে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার স্ত্রী ও এলাকার লোকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২২ শে জুলাই ২০২৪ তারিখে বিকেল পাঁচটায় মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। শহীদ রাজু সম্পর্কে স্ত্রীর মন্তব্য ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহত রাজুর স্ত্রী আকলিমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। যখন গ্যারেজ থেকে বাসায় ফিরতেন সবসময় তার হাতে কালি লেগে থাকতো। সংঘর্ষের দিন দুপুরে উনি বাসায় খেতে আসেন। খাওয়া শেষে বাইরে গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে বাড়ির ছাদে যান কী হয়েছে তা দেখতে। ছাদ থেকে দেখতে পান সড়কে অনেক মানুষ। তখন তিনিও ছাদ থেকে নেমে বাইরে চলে যান। এসময় হঠাৎ তার পাশে একজন গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি তাকে ধরতে গেলে তার মাথায় একটি গুলি লাগে।’ ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার হওয়ার পরই তিনি হামাগুড়ি দিয়ে বাসার নিচ আসেন। তখন তার পুরো শরীর ছিল রক্তাক্ত। স্বামীর এ অবস্থা দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর তার বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাত ১১টায় ডাক্তার অপারেশন করে সাধারণ ওয়ার্ডে দেয়। কিছুক্ষণ ওয়ার্ডে থাকার পর অবস্থা খারাপ হলে তাকে লাইফ সাপোর্ট দিতে আইসিউতে নিয়ে যান ডাক্তাররা। সেখানে নেওয়ার একদিন পর রাত দেড়টায় দিকে তিনি মারা যান। পরে বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করা হয়। বিলাপ করতে করতে আকলিমা আক্তার বলেন, “স্বামীর টাকা দিয়ে আমাদের পরিবার ও গ্রামে থাকা তার মা চলতেন। এভাবে চলতে কষ্ট হচ্ছিল বিধায় ২৪ জুলাই সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আল্লাহ এর আগেই তাকে দুনিয়া থেকে নিয়ে গেলো। আমার সুখের সংসার শেষ হয়ে গেলো। জানি না সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাবো? সবার কাছে আমার একটাই চাওয়া—‘আমাকে একটা চাকরির সুযোগ করে দিন। আমি আমার তিন সন্তানকে নিয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকতে চাই।” শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য নাম : শহীদ সৈয়দ মো: মোস্তফা কামাল রাজু পিতার নাম : সৈয়দ আব্দুল করিম মাতার নাম : মায়া বেগম জন্ম তারিখ : ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পশ্চিমবিঘা, ইউনিয়ন: পশ্চিম বিঘা, থানা: রামগঞ্জ, জেলা: লক্ষ্মীপুর বর্তমান ঠিকানা : প্রাইনাদি, ১ নং ওয়ার্ড প্রইনাদি, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত ছেলে-মেয়ে : এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়ে আয়েশা (১১), ছেলে রায়হান (৮) ও আবু বকর (৫) আহত হওয়ার স্থান : প্রাইনাদি, সিদ্ধিরগঞ্জ আহত হওয়ার সময়কাল : ২০ জুলাই, ২০২৪ সময়: বিকাল ৫টা ৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় : বিকাল ৫টা ৩০ মিনিট যাদের আক্রমনে শহীদ : আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা ২. শহীদের তিনটি মাসুম বাচ্চার পড়াশোনাসহ সকল ব্যয়ভার বহন করা দরকার ৩। শহীদের স্ত্রীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।