Image of মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল

নাম: মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল

জন্ম তারিখ: ১১ নভেম্বর, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি শাহাদাতের স্থান :পাটুরিয়া নৌ-ঘাট এলাকা, শিবালয়, মুন্সিগঞ্জ।

শহীদের জীবনী

"শিশু রাইসা তখন শুধু 'বাবা' ডাকতে শিখেছিলো" শহীদ মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল ২০০৩ সালের ১১ নভেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার অন্তর্গত উলাইল ইউনিয়নের রূপসা গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। তাঁর পিতার নাম মো: রইস উদ্দীন ও মাতার নাম মোছা: চায়না বেগম। তাঁর পিতা একজন কৃষক আর মাতা গৃহিণী। রফিকুল ছাড়াও রইস উদ্দীন ও চায়না বেগম দম্পতির আরেকটি কন্যা সন্তান আছে। তার নাম নুর নাহার। রূপের মাধুর্যের জন্যই হয়তো গ্রামটির নাম রূপসা। গ্রামটির অপার সৌন্দর্য একইসঙ্গে নয়নাভিরাম ও বৈচিত্রময়। রূপসার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পদ্মা নদীর স্রোতধারা। পদ্মার অববাহিকা তাই গ্রামটিকে গড়ে তুলেছে অন্য আর দশটা গ্রামের চেয়ে একটু আলাদা। এই গ্রামেই বেড়ে ওঠা শহীদ রফিকুল ইসলামের। ছোট থেকেই বেশ ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের রফিকুল ইসলাম। শান্ত হলেও অন্যায় দেখে কখনো চুপ থাকতেন না তিনি। এজন্য প্রতিবেশী থেকে সহপাঠী, সবাই খুব ভালোবাসতো তাকে। রফিকুল ইসলাম গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর ভর্তি হন স্থানীয় ওয়াহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে ২০১৮ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। সেদিনের আন্দোলন ও তাঁর শাহাদাত কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাগাতার কঠোর আন্দোলনের ফলে, স্বৈরাচারী হাসিনা গদি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে পরিপত্র জারি করে। পরবর্তীতে চাকুরীর ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটা বহাল রাখতে ২০২১ সালে অহিদুল ইসলাম সহ আরও কয়েকজন আদালতে রিট আবেদন করলে, চলতি ২০২৪ সালের ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই পরিপত্র বাতিল করে রায় দেন। রায় প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে পুনরায় একত্রিত হয়ে আন্দোলন করতে থাকে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তীব্র হলে, নরপিশাচ হাসিনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর লেলিয়ে দেয় দেশের সামরিক বাহিনী আর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের। সারাদেশে একযোগে হাসিনার সন্ত্রাসী বাহিনী, পুলিশ, র‌্য্যাব, বিজিবি আর সেনাবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে নিহত হয় শতশত সাধারণ ছাত্র-জনতা। স্থানীয় পত্রিকা গুলোর ৩১ জুলাই ২০২৪ এর তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সকল সন্ত্রাসী সংগঠন, বিজিবি, র‌্য্যাব, পুলিশের এবং সেনাবাহিনীর সম্মিলিত হামলায় সারা দেশে ২৬৬ জনের অধিক নিহত এবং ৬ হাজারের অধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ফুঁসে ওঠে দেশের আপামর জনসাধারণ। আন্দোলন দমাতে মরিয়া হয়ে উঠে স্বৈরাচারী হাসিনা, সামরিক বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয় আরও কঠোরতা অবলম্বনের। তাই পরবর্তী দিনগুলোতে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা। একপর্যায়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, ছাত্রজনতা ঘোষনা করে 'মার্চ টু ঢাকা'। ৫ আগস্ট ছাত্রদের ডাকা সেই কর্মসূচি সফল করা ও শত-শত সাধারণ মানুষ হত্যার বিচারের দাবীতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়াঘাট এলাকায় সকাল থেকেই সমবেত হতে থাকে সাধারণ মানুষ। সময় তখন দুপুর আড়াইটা, তখনও শান্তিপূর্ণভাবে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করছিলো। প্রথম থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে পুলিশ। ছাত্র-জনতাও পুলিশের সে হামলা প্রতিরোধ করতে থাকে। তাদের সাথে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে রফিকুল ইসলাম চঞ্চল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আর সাধারণ জনতাকে মনোবল না হারানোর জন্য জানান তিনি। পাশাপাশি পুলিশের রাবার বুলেট আর টিয়ারশেলে আহতদের সাধ্য অনুযায়ী সহায়তা করতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে পাটুরিয়া নৌ-ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের সামনে আত্মসমর্পণ করে অস্ত্র নামিয়ে নেয়। কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময় পুলিশ আন্দোলনরতদের দিকে তাক করে বেশ কিছু ফাঁকা গুলি করে। এতে সেখানে কোন ছাত্র-জনতা হতাহত হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য এগিয়ে যান রফিকুল ইসলাম, সাকিব সহ বেশ কয়েকজন। তাঁরা পুলিশের দিকে এগিয়ে গেলে এবার এলোপাতাড়ি গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হন রফিকুল ইসলাম চঞ্চল, কলেজ পড়ুয়া সাকিব সহ বেশ কয়েকজন। ঘাতক বুলেটটি এসে লাগে রফিকুল ইসলামের পেটে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শাহাদাতের খাতায় নতুন নাম লিখান তিনি। পরবর্তীতে উথলী হাসপাতাল থেকে আন্দোলনরত হাজার-হাজার শিক্ষার্থী আর সাধারণ জনতা সম্মুখসারি থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শহীদ রফিকুলের লাশ নিয়ে শিবালয় থানা ঘেরাও করে। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। শহীদ রফিকুল ইসলামের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলো না, তাঁর সাথে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র-জনতা। ইতোমধ্যে স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ আসে। একই সাথে স্বৈরাচার মুক্ত দেশ আর অপর দিকে কাঁধে শহীদ রফিকুলের লাশ! আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা সেদিন খুব নিকট থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলো যে, “যুগে যুগে শহীদেরা দিয়ে তাজা প্রাণ লিখে যান স্বাধীনতা, মুক্তির গান। হয় না কখনো নেওয়া মুক্তির স্বাদ শাহাদাত চান আবার আসলে আঘাত।” শহীদ রফিকুল ইসলাম স্মৃতিতে ভাস্বর শহীদ রফিকুল ইসলাম চঞ্চল সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর বৃদ্ধ বাবা বলেন, “আমার ছেলে ছোট থেকেই ন্যায়পরায়ণ আর প্রতিবাদী। সে কখনোই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি। তাই এই আন্দোলনের শুরু থেকে সে রাজপথে ছিলো। নিজের ১৫ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান আছে, তারপরেও দেশের মুক্তির আন্দোলন থেকে মুখ ফিরায়ে নেয়নি।” অন্যদিকে শহীদের মায়ের সাথে আমরা কথা বলতে গেলে সন্তান হারানোর শোকে তেমন কোন কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। কান্না বিজড়িত কন্ঠে বারবার নিজের নিরপরাধ সন্তান সহ স্বৈরাচার বিরোধী এই আন্দোলনে নিহত সকল নিরীহ মানুষ হত্যার বিচার চাইছিলেন। শহীদ পরিবারের আর্থিক অবস্থা শহীদ রফিকুল ইসলাম চঞ্চলের পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্ত। তাই পরিবারের হাল ধরতে এসএসসি পরীক্ষার পর কর্মজীবনে প্রবেশ তাঁর। গত কয়েক বছর নারায়ণগঞ্জের একটি জাহাজ নির্মাণকারী কারখানায় চাকুরি করেছেন তিনি। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিলো প্রবাসে গিয়ে দরিদ্র পরিবারটির দিন বদলের চেষ্টা করার। তাই মাসখানেক আগে ইতালি যাওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি। কথা ছিলো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভিসা প্রস্তুত হয়ে যাবে, তাই নারায়ণগঞ্জের চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে সারাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শুরু হলে তাতে অংশগ্রহণ করেন তিনি আর ঠিক বিজয়ের দিনেই শহীদ হন তিনি। শহীদের বৃদ্ধ বাবাই এখন এই অসহায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। শহীদের ছোট বোন দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। আবার শহীদ রফিকুল ইসলাম চঞ্চলের সদ্যবিধবা একজন স্ত্রী ও ১৫ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান আছে। সব মিলিয়ে এই পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে সকলেই বেশ চিন্তিত। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নাম : মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল জন্ম তারিখ : ১১ নভেম্বর ২০০৩ পেশা : ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি পিতার নাম : মো: রইস উদ্দীন পিতার পেশা ও বয়স : কৃষক, ৫৫ বছর মাতার নাম : মোছা: চায়না বেগম মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৪০ বছর স্ত্রীর নাম : শাবনুর আক্তার স্ত্রীর পেশা ও বয়স : গৃহিনী, ২০ বছর পরিবারের মাসিক আয় : ১০০০০ টাকা পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৫ জন। সন্তানের নাম, বয়স ও সম্পর্ক : মোছা : রাইসা আক্তার, ১৫ মাস বয়সী, শহীদের কন্যা ঘাতক : পাটুরিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা আহত হওয়ার স্থান : পাটুরিয়া নৌ-ঘাট এলাকা, শিবালয়, মুন্সিগঞ্জ আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক দুপুর ২টা বেজে ৪০ মিনিট নিহত হওয়ার স্থান : পাটুরিয়া নৌ-ঘাট এলাকা, শিবালয়, মুন্সিগঞ্জ। নিহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ৩ টা শহীদের কবরের অবস্থান : রুপসা বাইতুল জান্নাত কবরস্থান, শিবালয়, মানিকগঞ্জ ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: রুপসা, ইউনিয়ন: উলাইল, উপজেলা: শিবালয়, জেলা: মানিকগঞ্জ সহযোগিতা সংক্রান্ত এক বা একাধিক প্রস্তাবনা প্রস্তাবনা-১: শহীদের ১৫ মাস বয়সী এতিম শিশু ও স্ত্রীর জন্য মাসিক ভিত্তিতে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা প্রস্তাবনা-২: শহীদের দরিদ্র কৃষক পিতাকে এককালীন কিছু অর্থ সহযোগিতা করা প্রস্তাবনা-৩: শহীদের কলেজ পড়ুয়া বোনের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

সজল মিয়া

কোরমান শেখ

সাজ্জাদ হোসেন সজল

শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন

মো: আলামিন

মেহেদী হাসান

মো: সোহেল

মো: সামিউ আমান নুর

মো: ইমন

জাহাঙ্গীর আলম

মো: জাকির হোসেন

রিয়াজুল তালুকদার

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo