জন্ম তারিখ: ৩ জানুয়ারি, ১৯৭০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা :ব্যবসায়ী শাহাদাতের স্থান :যাত্রাবাড়ি
আবদুর হান্নান যাত্রাবাড়িতে ফার্নিচারের ব্যবসা করতেন। তার পিতা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুস সোহরাব এবং মাতা মৃত নুরজাহান বেগম। আবদুল হান্নান স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে যাত্রাবাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। আবদুর হান্নান শুরু থেকে ছাত্রদের সমর্থন দিয়ে গেছেন। তিনি তার পরিবারসহ প্রতিদিনের সংবাদ উৎসুক হয়ে শুনতেন। ৫ আগস্ট জনতার সাথে অংশ নেন। ঐদিন বিকাল ৪.২০ মিনিটের দিকে যাত্রাবাড়ি এলাকায় ঘাতক পুলিশের দ্বারা বুকে গুলিবিদ্ধ হন। গোলাগুলির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-জনতা রিকশায় করে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরদিন তিনি ৫ আগস্ট বিকাল ৪.৩০ মিনিটে মৃত্যু বরণ করেন। যেভাবে শহীদ হলেন আবদুর হান্নান জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৯৭০ সালে। জন্মের পরে জ্ঞান হতেই তিনি অনুভব করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দূর্ভিক্ষ। যে দূর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছিল তৎকালীন স্বৈরশাসক শেখ মুজিবের অদক্ষতা, দূর্বল শাসন ব্যবস্থা এবং মুজিবসহ তার মন্ত্রী-এমপিদের লুটপাটের ফলে। দূর্ভিক্ষে ক্ষুধার জ্বালায় সন্তান বিক্রি করে দেয় অভাবীরা। রাস্তায় ডাস্টবিনের পচা খাবার কুড়িয়ে খায়। ক্ষুধায় খাবার না পেয়ে বমি খেয়েছে বলে তখনকার পত্রিকায় নিউজ হয়েছিল। এমনকি ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে খলিলুল্লাহর মতো নরখাদকের জন্ম হয়। যে হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে লাশ খাওয়া শুরু করে দিয়েছিল। কবি রফিক আজাদ এরকম বীভৎস মুহুর্তে মুজিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ভাত দে হারামজাদা! নইলে মানচিত্র চিবিয়ে খাব’! ১৯৭৫ সালে মুজিব ও তার দলের বিনাশ হলে দেশের মানুষ কিছুটা স্বস্তি লাভ করে। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দেশ উন্নতির দিকে ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। ১৯৯৬ সালে আবারো মুজিবের সেক্যুলার দল আওয়ামী লীগ ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মিথ্যুক সাইকো খুনি হাসিনা ও তার ঘাতক বাহিনীর অত্যাচার সাধারণ মানুষের মত জনাব আবদুর হান্নান সাহেবও অবলোকন করেছিলেন। নির্যাতিত হয়েছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কোটা বিরোধী আন্দোলন স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। ১৮ জুলাইতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অসংখ্য ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। প্রতিবাদে ১৯ জুলাই জুমার পরে ছাত্র-জনতা আবারো রাজপথে নেমে আসে। হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে ঘাতক বাহিনী চারদিক থেকে হামলা করে। ফলে আহত ও শহীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আবদুর হান্নান শুরু থেকে ছাত্রদের সমর্থন দিয়ে গেছেন। তিনি তার পরিবারসহ প্রতিদিনের সংবাদ উৎসুক হয়ে শুনতেন। ৫ আগস্ট জনতার সাথে অংশ নেন। হাসিনার পদত্যাগের খবরে আনন্দে রাস্তায় নামেন। ভেবেছিলেন এবার বুঝি মুক্তি মিললো। দেশ থেকে ফেরাউন সরকার বিতাড়িত হলো। হাসিনা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে লাশ ফেলতে কখনো দেরি করতোনা। তার বিরোধীদের খুন করতে তার মন সামান্যও কাপেনা। তার নির্দেশ ছিল আন্দোলন দমন করতে প্রয়োজনে রাজপথে সবাইকে হত্যা করতে হবে। তার এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে তারই নিয়োজিত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং বিতর্কিত সংগঠন ছাত্রলীগ ছাত্র-জনতার উপরে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। ঐদিন বিকাল ৪.২০ মিনিটের দিকে যাত্রাবাড়ি এলাকায় ঘাতক পুলিশের দ্বারা বুকে গুলিবিদ্ধ হন। গোলাগুলির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-জনতা রিকশায় করে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরদিন তিনি ৫ আগস্ট বিকাল ৪.৩০ মিনিটে মৃত্যু বরণ করেন। কাজির দরগাহ ধলাপুর কবরস্থানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। কেমন আছে তার পরিবার আবদুর হান্নানের পিতা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুস সোহরাব এবং মাতা মৃত নুরজাহান বেগম। আবদুল হান্নান স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে যাত্রাবাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার স্ত্রী কমলা আক্তার গৃহিণী। ছেলে তানভীর (২৬) সোনারগাঁও টেক্সটাইল কলেজের স্নাতক ৩য় বর্ষের ছাত্র এবং মেয়ে সোহানা (২১) এস এস সি পাস। উল্লেখ্য যে তার সন্তান তানভীর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শামীল হয়েছিলেন। বর্তমানে তার পরিবারে কোন আয় নেই। আত্মীয়ের বক্তব্য সন্তান বলেন, বাবা আমাদের সাহস দিতেন। ন্যায়ের পক্ষে থাকতেন। আমরা তার হত্যার বিচার চাই। এক নজরে নাম : মো: আবদুর হান্নান পেশা : ব্যবসায়ী জন্ম তারিখ : ৩ জানুয়ারি ১৯৭০ পিতা : আবদুর সোরাব মাতা : নুর জাহান বেগম আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : যাত্রাবাড়ি আক্রমণকারী : যুবলীগের সন্ত্রাসী দাফন করা হয় : কাজির দরগাহ ধলাপুর কবরস্থানে বর্তমান ঠিকানা : ৬০/৪৩-১ ধলপুর, ফরিদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : ঐ ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা ২. সন্তানদের লেখা-পড়া ও চাকুরীতে সহযোগিতা প্রদান করা