জন্ম তারিখ: ১০ জুন, ২০০৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা :ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : এসবি গার্মেন্টস, দেলপাড়া, ভূইগর, নারায়ণগঞ্জ
আওয়ামী লীগের সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক ক্ষমতালোভী গণখুনি হাসিনা সরকারের কাছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিল এদেশের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু রক্ত পিপাসু হাসিনা সে যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে দলীয় পুলিশ বাহিনী দ্বারা গুলি করে নিরীহ ছাত্রদের হত্যা করে। তেমনই এক শহীদ ছাত্র মো. আদিল। তিনি ঢাকার মীরহাজিরবাগে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ২০০৮ সালের জুন মাসের ১০ তারিখে ব্যবসায়ী পিতা মো: আবুল কালাম ও গৃহিণী মা আয়েশা আক্তারের কোল জুড়ে আগমন ঘটে তৃতীয় সন্তান মো: আদিলের। তার বসবাস নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার অন্তর্গত কুতুবপুর ইউনিয়নের ভোঘাড়ি গ্রামে পরিবারের সাথে। তার বড় দুই ভাই আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৬) মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন এবং বায়োজিদ আহমদ (২১) পড়ছেন পলিটেকনিকে। তারাও অত্যন্ত মেধাবী। পরিবারের ছোট ছেলে হওয়ায় বাবা-মায়ের পরম আদরের ছিলেন মোহাম্মদ আদিল। ছিলেন দুই ভাইয়ের চোখের মণি। শহীদ হলেন যেভাবে মো. আদিল প্রথমে বাড়িতে থেকে মাদ্রাসায় যাতায়াত করতেন। জুলাইয়ের শুরুতেই মাদ্রাসার হোস্টেলে ভর্তি হন। কেননা সামনে ছিল তার দাখিল পরীক্ষা। কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন তুঙ্গে ওঠে, তখন তিনি হোস্টেল ছেড়ে বাড়িতে যান। ঘটনার দিন ১৯ জুলাই ২০২৪। সারাদেশে চলছে কারফিউ, অন্যদিকে ছাত্রদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি। এমতাবস্থায় ঐদিন বিকাল ৩:৩০টায় আদিল নারায়ণগঞ্জের ভূইগর এলাকার এসবি গার্মেন্টসের সামনে অন্যান্য ছাত্র-জনতার সাথে সমবেত হন। হঠাৎ মাথার উপর দিয়ে বাজপাখির মতো উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টার থেকে একটি বুলেট এসে আদিলের বুকের ডানপাশে লেগে বুকটা এফোঁড়ওফোঁড় করে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। স্বৈরাচারের নির্মম-নিষ্ঠুর বুলেটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই শাহাদাতবরণ করেন আদিল। নিভে যায় বাবা-মায়ের সবচেয়ে আদরের ধন বুকের মানিকের জীবন প্রদীপ! আদিল সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য শহীদ আদিল ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় তিনি দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করতেন। ২০২৪ সালের গণিত অলিম্পিয়াডে তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে সনদ ও ক্রেস্ট লাভ করেন। পড়াশোনায় যেমন মেধাবী ছিলেন, তেমনি ব্যবহারেও ছিলেন নম্র-ভদ্র ও সচ্চরিত্রবান। তার শিক্ষক, গুরুজন আর সহপাঠীরা তার ব্যবহারে ছিলেন মুগ্ধ। তারা তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। তার অকাল মৃত্যুতে তারা অত্যন্ত মর্মাহত হন। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে নেমে আসে শোকের কালো ছায়া। আদিলের সামনে ছিল দাখিল পরীক্ষা। তাই জুলাইয়ের শুরুতে মাদ্রাসার হোস্টেলে ওঠেন, যাতে একমনে-একধ্যানে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারেন। ২ জুলাই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন, "চলে যাচ্ছি নেটওয়ার্কের বাইরে, দেখা হবে ৭ মাস পর।" কিন্তু মেধাবী সেই আদিল নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেলেন সারা জীবনের জন্য। খুনি হাসিনা মেধাবী সম্ভাবনাময় এই কিশোরকে বাঁচতে দিলো না। পরিবারের ছোট ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা নির্বাক-নিস্তব্ধ। বড় ভাই দুজন আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে বিমূঢ়। তাদের হৃদয়ে অসীম শূন্যতা আর করুণ হাহাকার। তার মৃত্যুর খবরে সবাই হয়ে পড়ে শোকাহত। জনমদুখিনী মায়ের কলিজা ছিঁড়ে বের হয় রোনাজারি। বাবার বুকটা করে ওঠে হাহাকার। তার নিথর দেহটা বাড়িতে নিলে তৈরি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চারিদিক থেকে ছাপিয়ে উঠে আহাজারি। বারবার মূর্ছা যান মা। চোখের পানিতে বুক ভেসে যায় বাবার। বড় ভাই দুটোর কলিজা ছেঁড়া কান্নায় প্রকৃতি ও যেন কেঁদে ওঠে সকরুণ সুরে। নিথর সজলের মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে ব্যথাতুর গান গেয়ে যায় বনের পাখিরা! কেঁদে ওঠে গাছের পাতারা! পাড়াপড়শী, আত্মীয়-স্বজন বারবার এসে চোখ মুছে যায়! কী এক বেদনাবিদুর সন্ধিক্ষণ! সকল ভালোবাসা আর মায়া কাটিয়ে অবশেষে আদিল প্রবেশ করেন নিজ গ্রামের অনন্ত জীবনের মাটির ঘরে! মহল্লার গোরস্তানে! শহীদ আদিলের সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল নাম : মো: আদিল জন্ম তারিখ : ১০.০৬.২০০৮ পিতা : মো: আবুল কালাম মাতা : আয়েশা আক্তার ঠিকানা : গ্রাম- ভোঘাড়ি, ইউনিয়ন, কুতুবপুর, থানা- ফতুল্লা, জেলা নারায়ণগঞ্জ পেশা : ছাত্র প্রতিষ্ঠান : তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা (মীর হাজিরবাগ) পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন (বাবা, মা ও দুই ভাই) পরিবারের আয়ের উৎস : পিতার ব্যবসা (মাসিক ২০০০০) শহীদ হওয়ার স্থান : এসবি গার্মেন্টস, দেলপাড়া, ভূইগর, নারায়ণগঞ্জ হত্যাকারী পিশাচ : পুলিশ ও র্যাব আঘাতের ধরন : গুলিতে বুক এফোঁড়ওফোঁড় আহত ও শাহাদাতের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪ বিকাল ৩:৩০ মিনিট কবরস্থান : নিজ এলাকার গোরস্থান। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং প্রয়োজনে সহযগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া