জন্ম তারিখ: ১ জুলাই, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা :ছাত্র , শাহাদাতের স্থান :শনির আখড়া।
শহীদ মেহেদী হাসান দরিদ্র বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আদি নিবাস মুন্সীগঞ্জের রায়পাড়া গ্রামে হলেও বেড়ে ওঠেন নারায়ণগঞ্জের ঝাউচর গ্রামে। পিতা-মাতা ছেলেকে নিয়ে নানাবিধ স্বপ্ন দেখতেন। চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার বানাতে। শহীদের পিতা স্থানীয় একটি কারখানায় তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি। শহীদ মেহেদী হাসানের নানা বাড়ি থেকে সামান্য কিছু জায়গা-জমি পেয়ে সেখানে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। আর্থিক অনটন ছিল নিত্য সঙ্গী। তবুও এক বুক আশা নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন একটি বেসরকারি পলিটেকনিকে। শহীদ মেহেদী হাসান কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য টিউশানি করতেন। নিজ খরচের পর পরিবারকেও যৎসামান্য দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন গত ২০ জুলাই ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হন। সেই সাথে নিভে যায় বাবা-মায়ের স্বপ্ন-আশার আলো। ঘটনার বিবরণ গত ১৮ জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেন। অন্যদিকে স্বৈরাচার সরকারও আন্দোলকে প্রতিহত করার জন্য কারফিউ জারি করে। ২০ জুলাই দুপুর ১২ টায় শহীদ মেহেদী হাসান শনির আখড়া ডাচবাংলা ব্যাংকের সামনে অন্যান্য ছাত্র-জনতার সাথে সমবেত হন। সে সময় টহলরত র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে দুটো গুলি এসে তাঁর বুকের বাম পাশে এবং মাথায় আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মেহেদী হাসান শাহাদাত বরণ করেন। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শনির আখড়া এলাকা। শহীদ মেহেদী হাসানের বাবা বলেন, “গত ২০ জুলাই শনিবার সকালে প্রতিদিনের মতো আমি কাজে চলে যাই। সন্ধ্যায় ফিরে মেহেদীকে বাসায় না দেখে তার মোবাইলে ফোন দিই। অনেক বার ফোনে রিং হওয়ার পর এক ছেলে রিসিভ করে জানায় মেহেদী আর নেই। দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি রাস্তায় পড়ে আছে আমার বাবার নিথর দেহ। মাথায় গুলি লাগায় মগজ বের হয়ে গেছে। পলিথিনে ভরে ছেলের নিথর দেহটাকে অনেক কষ্টে বাড়ি নিয়ে আসি। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় শনিবার দিবাগত রাত ২ টায় নামাজে জানাজা দেই আমার বাপজানরে।” বুকফাটা কান্না চেপে তিনি আরো বলেন, “আমার ছেলেকে যারা এমন নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি হবেই।” শহীদ মেহেদীর মা শিল্পী বেগম ছেলের কলেজের আইডি কার্ড হাতে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “অনেক স্বপ্ন ছিল আমাদের। কেন মারলো ওরা আমার ছেলেকে? কী দোষ করেছিল মেহেদী? আমরা এখন কী নিয়ে বাঁচব?” ঘটনার পর থেকে ছেলের কথা মনে হলেই বুকফাঁটা চাপা কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ মেহেদীর বাবা মো: ছানাউল্লাহ। স্বৈরাচার শুধু একজন সম্ভবনাময় তরুণকেই কেড়ে নেয়নি; কেড়ে নিয়েছে শহীদের পিতা-মাতার স্বপ্ন, আনন্দ, বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন। শহীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নাম : মেহেদী হাসান জন্ম : ০১.০৭.২০০৩ পিতা : মো: ছানাউল্লাহ, পিতার পেশা ও বয়স, দিনমজুর, ৫০ বছর মাসিক আয় : ১০,০০০ টাকা আয়ের উৎস : দিনমজুর মাতা: মোসা: শিল্পী বেগম মায়ের পেশা : গৃহিণী বোন: নির্ঝনা আক্তার বয়স: ২৪ (বিবাহিতা) জন্মস্থান: মুন্সীগঞ্জ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: গজারিয়া ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড ট্যাকনোলজি স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বড় রায়পাড়া, থানা: গজারিয়া, জেলা: মুন্সীগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা: গ্রাম: ঝাউচর, ওয়ার্ড নং: ৯, ইউনিয়ন: পিরোজপুর, উপজেলা: সোনারগাঁও, জেলা: নারায়ণগঞ্জ শহীদ হওয়ার স্থান : শনির আখড়া শহীদ হওয়ার তারিখ : ২০ জুলাই-২০২৪ দুপুর ১২টা আঘাতের ধরন : র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া বুলেটের আঘাতে বুকের বাম পাশ এবং মাথা ঝাঁঝরা হয়ে যায় প্রস্তাবনা ১. পরিবারটির স্থায়ী আয়ের উৎস তৈরি করে দেওয়া দরকার