Image of মো: তুহিন

নাম: মো: তুহিন

জন্ম তারিখ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :পড়াশোনার পাশাপাশি অটো রিকশা চালাতেন, শাহাদাতের স্থান :উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে।

শহীদের জীবনী

শহীদ মোহাম্মদ তুহিন ২০০৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গাজীপুর জেলার গাছা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ পিতা বাবুল শেখ একজন অটো রিক্সা চালক। মাতা মোছা: তাসলিমা গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ২০২৪ সালের ২০ জুলাই, জালিমের বুলেটের আঘাতে তিনি শহীদ হন। পেশা ও পারিবারিক অবস্থা তুহিন গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তুহিন পড়ালেখার পাশাপাশি অটো চালাতেন। তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। তার দুই ভাই ও এক বোন আছে। তাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই। ভাড়া বাসায় থাকার সামর্থ না থাকায় তারা সরকারি জমিতে টিনের তৈরি ঘরে বসবাস করেন। তাঁর ছোট ভাই হাসান ৭ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। বড় ভাই তুষার সৌদি প্রবাসী। বড় বোন সুমি আক্তার অবিবাহিত। পরিবার ঋণগ্রস্ত। পরিশোধের সামর্থ নেই। শহিদের বিবরনী দেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামের অংশীদার রিক্সা চালক, ভ্যান, চালক সাধারণ পেশাদার মানুষ। রাজপথে থেকে সকল আন্দোলনে প্রত্যক্ষ করেছে তারা। নায্য দাবী আদায়ের আন্দোলনে তাদের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাদেরি একজন ছিলেন শহীদ তুহিন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে, ২০ জুলাই ২০২৪ সালের শনিবার শহীদ মোহাম্মদ তুহিন ঢাকা ময়মনসিংহ গাছা রোডের মাথায় বোর্ড বাজার নামক স্থানে যাত্রী পরিবহনের জন্য অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশ ও বিজিবি রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থিত মানুষের ভিড়ের দিকে লক্ষ করে গুলি ছুড়তে থাকে। এই সময় ঘাতক পুলিশ সন্ত্রাসী বিজিবির এলোপাথাড়ি একটি গুলি তুহিনের গলায় বিদ্ধ হয়। অটো থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তুহিন। মুহুর্তেই গলার নলি ছিদ্র হয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় জনতা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষনে জীবন বায়ু শেষ হয়ে যায় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আনুমানিক বিকাল পাঁচটায় তার মৃত্যু হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও র্প্রতিবেশীদের অনুভূতি সোহাগ মিয়া (২৭), (চাচাতো ভাই) বলেন, তুহিন পড়াশুনার পশাপাশি অটোরিক্সা চালাতো। সে অনেক ভালো ছেলে ছিলো। আমরা তার হত্যাকারীর সঠিক বিচার চাই। তুহিন এলাকায় নম্র ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত ছিলো। তার মৃত্যুতে পুরা এলাকার লোকজন শোকাহত হয়। এলাকাবাসী তার হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন। দাফন শহীদ তুহিনের নিজ এলাকাতেই তাঁর দাফন-কাফন সম্পন্ন হয়। আওয়ামী সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে তুহিনের মত এমন আরও হাজারও মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। গুম হতে হয়েছে কত শত নিরঅপরাধ মানুষকে। আওয়ামী দুঃশাসনের কয়েকটি খন্ড চিত্র তুলে ধরা হল বিচার বহির্ভূত হত্যা ও ক্রসফায়ার বিগত দিনগুলোতে ক্রসফায়ারের যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে যদি বলা হয় গত ১৬ বছর ছিল বিচার বহির্ভূত হত্যার বছর তাহলে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না। কারণ গত ১৬ বছরে র‌্যাব-পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হন প্রায় ৪ হাজার জন। এটা একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য বিশাল হুমকি। বাংলাদেশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর গঠন করা হয়। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রসফায়ার, অপহরণ বা গুমের অভিযোগ ওঠায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তারা। আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করে এই ফোর্সের উপর। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড। এটি একমাত্র হত্যাকাণ্ড যার বিচার করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। আর কোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিচার তো দূরের কথা মামলাই নেওয়া হয়নি। মেজর সিনহা সেনাবাহিনীর পদস্থ সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় এর বিচার হয়েছে। ক্রসফায়ার কিং খ্যাত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ছিলেন একজন মাস্টারমাইন্ড কিলার। সে ক্রসফায়ারের নামে বিনা বিচারে ১৬১ জন মানুষকে হত্যা করেছে। মেজর সিনহা হত্যা মামলায় তার ফাঁসীর আদেশ হয়েছে। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন। আওয়ামী সরকার ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করছে রাজনৈতিক বিরোধীদের উপরে। নিহতদের মধ্যে মধ্যে অধিকাংশই রাজনৈতিক কর্মী। রাজনৈতিক নেতারা সরকার কর্তৃক গুম ও খুনের শিকার হন। বিরোধী দলের লোক খুন করার নির্দেশ সরাসরি সরকার দিয়ে থাকে বলে সে ঘটনার বিচার তো দুরূহ মামলাই নেয়া হয় না। গুম করে আয়না ঘরে বন্দী বাংলাদেশে নাগরিকদের গুম করে ফেলার এক নিষ্ঠুর সংস্কৃতি চালু হয়েছে গত ১৬ বছরে। গুমের এই বিভীষিকা বাংলাদেশকে নিয়ে যায় আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে। গত ১৬ বছরে প্রায় হাজার খানেক জন মানুষ বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গিয়েছে। এদের অধিকাংশের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। স্বৈরাচার পতনের পর এদের অনেকের সন্ধান মেলে আয়না ঘর থেকে। ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান তাঁর তিন সঙ্গীসহ নিখোঁজ হয়েছিলেন গত ১০ জুন ২০২১। আবু ত্বহার মতো রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বা অপহরণের পর গত ১৬ বছরে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন অনেকেই। অপহৃত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশকে অপহরণের পর উদ্ভ্রান্ত’ অবস্থায় কোনো সড়কে পাওয়া যায়। কিন্তু ফিরে আসার পর অনেকে কোনো কথা মনে করতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি কাউকে গ্রেফতার করে তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে উপস্থাপন করার কথা। অথচ গত দশ বছরে যেসব রাজনৈতিক ব্যাক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের বেশিরভাগকেই তিন-চারদিন গুম করে রেখে তারপর আদালতে হাজির করা হয়েছে। এই সংখ্যা লক্ষাধিক। আর যেসব ব্যক্তি গুম হয়েছেন বা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন তাদের কথাতো বাদই। অ্যানালাইসিস বিডির জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে এদেশে রাজনৈতিক গুমের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (জঅড) জড়িত। তাদের মর্জি মতো এদেশের বিরোধীদলীয় রাজনৈতিকদের গুম, ক্রসফায়ার ও গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৬ সালে গুম হওয়া ৯৭টি ঘটনার মধ্যে জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে যথাক্রমে আমান আজমী, মীর আহমেদ বিন কাসেম ও হুম্মাম কাদের চৌধুরীর কথা বেশ আলোচিত। হাসিনার পতনের পর সাবেক সেনা সদস্য আবদুল্লাহিল আমান আযমী ৯ বছর পর আয়না ঘর থেকে মুক্তি পান। গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয় গণ মাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়। সরকারের কীর্তি কলাপ জনগনের সামনে তুলে ধরায় । ২০১৩ সালে, দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, সিএসবি, ইসলামিক টিভির পর একসঙ্গে ৩৫টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেয়। সত্য প্রকাশে জেল খাটতে হয় অনেক সাংবাদিককে। সাংবাদিকদের মারধর, হুমকি, হত্যা এসব ছিল কমন ঘটনা। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পত্তি হত্যার বিচার হয়নি। ডিবি হেফাজতে নিয়ে অত্যাচার ডিবি অফিস ছিল টর্চার সেল। আর এই টর্চার সেলের গড ফাদার ছিল ডিবি হারুন। আওয়ামী সরকারের মদদ পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে ডিবি হারুন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিল একএক করে তুলে এনে হাজির করা হয় ডিবি হারুনের টর্চার সেলে। সেখানে তাদেরকে অকথ্য নির্যাতন করা হত। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, তা সহ্য করতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে যায় অনেকে। সেন্স ফিরে আসলে তাদেরকে আবার নির্যাতন করা হত। অস্ত্র ঠেকিয়ে জীবন কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পানিতে মরিচের গুড়া মিশিয়ে তারপর পান করতে দেওয়া হত। অন্ড কোষে পা দিয়ে লাথি মারত। উপর দিক করে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে পেটানো হত। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত এবং পা ভেঙ্গে দেওয়া হত। শুধু তাই নয় ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হত। এসবের মাধ্যমে তাদেরকে আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাপ প্রয়োগ করত। শিবির ট্যাগ দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতন আওয়ামী সরকারের আমলে শিবির ট্যাগ দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতন করা ছিল একটি কমন ঘটনা। ক্যাম্পাসগুলোতে সরকারের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠে। ছাত্র রাজনীতি শব্দটাকেই তারা ঘৃণার বস্তুতে পরিণত করে। হলগুলোতে ছাত্রলীগ মাদকের অভয়ারণ্য বানিয়ে ফেলে। সীট বাণিজ্য, হলে খেয়ে টাকা না দেওয়া, টাকা চাইতে আসলে মারধর করা ছিল তাদের কাছে দুধ ভাত। কাউকে নামাজ পড়তে দেখলে শিবির সন্দেহে টর্চার সেলে নিয়ে টর্চার করত। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ দেশকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ছাত্রলীগের রোষানলে পড়ে। শিবির ট্যাগ দিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ছাত্রলীগের টর্চারে সেলে। সেখানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে অসহায় আবরারের উপর। রাতভর নির্যানের পর সকালে তাঁর মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়। ছাত্রলীগের রোষানলের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বুয়েটের মেধাবী পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম। ছাত্রলীগ তাঁর উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে শরীরের হাত পা ভেঙে দেয়। এরকম হাজারও অপরাধের সাথে জড়িত ছিল স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনা ও তার দোসররা। একনজরে শহীদ তুহিন নাম : শহীদ মো: তুহিন পেশা : পড়াশোনার পাশাপাশি অটো রিকশা চালাতেন জন্ম তারিখ : ০৯-০৯-২০০৫ বয়স : ১৮ বছর পিতা : জনাব মো: বাবুল হোসেন মাতা : মোছা: তাসলিমা আহত হওয়ার স্থান : ঢাকা ময়মনসিংহ গাছা রোডের মাথায় বোর্ড বাজার নামক স্থানে শাহাদাতের তারিখ : ২০ জুলাই ২০২৪ শনিবার শাহাদাতের স্থান : উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে। স্থায়ী ঠিকানা : গাছা ইউনিয়ন, গাজীপুর বর্তমান ঠিকানা : ঐ প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারে মাসিক সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদ সহোদরের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: তুহিন
Image of মো: তুহিন
Image of মো: তুহিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: রশীদ

মোঃ ছায়াদ মাহমুদ খান (অন্তর)

খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ

আরাফাত মুন্সি

মো: আবদুল্লাহ ইবনে শহীদ

শফিকুল ইসলাম

আব্দুল গণি

মো: স্বজন

নাফিসা হোসেন মারওয়া

মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল

মো: জুয়েল মিয়া

জাকারিয়া হাসান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo