জন্ম তারিখ: ৯ জুলাই, ১৯৯৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা :গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান :শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল হাসপাতাল।
‘একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে অসহায় পরিবার’ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের শাখাহাতী গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে ১৯৯৭ সালের ৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন তেজস্বী বীর শহীদ জুয়েল রানা। অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল থাকায় কোনরকম প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর পরিবারের দায়িত্ব এসে বর্তায় শহীদের উপর। পরিবারের হাল ধরতে বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পরবর্তীতে রাজধানী শহরে আসেন মহাবীর জুয়েল। বিভিন্ন কারখানা, ফ্যাক্টরি ঘুরে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইন্টারস্টফ এ্যাপারলেস লিমিটেড গার্মেন্টসে সুইং, ইনপুট ম্যান হিসেবে যোগদান করেন। পিতা-মাতার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তাঁর উপার্জনেই চলতো দরিদ্র কৃষক পরিবারটি। মা, বাবা, স্ত্রী এবং অবুঝ দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ছিল তাদের সংসার। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে তাঁর অংশ গ্রহণ ছিল প্রশংসনীয়। পিতা জনাব মোনতাজ উদ্দিন (৫১) পেশায় কৃষক। জননী জামেলা খাতুন একনিষ্ঠ গৃহিণী। ২৪ এর শহীদ জুয়েল মোছা: দুলালীর সাথে ঘর বেঁধেছিলেন। একে একে তাঁদের সংসার জুড়ে জন্ম নিয়েছে দুটি কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে জাব্বাতি আক্তার (৮) আলহেরা সালাফিয়া মাদ্রাসার ২য় শ্রেণী এবং কনিষ্ঠ কন্যা জিনাত খাতুন (৫) বারোপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীতে অধ্যায়নরত রয়েছে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা মহাবীর জুয়েল রানা স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে গাজীপুরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শহীদের গ্রামের বাড়িতে চার শতাংশ বসতি জমি রয়েছে। বর্তমানে পরিবারে তিন লক্ষ সমপরিমাণ টাকা ঋণ রয়েছে। একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে বাড়ি ভাড়াসহ সন্তানদের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ যোগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে কারণে শহীদ পরিবার গাজীপুর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট (৫ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট ২০২৪) ৫ জুলাই: মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে হাইকোর্ট। ৬ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। ৯ জুলাই: কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তারা। বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর স্মারকলিপি দেয়। কোটা বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়। ১ জুলাই: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহার আহবান জানানো হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। ২ জুলাই: ঢাবির ছাত্ররা মিছিল নিয়ে এক ঘন্টা শাহবাগ অবরোধ করে রাখে। জাবির ছাত্ররাও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করে। ৩ জুলাই: ঢাবির ছাত্ররা শাহবাগ মোড়ে দেড় ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখে। ময়মনসিংহে রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ করে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ৪ জুলাই: প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ 'নট টুডে' বলে আদেশ দেন। পরের সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানানো হয়। ছাত্ররা ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে ৫ ঘণ্টা। ৫ জুলাই: এই দিন শুক্রবারেও চট্টগ্রাম, খুলনা ও গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারী ছাত্ররা। ৬ জুলাই: দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের দিনের মতোই বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ধর্মঘট এবং সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। নাম দেয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’। ৭ জুলাই : বাংলা ব্লকেডে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। ৮ জুলাই: ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩টি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ৬টি মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। সারাদেশের ছাত্রদের নিয়ে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামে ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়। ৯ জুলাই: হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪ ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচি 'বাংলা ব্লকেড' পালন করা হয়। পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা 'বাংলা ব্লকেড'-এর ঘোষণা দেয়া হয়। ১০ জুলাই : কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ আপিল বিভাগের। ১১ জুলাই: পুলিশের বাধার মুখেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ পালন করেন আন্দোলনকারীরা। ১২ জুলাই: শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। ১৩ জুলাই: তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের এখন কিছু করার নেই। ১৪ জুলাই: রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয়। শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে রাত নয়টার দিকে ঢাবির বিভিন্ন হলে শ্লোগান ওঠে, তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! ১৫ জুলাই: ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলে, আন্দোলনকারীদের 'রাজাকার' স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম মন্তব্য করে, যাঁরা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বো। ১৬ জুলাই: পুলিশের গুলিতে রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত, ফারুক ও ঢাকায় সবুজ আলী ও শাহজাহান শাহদাতবরণ করেন। সাদ্দাম আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলে, আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল। ১৭ জুলাই: ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়িত করে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করে সাধারণ ছাত্ররা। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল পন্ড হয়ে যায়। ১৮ জুলাই: ছাত্রদের ঘোষণা অনুসারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হয়। সারাদেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলে হানাদার আওয়ামী পুলিশ বাহিনীর হামলা। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা এদিন আন্দোলনের মূল হাল ধরে। মুগ্ধসহ মোট ৪০ জন শাহদাতবরণ করেন। ১৯ জুলাই: শিক্ষার্থীদের 'কমপ্লিট শাটডাউন' বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়। ২০ জুলাই: দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন। সাধারণ ছুটি ঘোষণা। পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে মোট ৭১ জন শাহদাতবরণ করেন। প্রধান সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক তিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আট দফা দাবি পেশ। সমন্বয়কদের আরেকটি অংশ ৯ দফা দাবি পেশ করে। ২১ জুলাই: কোটা সংস্কার করে ৭% কোটা রেখে রায় প্রদান করে আদালত। এদিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ২২ জুলাই: কোটা সংস্কার করে প্রকাশিত রায়ের প্রজ্ঞাপনের প্রস্তুতি চলে। প্রতিদিন মানুষ হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। তবে আন্দোলন স্তিমিত হতে থাকে। এদিনেও ১০ জন শাহদাতবরণ করেন। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন আগের আহত হওয়া। ২৩ জুলাই: কোটাপ্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি। সরকার কয়েক হাজার মামলা দিয়ে গণগ্রেফতার শুরু করে। ২৪ জুলাই: কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া গেছে। ২৫ জুলাই: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কোটা সংস্কারের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিকে তাঁরা চূড়ান্ত সমাধান মনে করছেন না। যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। ২৬ জুলাই: এলাকা ভাগ করে চলছে 'ব্লক রেইড'। সারা দেশে অভিযান। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা। গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৬ হাজার ২৬৪। সাদা পোষাকে ডিবি হারুনের সন্ত্রাসীরা হাসপাতাল থেকে ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই: ১১ দিনে গ্রেপ্তার ৯ হাজার ১২১ জন। আতঙ্কে মানুষ ঘরছাড়া। ছাত্রনেতাদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করতে থাকে ডিবি হারুন ২৮ জুলাই: মোবাইল ইন্টারনেট ১০ দিন পর সচল করা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেয় ডিবি হারুন। ডিবি হারুন জোর করে গান পয়েন্টে ছাত্রনেতাদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি আদায় করে। ২৯ জুলাই: ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য খুনী হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের মিটিং-এ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ৩০ জুলাই: হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল করে ছাত্র ও শিক্ষকরা। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি, স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান। ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙিয়েছেন সারাদেশের মানুষ। এদিকে গণহত্যাকারীরা কালো ফ্রেম দিয়েছে। তবে সেটা নিতান্তই নগণ্য। নাটক ও সিনেমা সংশ্লিষ্ট মানুষরাও খুনী হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন। ৩১ জুলাই : ছাত্ররা 'রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস' কর্মসূচি পালন করে। ৯ দফার পক্ষে জনমত গঠন করতে থাকে ছাত্ররা। ১ আগস্ট: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি। ২ আগস্ট: ৯ দফা আদায়ের দাবিতে সারাদেশে গণমিছিল করে ছাত্র জনতা। রাজধানীসহ বিভিন স্থানে পুলিশের সাথে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলিতে ৩ জন শাহদাতবরণ করেন।পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ১৫ হাজার মানুষ। ৩ আগস্ট: ৯ দফা না মেনে গণগ্রেপ্তার ও গণহত্যা চালু রাখার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র জনতা। সেনাপ্রধান তার সেনা কমান্ডার নিয়ে মিটিং করেন। সেখানে তিনি এই বার্তা পান যে, সেনাবাহিনী আর গুলি করতে প্রস্তুত নয়। কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে নয় দফা বাদ দিয়ে ১ দফার (খুনী হাসিনার পদত্যাগ) ঘোষণা দেয় ছাত্রনেতারা। ৪ আগস্ট: রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসী। এদিন পুলিশের সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের গুলি করে। কিন্তু হাজার হাজার ছাত্র ইট পাটকেল দিয়ে সন্ত্রাসী ও হানাদার পুলিশ বিজিবিকে প্রতিরোধ করে। কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনীও গুলি করে। সারাদেশে ১৩০ জন খুন হন। পরদিন ঢাকামুখী লং-মার্চের কর্মসূচি দেয় ছাত্র জনতা। ৫ আগস্ট: সকাল থেকেই ব্যাপক মারমুখী অবস্থান নেয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। সারা ঢাকা শহরে খন্ড খন্ড যুদ্ধ শুরু হয় ছাত্র জনতার সাথে। সকাল সাড়ে দশটার পর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হাসিনা পালিয়ে যায়। কর্মরত পুলিশরা এই খবর না জানায় তারা জনতার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অনেক মানুষকে তারা খুন করতে থাকে। সেনাবাহিনীর প্রধান দুইটায় ভাষণ দিবেন বলে ঘোষণা দেন। ১২ টায় শাহবাগের পুলিশ ও সেনাবাহিনী রাস্তা ছেড়ে দেয়। ১ টায় মানুষ জেনে যায়, হাসিনা পালিয়ে গেছে। সারাদেশে গলিতে গলিতে মিস্টি বিতরণ ও ঈদ মোবারক বলে কোলাকুলি করতে থাকে মানুষ। রাস্তায় রাস্তায় মানুষ সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে থাকে। দেশে বিভিন্ন মোড়ে থাকা স্বৈরাচার মুজিবের সকল মুর্তি ভেঙ্গে দেয় আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় ও আত্মগোপন করে। অনেকেই ছাত্রজনতার রোষানলে পড়ে খুন হয়। রাজধানীর মানুষদের একটা বড় অংশ গণভবনে গিয়ে হাসিনার ওপর রাগ ক্ষোভ গণভবনের ওপর ঝাড়ে। ৬ আগস্ট: বাংলাদেশে উদিত হয় নতুন সূর্য। আন্দোলনে যোগদান ও শাহাদতের অমিয় পান: শহীদ জুয়েল রানা ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য লং মার্চে যোগদান করেন। মিছিলটি শফিপুর আনসার একাডেমীর সামনে পৌঁছালে, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের ঘাতক আনসার বাহিনী শান্তিপ্রিয় ছাত্র জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। শহীদ জুয়েলে রানা তখন মিছিলের সামনে ছিলেন। তখন সময় দুপুর ৩.৩০ মিনিট। হঠাৎ একটি বুলেট শহীদ জুয়েলের পায়ে এসে বিদ্ধ হয়। সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সে সময় তাকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায় তাঁর বন্ধুরা। হাসপাতালগুলোতে আহতদের অনেক ভিড় থাকায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিকাল ৪.৩০ টায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। একসময় নিজে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন অনেক মানুষের জীবন। কিন্তু সেই রক্তের অভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়। সে রাতেই রানার লাশ শাখাহাট বালুয়া, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা নিজ গ্রামে নেয়া হয়। জানাজা শেষে ৬ আগস্ট পরদিন সকালে বিশেষ সম্মাননা দিয়ে দাফন কর্ম সম্পূর্ণ করা হয়। বাকরুদ্ধ বাবা-মা নিহত জুয়েলের বিষয়ে জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা। কৃষক বাবাও অনেকটাই বাকরুদ্ধ। তিনি প্রতিদিনই ছেলের কবরে যান এবং ছেলের কবরের পরিচর্যা করেন। তবে তিনি ছেলে হত্যার উপযুক্ত বিচার চান। এলাকাবাসী জুয়েল হত্যার উপযুক্ত বিচার ও পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান সরকারের কাছে। শহীদের ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: জুয়েল রানা জন্ম তারিখ : ০৯/০৭/১৯৯৭, বয়স: ২৭ বছর জন্মস্থান : গোবিন্দগঞ্জ ,গাইবান্ধা পেশা : গার্মেন্টস কর্মী পেশাগত পরিচয় : ইন্টারস্টফ এ্যাপারলেস লিমিটেড গার্মেন্টসে সুইং, ইনপুট ম্যান পদে কর্মরত ছিলেন পিতা : মো: মোনতাজ উদ্দীন, পেশা: কৃষক, বয়স : ৫১ মাতা : মোছা: জামেলা খাতুন, পেশা: গৃহিণী, বয়স : ৪৮ স্থায়ী ঠিকানা : জেলা: গাইবান্ধা, উপজেলা: গোবিন্দগঞ্জ, ইউনিয়ন: শালমারা, গ্রাম: শাখাহাতী সম্পদের পরিমাণ : চার শতাংশ বসতি জমি রয়েছে মাসিক আয় : এই মুহূর্তে বন্ধ সন্তানদের নাম ১. জাব্বাতি আক্তার, বয়স: ৮, পেশা: ছাত্রী, প্রতিষ্ঠান: আলহেরা সালাফিয়া মাদরাসা, শ্রেণি: ২য়, সম্পর্ক: মেয়ে ২. জিনাত খাতুন বয়স: ৫, পেশা: ছাত্রী, প্রতিষ্ঠান: বারোপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রেণি: শিশু, সম্পর্ক: মেয়ে প্রস্তাবনাসমূহ ১. শহীদ পরিবার ঋণগ্রস্থ। ঋণ পরিশোধে সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদ পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে ৩. শহীদ কন্যাদ্বয়কে এতিম প্রতিপালনের আওতাভুক্ত করা যেতে পারে ৪. শহীদ স্ত্রীকে কর্মসংস্থান করে দেয়া যেতে পারে।