Image of নাদিমুল হাসান এলেম

নাম: নাদিমুল হাসান এলেম

জন্ম তারিখ: ১২ আগস্ট, ১৯৯৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ছাত্র , শাহাদাত বরণের স্থান :কবি নজরুল কলেজ, লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা

শহীদের জীবনী

“নাদিমুল ইসলাম এলাকায় ছাত্রদের মধ্যকার বিবাদ মিমাংসা করে দিতেন’’ নাদিমুল ইসলাম এলেম ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবার নাম শাহ আলম এবং মায়ের নাম কিশমত আরা। তাদের নিজস্ব কোন জমি নেই। এলেম বুরহান উদ্দিন কলেজের ডিগ্রী ১ম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। চাকুরীর পাশাপাশি পরিবারকে সহযোগিতার জন্য একটি পোষাকের শোরুমে জব করতেন। ছাত্র জীবন থেকেই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে শেখা এলেম বুঝতে পেরেছিলেন দেশের সর্বনাশ কারা করছে। কারা মুক্তিযুদ্ধের সবক দিয়ে দেশের ক্ষতি করছে। তিনি লক্ষ্য করেন আওয়ামী লীগের চাটুকারিতা করলে দেশপ্রেমিক। আর ন্যায়ের পক্ষে থাকলে সে হয়ে যাচ্ছে রাজাকার-দেশদ্রোহী। সরকারি দলের আচরণ তাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। দিনে দিনে নাদিমুল ইসলাম এলেম হয়ে পড়েন অপশাসনের বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহী তরুণ। যেভাবে শহীদ হলেন নাদিমুল হাসান এলেম ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৮ জুলাই প্রথম অংশ গ্রহণ করেন। ছাত্রদের প্রথম দাবী ছিল অন্যায় কোটা প্রথা বাতিল হোক। কোটার কারনে মেধাবীদের চাকুরী পাওয়া দিনে দিনে কঠিন হচ্ছিলো। কোটার মাধ্যমে মূলত আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান, বিতর্কিত ছাত্রলীগ এবং খুনি স্বৈরাচারী সরকারের চাটুকার দালালেরা সরকারী চাকুরী পেত। শেখ হাসিনার ইচ্ছা ছিল তার নিজস্ব চাটুকার লোকদের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় ক্ষমতায় টিকে থাকা। যা সচেতন ছাত্র-জনতা কোনভাবেই মেনে নেয়নি। কোটা প্রথা ছিল হাসিনা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ২০০৮ থেকে এরকম অসংখ্য নীতিমালা শেখ হাসিনা নিজের মনমতো বাস্তবায়ন করেন। কেউ সামান্য বিরোধীতা করলে তাকে কঠোরভাবে শায়েস্তা করতেন। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী নেতাদের নির্মূল করে নাস্তিক-মদ্যপায়ীদের হাতে প্রশাসনের দায়িত্ব দেন। যারা লুটপাট ও অবিচারের মাধ্যমে দেশটাকে ধ্বংস করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাধারণ জনতা সমস্ত ব্যপার বুঝতে পারলেও কথা বলার-প্রতিবাদ করার সাহস তাদের কোনভাবেই হয়না। প্রত্যেক নির্বাচনে অপেক্ষায় থাকে সরকার পরিবর্তনের। খুনি হাসিনা তার চাটুকারদের সহায়তায় ভোট দানের অধিকার রহিত করে। নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পেরে এলেমের মতো তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা অধিকারের দাবী তুললে তাদেরকে রাজাকার বলে গালি দেয় খুনি হাসিনা। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে গেলে ছাত্রলীগের গুন্ডাদের হাতে নির্মমভাবে মার খায়। আহত অবস্থায় হাসপাতালে যেয়েও রেহাই পায়না। নাদিমুল হাসান এলেম সচেতন ছাত্রদের একজন ছিলেন। তিনি ১৮ জুলাই তার বন্ধুদের নিয়ে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেন। আন্দোলন থেকে বাসায় ফেরেন রাত ১২টায়। ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ শেষ করে আন্দোলনে যুক্ত হতে লক্ষ্মীবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ছাত্র-জনতা কোন ভাবেই ভাবেনি যে, ঘাতক পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, বিতর্কিত সংগঠন ছাত্র লীগ ও যুব লীগের সন্ত্রাসীরা ভয়ানক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর বর্বর হামলা চালাবে। নামাজ শেষে সারাদেশে শুরু হয় নারকীয় বর্বরতা। ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, হ্যান্ড গ্রেনেড, স্নাইপার থেকে গুলি ও টিয়ারশেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে খুনিরা। রক্তাক্ত হতে থাকে রাজপথ। আনুমানিক ৩.১৫ মিনিটে লক্ষ্মীবাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে চোখে গুলিবিদ্ধ হন এলেম। তার দেহ দীর্ঘসময় রাস্তায় পড়ে থাকে। বুলেটের মুখে কেউ উদ্ধার করতে এগিয়ে আসতে পারেনা। বিকালের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ছাত্ররা তার লাশ রিকশায় তুলে দেয়। হাসপাতালে নেয়ার পরে জানা যায় এলেম শহীদ হয়ে গেছেন। পরদিন কেরানীগঞ্জে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়। কেমন আছে তার পরিবার এলেমের বাবা জনাব শাহ আলম একটি কাপড়ের দোকানে চাকুরী করেন। তার মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা। মা কিশমত আরা একজন গৃহিনী। তিনি ডায়াবেটিস রোগী। তার হার্টে ৩ টি ব্লক ধরা পড়েছে। উন্নত চিকিৎসা দরকার। যার সামর্থ এলেমের বাবার নেই। জনাব শাহ আলম কেরানীগঞ্জে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার নিজস্ব থাকার জন্য বা ঘর করার জন্য কোন জমি নেই। প্রতিবেশীর বক্তব্য এলাকার জুনিয়র ছাত্র সোহেল বলেন, এলেম ভাই এই এলাকায় ছাত্রদের মধ্যকার বিবাদ মিমাংসা করে দিতেন। এলেমের সহপাঠী শরিফ বলেন, এলেম মায়ের ভক্ত ছিল। বন্ধুদের বিপদে সব সময় সাহায্য করতো। ভাড়া বাসায় অবস্থানকালীন প্রতিবেশি মিথিলা আক্তার জানান, এলাকাবাসীর সাথে আচরণে আন্তরিক ছিল। এলেমের ছোট ভাই রাফি বলেন, আমাকে আমার ভাইয়া অনেক আদর করতো। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেত। প্রতিবেশী লামিয়া বলেন, আমার বাচ্চাটিকে এলেম ভাই অনেক স্নেহ করতেন। মাঝে মাঝে তার ছোট ভাইয়ের জন্য কিছু কেনার সময় আমার বাচ্চাটার জন্যেও কিনতেন। এক নজরে শহীদের সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য নাম : নাদিমুল হাসান এলেম পেশা : ছাত্র জন্ম তারিখ : ১২ আগস্ট ১৯৯৯ পিতা : শাহ আলম মাতা : কিশমত আরা আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, আনুমানিক বিকাল ০৩.১৫টা শাহাদাত বরণের স্থান : কবি নজরুল কলেজ, লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা আক্রমণকারী : সূত্রাপুর বা কোতয়ালী থানার পুলিশ দাফন করা হয় : কেরানীগঞ্জ স্থায়ী ঠিকানা : কেরানীগঞ্জ (নিজস্ব কোন জমি নেই, তার পরিবার ৭ম তলার উপরে ভাড়া বাসায় থাকে) ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : নিজস্ব কোন জমি নেই প্রস্তাবনা ১. শহীদের বাবাকে সহযোগিতা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of নাদিমুল হাসান এলেম
Image of নাদিমুল হাসান এলেম
Image of নাদিমুল হাসান এলেম
Image of নাদিমুল হাসান এলেম
Image of নাদিমুল হাসান এলেম
Image of নাদিমুল হাসান এলেম
Image of নাদিমুল হাসান এলেম
Image of নাদিমুল হাসান এলেম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মনির হোসেন

শহিদুল খান

তামিম শিকদার

মো: ইসমাইল মোল্লা

মো: সাইদুল ইসলাম শোভন

মো: শাওন

মো: হৃদয়

ডা: সজিব সরকার

নাজমুল হাসান

রাহাত হোসেন শরিফ

মো: গণি মিয়া

হযরত বিল্লাল

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo