Image of মো: আরিফুল মিয়া

নাম: মো: আরিফুল মিয়া

জন্ম তারিখ: ১ জুন, ১৯৯৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : দিনমজুর (কাঠমিস্ত্রী), মায়ের দোয়া ফার্ণিচার, চান্দরা, পল্লী বিদ্যুৎ, শাহাদাতের স্থান : আনসার একাডেমি।

শহীদের জীবনী

মো: আরিফুল মিয়া, পেশায় একজন দিনমজুর, যিনি জীবন কাটাচ্ছেন কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে। তাঁর প্রতিদিনের শ্রমে সংসার চলে, আর সেখানেই নিহিত তাঁর জীবনের সার্থকতা। পল্লী বিদ্যুৎ সংলগ্ন মায়ের দোয়া ফার্নিচারে প্রতিনিয়ত তাঁর হাতের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠে নতুন আসবাবপত্র, যেন তাঁর শ্রমই শিল্প হয়ে উঠে আসে। আরিফুল মিয়ার স্থায়ী ঠিকানা গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি থানার পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামে। এই গ্রামেই তিনি বেড়ে উঠেছেন, গ্রামের মাটির স্নিগ্ধতায় মিশে আছে তাঁর সরলতা। গ্রামে তাঁকে সকলে চেনে একজন নিরীহ ও সৎ মানুষ হিসেবে। সত্যবাদী, সোজাসাপ্টা এবং সর্বদাই পরিশ্রমী—এমন মানুষ আরিফুল, যিনি সহজ জীবনযাপন করেন, কিন্তু প্রতিটি কাজ করেন নিষ্ঠার সাথে। কাঠমিস্ত্রীর কাজেই তাঁর দিন কাটে, আর সেই কাজই তাঁর জীবনের রুটিরুজি। সরল জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে তিনি নিজের শ্রমের মূল্য দিয়ে সংসার টিকিয়ে রেখেছেন। যেভাবে ফুলটি ঝরে গেলো ২০২৪ সালের জুলাই মাসের উত্তাল সময়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে জনতার বুকে এক বৈষম্যবিরোধী আগুন ছড়িয়ে দেয়। ছাত্রদের আহ্বানে শুরু হওয়া এই আন্দোলন একসময় পরিণত হয় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাতির মহাবিদ্রোহে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশের আপামর জনতা, বঞ্চনা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। তরুণের ক্ষোভ আর হতাশা গড়িয়ে পড়ে রাজপথে। তাদের গর্জনে কেঁপে ওঠে স্বৈরাচারের তক্তপোষ। ৫ আগস্ট—বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অন্ধকার দিন। শেখ হাসিনা, ক্ষমতালোভী শাসকের গদি টলমল করে, তবুও তাঁর ক্ষমতা হারানোর আগ মুহূর্তেও তিনি রেখে যান এক নির্মম উত্তরাধিকার। তাঁর নির্দেশে দেশের আনাচে-কানাচে লেলিয়ে দেওয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী, তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মৃত্যু পরোয়ানা—যে পরোয়ানার লক্ষ্য ছিলেন নিরীহ ছাত্র-জনতা। সফিপুর আনসার একাডেমি এলাকা। বিকাল ৩টা বাজে। সশস্ত্র আনসার বাহিনী, প্রায় ৪০০-৫০০ জন, রাবার বুলেট ছুঁড়তে শুরু করে ছাত্রদের দিকে, যেনো এক অজানা শত্রু তাদের সামনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এই নিরস্ত্র জনতার কোনো শত্রু ছিল না—তারা ছিলো দেশের সন্তান, তারা ছিলো সাধারণ মানুষ, যাদের কণ্ঠে ছিলো ন্যায়ের দাবি। বিকাল ৪টা। রাবার বুলেটের স্রোত থেমে গিয়ে শুরু হয় সরাসরি প্রাণঘাতী গুলি বর্ষণ। মোঃ আরিফুল মিয়া, একজন কাঠমিস্ত্রী, ছিলেন সেই মুহূর্তে রাজপথে। তাঁর হৃদয়ে জমে থাকা সকল বঞ্চনার জ্বালা তাঁকে নিয়ে এসেছিল জনতার কাতারে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে রাজপথে নেমেছিলেন তিনি, তাঁর বুকেও স্বপ্ন ছিলো সমতার—একটি নিরপেক্ষ, ন্যায়সঙ্গত সমাজের। কিন্তু সেই স্বপ্নের অকাল মৃত্যু হলো আনসার বাহিনীর গুলিতে। বিকাল ৪টার সময় তাঁর বুক বিদীর্ণ করে গর্জে ওঠা গুলি যেন থামিয়ে দেয় তাঁর জীবন। রাত ২ টা ২০ মিনিটে, মোঃ আরিফুল মিয়া মারা যান। তাঁর নিথর দেহ নিয়ে যায় অন্ধকার রাতের গভীরে। এ কাহিনি একার নয়, এ কাহিনি যেনো হাজারো বঞ্চিত জনতার। তাঁদের স্বপ্নেরা সেদিন মিশে যায় রক্তরাঙা রাজপথে, আর তাঁদের আত্মত্যাগের গল্প হয়ে ওঠে এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় জাতির সংগ্রামের ইতিহাসে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি শহীদ আরিফুল মিয়া সম্পর্কে এক প্রতিবেশী বলেন, আরিফুল মিয়া ভালো মানুষ ছিলেন। সে কাজে ফাঁকি দিতেন না। ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করতেন। বিগত চার পাঁচ বছরে তার সাথে আমার কখনো মনমালিন্য হয়নি। শহীদ পরিবারের আর্থিক অবস্থা শহীদ মোঃ আরিফুল মিয়া ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রী, যিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর স্ত্রী গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন, সামান্য ১৩,৫০০ টাকার বেতনে পরিবারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করতেন। তবে তাতেও তাঁদের আর্থিক দুর্দশা কাটানো সম্ভব হয়নি। আরিফুলের পরিবারে ছিল একমাত্র ছেলে, যে মাদ্রাসায় নার্সারি বা প্রথম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছিল। পরিবারের আর্থিক অবস্থা অসচ্ছল হওয়ায় তাঁরা বাড়তি কোনো সহায়তা পাননি, যা তাদের জীবনে আরও বেশি কষ্টের ছাপ ফেলেছিল। আরিফুল মিয়ার জীবন ছিল সংগ্রামী, যেখানে প্রতিটি দিন বেঁচে থাকার জন্য তাঁকে লড়াই করতে হতো। তাঁর আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম সবসময় পরিবারের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত ছিল, কিন্তু অর্থনৈতিক দৈন্যদশা তাঁদের পরিবারের জন্য এক স্থায়ী বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: আরিফুল মিয়া পেশা : দিনমজুর (কাঠমিস্ত্রী), মায়ের দোয়া ফার্ণিচার, চান্দরা, পল্লী বিদ্যুৎ সংলগ্ন স্হায়ী ঠিকানা : পশ্চিম গোপীনাথপুর, ইউনিয়ন: পলাশবাড়ী, থানা: পলাশবাড়ি, জেলা: গাইবান্ধা বর্তমান ঠিকানা : চান্দরা,পল্লী বিদ্যুৎ, ৭ নং ওয়ার্ড, কালিয়াকৈর, গাজিপুর পিতার নাম : খাজা মিয়া, বয়স: ৫৪, পেশা: কৃষক মাতার নাম : মোছা: রাশিদা বেগম, বয়স: ৪৩, পেশা : গৃহিণী আয়ের উৎস : দিনমজুর পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ০৭ জন ভাই বোনের সংখ্যা : ৪ জন ১. মো: জিসান, বয়স- ০৯, পেশা: শিক্ষার্থী, মোল্লা, জালালিয়া মাদরাসা ২. আশিকুল ইসলাম, বয়স: ৩০, পেশা: রড় মিস্ত্রী (বড় ভাই) ৩. মোছা: খাদিজা বয়স: ৩০, গার্মেন্টস কর্মী ৪. মোছা: নুরী আক্তার ঘটনার স্থান : আনসার একাডেমি আক্রমণকারী : আনসার আহত হওয়ার সময়কাল : তারিখ: ০৫/০৮/২০২৪ ইং সময়: সন্ধ্যা-৬.০০ মৃত্যুর তারিখ ও সময় স্হান : ০৫/০৮/২৪ ইং, সন্ধ্যা ২:০০ টা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : গ্রামে পারিবারিক কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. ছেলের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়া ২. কিছু ঋণ আছে (আনুমানিক ১ লক্ষ টাকা) তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আরিফুল মিয়া
Image of মো: আরিফুল মিয়া
Image of মো: আরিফুল মিয়া
Image of মো: আরিফুল মিয়া
Image of মো: আরিফুল মিয়া

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আবদুর হান্নান

মো: ইমন

আবদুল্লাহ আল রোমান

কাজী মো: আব্দুর রহমান

মো: সাগর আহম্মেদ

একরামুল হক সাজিদ

মো: মনিরুজ্জামান মোল্লা

মো: মিঠু বিশ্বাস মারুফ

ফয়জুল ইসলাম রাজন

মো: হৃদয়

মো: আল আমিন

মো: মোহসীন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo