Image of মো: কবির

নাম: মো: কবির

জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসায়ী, ম্যান পাওয়ারের ব্যবসা করতেন , শাহাদাতের স্থান : আজমপুর

শহীদের জীবনী

মো: কবির একজন সম্মানিত ও ধর্মভীরু ব্যক্তি হিসেবে সমাজে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মূলত ম্যান পাওয়ারের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি মানবসেবা এবং পরোপকারে আগ্রহী ছিলেন, যা তাঁকে সমাজে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে।তিনি গাজীপুর জেলার টঙ্গী পৌরসভার মধ্য আরিচপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। তাঁর পিতা মৃত মোজাহার আলী এবং মাতা মোছা: আমেনা খাতুন, যাঁর বয়স বর্তমানে ৭০ বছর। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে তাঁর মাসিক আয় ছিল প্রায় ২০,০০০ টাকা। মো: কবিরের জনহিতকর কাজ এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা তাঁকে সমাজে একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলেছিল।মো: কবির ছিলেন এমন একজন মানুষ, যাঁর অনুগ্রহে অনেক মানুষ উপকৃত হয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতি তাঁর পরিবার ও সমাজের জন্য এক বিশাল শূন্যতা। যেভাবে ফুলটি ঝরে গেলো মোঃ কবিরের জীবনকাহিনি যেনো এক সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি। কুষ্টিয়ার মাটিতে তার জন্ম হলেও জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন গাজীপুর জেলার টঙ্গীর আরিচপুরে। তার পিতা মৃত মোজাহার আলী ও ৭০ বছরের বৃদ্ধা মাতা আমেনা খাতুনের স্নেহছায়ায় বড় হয়ে উঠেছিলেন। তিনি একজন আদম ব্যবসায়ী ছিলেন, যিনি জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে তাকে অর্থনৈতিক দুর্দশার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো—ব্যবসায়িক ঋণ, টঙ্গী বাজারে টিনশেড বাড়ি নির্মাণ, এবং লোকসানের কারণে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ঋণের মধ্যে ডুবে গিয়েছিলেন। এছাড়া, মানুষের কাছে থাকা ১ কোটি টাকা পাওনা থাকলেও, অন্যরাও তার কাছে প্রায় সমপরিমাণ টাকা দাবি করতো। পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায়, তার দুই শিশু সন্তান, আসাদুল্লাহেল গালিব (১৩) এবং নাহিয়ান বিন গালিব (১০), যারা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতো, তাদের জীবনেও অর্থনৈতিক দুর্যোগের কালো ছায়া নেমে এসেছিল। নিজের পরিবার, ঋণের বোঝা এবং জীবনের কঠিন বাস্তবতা সত্ত্বেও মোঃ কবির ছিলেন অত্যন্ত মানবিক ও সামাজিক কাজে নিবেদিতপ্রাণ। তিনি সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, পরোপকারে নিজেকে উৎসর্গ করতেন, আর মানুষ তাকে ভালোবাসতো তার জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা এবং বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাবের কারণে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন বৈষম্যবিরোধী জনআন্দোলনে রূপ নেয়, তখন মোঃ কবিরও এতে অংশ নেন। প্রথমদিকে এটি সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও, পরে এটি স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। মানুষের ক্ষোভ, বঞ্চনা, ও অধিকার আদায়ের দাবিতে উত্তাল জনতা রাজপথে নেমে আসে। শেখ হাসিনার সরকার জনতার ক্রমাগত চাপের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়, কিন্তু সেই পদত্যাগের পূর্বেই তিনি অনেক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তার ঘৃণ্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে যান। মোঃ কবির সেই আন্দোলনের একজন সাহসী যোদ্ধা হিসেবে সেদিন রাজপথে নেমেছিলেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ বিকেল ৩ টার দিকে ছাত্র-জনতার সাথে তিনি সরকার পতনের দাবিতে উত্তাল জনস্রোতের অংশ হন। উত্তরার আজিমপুর এলাকায় আমির কমপ্লেক্সের সামনে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে তার মুখে গুলি লেগে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আহত অবস্থায় তাকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। শহীদ মোঃ কবিরের মৃত্যু ছিলো একটি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নির্মম বাস্তবতা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি দেশের মুক্তির জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন। তার মতো একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ, যিনি পরিবার, ঋণ, এবং জীবনের কঠিন সংগ্রামের মধ্যে ছিলেন, সেই মানুষটি দেশ ও মানুষের অধিকারের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তার মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং পুরো জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। মোঃ কবিরের মতো একজন মানুষ, যিনি জীবনের কঠিন সংগ্রাম করেও কখনো পিছপা হননি, দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে তার মানবিকতা, দায়িত্ববোধ, এবং সাহসিকতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি শহীদ মোঃ কবির ছিলেন এক অসাধারণ মানুষ, যার জীবন ছিলো সৎকর্ম এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। মোঃ আজিমুদ্দিনের বর্ণনায় জানা যায়, মোঃ কবির তার এলাকার মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং সম্মানিত ছিলেন। বয়োবৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি সবসময় সমাজের কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখতেন। তিনি সমাজের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন এবং অন্যদেরও সহযোগিতা করতেন। তার এই গুণাবলীর জন্য তিনি এলাকার সকলের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন। মোঃ কবির ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি কখনো কারো সাহায্য করতে দ্বিধা করতেন না। তিনি গরীব, অসহায়, এবং বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবসময় প্রস্তুত থাকতেন।তার এই পরোপকারী মনোভাব এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ তাকে সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠ ও জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। শহীদ পরিবারের আর্থিক অবস্থা শহীদ মোঃ কবির মূলত জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার আয়ের প্রধান উৎস ছিল ম্যানপাওয়ার সাপ্লাই। তার ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে। তার পরিবার ভাড়া বাসায় থাকে। টঙ্গী বাজার শেরে বাংলা রোডে ১.৫ কাঠার মত জমি রয়েছে। সেই জমিতে টিনশেড বাড়ি নির্মাণাধীন। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: কবির পেশা : ব্যবসায়ী, ম্যান পাওয়ারের ব্যবসা করতেন। স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: মধ্য আরিচপুর, টঙ্গী পৌরসভা, টঙ্গী, গাজীপুর পিতার নাম : মৃত মোজাহার আলী মাতার নাম : মোছা: আমেনা খাতুন, বয়স: ৭০ মাসিক আয় : ২০০০০/- পরিবারের অন্য সদস্যদের পরিচিতি ছেলে : আসাদুল্লাহিল গালিব, বয়স- ১৩ বছর, শিক্ষার্থী: মিরাসপাড়া হামিদিয়া দাখিল মাদরাসা, শ্রেণী: সপ্তম ছেলে : নাহিয়ান বিন গালিস, বয়স -১০ বছর, মিরাসপাড়া হামিদিয়া দাখিল মাদরাসা, শ্রেণি: ৫ম ভাই : মো: কামরুল ইসলাম, বয়স: ৩৫ বছর ঘটনার স্থান : আমিরত কমপ্লেক্স, আজমপুর, ঢাকা আক্রমণকারী : সশস্ত্র বাহিনী নিহত হওয়ার সময়কাল : তারিখ: ০৫/০৮/২০২৪ ইং, সময়: বিকাল: ৪টা, আজমপুর

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: কবির
Image of মো: কবির
Image of মো: কবির

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সিয়াম

আশিকুল ইসলাম রাব্বি

মো: জোনায়েদ

মাহবুবুর রহমান সোহেল

মো: আব্দুল আহাদ

বাঁধন

মো: রিয়াজ হোসেন

তামিম শিকদার

মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন

মো: কামরুল ইসলাম সেতু

মো: অহিদ মিয়া

নাজমুল হাসান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo