Image of হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম

নাম: হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ২ এপ্রিল, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : মাওনা চৌরাস্তার অবদান মোড়

শহীদের জীবনী

শহীদ হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার কেওয়াপাড়া পশ্চিম খন্ড গ্রামে ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শুকুর আলী এবং মাতার নাম কুলসুম আক্তার। পাঁচ ভাইবোন সহ পরিবারের মোট সদস্য সাত জন। শহীদ শরিফুল পড়ালেখা করতেন চন্নাপাড়া দাওয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসা দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগে। তিনি সুন্দর তেলাওয়াতে পারদর্শী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী শরিফুল সমাজের কাছে আলাদা ভাবেই পরিচিত ছিল। বড় হয়ে ইসলামিক স্কলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। শহীদের পিতা ছিলেন ছোট মুদি ব্যবসায়ী। সাতজনের পরিবারের খরচ মুদি দোকানের মাধ্যমে চলতে কষ্ট হওয়ায় শরিফুল টিউশন করতেন। ছোট দুই ভাই এবং মেজো বোন শিক্ষার্থী হওয়ায় তাদের পেছনে পড়ালেখা বাবদ অনেক খরচ হয়। ৩৬ জুলাই তথা ৫ আগস্টের গণবিপ্লবে একটি ঘৃণিত সরকারের পতন ঘটে। জুলাইয়ের এই আন্দোলনে তালেবে এলেমদের অবদান ছিল চোখে পড়ার মত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কাওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নিষ্ঠুরতা চালায়। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানী মতিঝিলের শাপলা চত্বরে রাতের অন্ধকারে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেন্ড, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ছুড়ে হত্যা করা হয় নিরীহ মাদ্রাসার ছাত্রদের। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে সাজানো হতো বিভিন্ন জঙ্গি নাটক। একারণে মাদ্রাসার ছাত্ররা ছিল আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনে অনেক জায়গায় হতে দেয়া হয়নি কুরআনের তাফসির মাহফিল কিংবা ধর্মীয় কোন আয়োজন। কথায় কথায় জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে ভন্ডুল করে দেয়া হতো ধর্মীয় সভা ও অনুষ্ঠানগুলো। নারায়ে তাকবির স্লোগানকে জঙ্গিবাদীদের স্লোগান আর দাড়ি টুপিকে করা হয় সন্ত্রাসীদের লেবাসে পরিণত করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালায় তারা। নাটকে, চলচ্চিত্রে, উপন্যাসে সরকারি অর্থ বরাদ্দ করে বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের দানব আকারে তুলে ধরার অপচেষ্টা চালায় দীর্ঘ আওয়ামী শাসন আমলে। তাই সরকার বিরোধী যেকোনো আন্দোলনে মাদ্রাসার ছাত্রদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। মুখে নরায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর শ্লোগান আর বুকে শহীদ হওয়ার তামান্না লালন করেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে জুলাই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের এই আন্দোলনে। ৫ আগস্ট জনরোষে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন তখনও অব্যাহতভাবে চলে পুলিশ, বিজিবি, আনসার, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা। নিহত আহত হতে থাকে হাজার হাজার মানুষ। ঐতিহাসিক সেই দিনের তেমনি একজন শহীদ হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম। যেভাবে শহীদ হয় বাংলাদেশে সংঘটিত ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নীরিহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় মুক্তিকামী জনতা। স্বৈরাচার সরকারের ঘাতক বাহিনী যখন ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল হাফেজ শরিফুল নিজের জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন । আন্দোলন যখন শেষ পর্যায়ে ,৫ আগস্ট দুপুরে তিনি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন । গাজীপুর জেলার মাওনা চৌরাস্তার অবদান মোড়ে যখন মিছিল নিয়ে আসছিলেন হঠাৎই স্বৈরাচারী সরকারের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী এবং সন্ত্রাসী বিজিবি আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। সবাই যখন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে হাফেজ শরিফুল মিছিলের সামনেই ছিল । হঠাৎ একটি গুলি এসে তার বুকের ডান পাশে বিদ্ধ হয় । এরপর তিনি ঘটনাস্থলেই পড়ে যান । অমানবিক বিজিবি সেনারা তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার মাথায় গুলি করে । ঘটনাস্থলেই চিরনিদ্রায় চলে যায় হাফেজ মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম । শহীদের পিতা ঐদিন রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পর আল-হেরা মেডিকেল সেন্টারে তার লাশ খুঁজে পায় । তরুণ মেধাবী ছেলের লাশ দেখে পিতা সহ্য করতে পারে না, কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে নিজ এলাকায় মাদ্রাসা মাঠে পরদিন সকালে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য শহীদের প্রতিবেশী মোঃ কাওছার তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান; আমার জানা মতে, শরিফুল ইসলাম খুবই ভালো একজন মানুষ ছিল। সে একজন কুরআনে হাফেজ ছিলো। সে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো এবং রমজানে তারাবির নামাজ পড়াতেন। সে এলাকার ছোট বড় সবার খোঁজ খবর রাখতো। আমি দুয়া করি আল্লাহ তার শাহাদাত কবুল করুন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম (২০) পেশা : ছাত্র স্থায়ী ঠিকানা : কেওয়াশপশ্চিম খণ্ড, শ্রীপুর পৌরসভা, গাজীপুর জন্ম তারিখ : ০২/০৪/২০০৪ পিতা : শুক্কুর আলী (৫৯) পেশা : ব্যবসা মাতার নাম : কুলসুম আক্তার পেশা : গৃহিণী শহীদের ভাই-বোন বোন : মোছা. জান্নাত (২৫) বোন : মোছা. রাবেয়া (২২) ভাই : আরিফুল ইসলাম (১৮) পারিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ জন পারিবারিক আয় : ৭০০০ টাকা যেভাবে সহযোগিতা করা যায় ১. বাবা মায়ের চিকিৎসার ব্যয় বহন ২. ভাই বোনদের পড়ালেখার দায়িত্ব গ্রহণ ৩. বাবা মাকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম
Image of হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম
Image of হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম
Image of হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম
Image of হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম
Image of হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মঈনুল ইসলাম

 আফিকুল ইসলাম সাদ

জাহাঙ্গীর আলম

সুমাইয়া বেগম

মো: সাইদুল ইসলাম শোভন

মো: আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ

 তাহমিদ ভূঁইয়া

মো: মায়া ইসলাম

ইমরান হাসান

রথিন বিশ্বাস

জসিম ফকির

তানজীর খান মুন্না

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo