Image of  মো: তাজুল ইসলাম

নাম: মো: তাজুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসায়ী , শাহাদাতের স্থান : ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: তাজুল ইসলাম ১৯৬৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার ডিমডুলে নিন্দুলে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক স্বচ্ছলতার জন্য তিনি ঢাকায় আসেন এবং উত্তরার আজমপুরে বন্ধুর সাথে যৌথভাবে ’কুমিল্লা রেন্ট-এ কার’-এর ব্যবসা শুরু করেন। উনার স্ত্রী সপ্তম শ্রেণী পাস ও পেশায় একজন গৃহিণী। কন্যা দুজন বিবাহিত। ১৮ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান আছে। সন্তানের নাম রেদওয়ান সিয়াম। সে সেলাইয়ের কাজ শিখছে। শহীদের পরিচয় রাজধানী ঢাকার অন্যান্য স্থানের মত উত্তরায় হতাহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে অনেক বেশি। তাই উত্তরাকে বলা যায় দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ব্যাটেল গ্রাউন্ড। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৮ জুলাই ঘোষিত হয় "কমপ্লিট সাটডাউন" কর্মসূচির। সেদিন উত্তরার আজমপুর ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হয় হাজার হাজার আন্দোলন কারী। উত্তরার এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে মানারাত, নর্দান উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ও স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। প্রথম থেকেই আন্দোলনে হেলমেট পরিহিত আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি, হকিস্টিক হাতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা করতে দেখা যায়। তাছাড়া অত্যন্ত মারমুখী ছিল পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা। ১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ডাকা 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় পুলিশ এবং আগ্নেয়াস্ত্র, রড, লাঠি, বাঁশ নিয়ে ছাত্রলীগ হামলা করলে ১৮ জুলাই সারা দেশে অন্তত ২৯ জন নিহত হন এবং আহত হন অন্তত তিন হাজার। নিহতদের মধ্যে ২৩ জনই ঢাকার। এ ছাড়া, চট্টগ্রামে দুইজন, নরসিংদীতে দুইজন, মাদারীপুরে একজন ও সিলেটে একজন নিহত হন। এত এত খুনের ঘটনায় মজলুম মানুষের আহাজারিতে রোনাজারিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই সহিংসতার দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তাজুল ইসলাম নামের রেন্ট কার ব্যবসায়ী। ওই দিন বিকেলে কোটা বিরোধীদের সঙ্গে র‌্যাব পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিহত হন। তার একমাত্র ছেলে রেদোয়ান আহমেদ সিয়ামের ভাষ্য ‘সেই দিন বাবা আশুরার রোজা ছিলেন, সারাদিন রেন্ট-এ কারের পাশে উত্তরার একটি মসজিদের ভেতর ছিলেন। বিকালে ইফতারি নিয়ে বাসায় ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার আর ফেরা হয়নি। গুলিতে বাবার বুকটা ঝাজরা হয়ে যায়। বুকের ভেতর গুলি রেখেই ময়নাতদন্ত ছাড়া পরদিন তাকে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা উত্তর শিলমুড়ি ইউনিয়নের গামারোয়া গ্রামে দাফন করা হয়।’ শহীদ মো: তাজুল ইসলাম ৪ কাঠা জমির উপরে একটি টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বাড়ি নির্মাণের জন্য ব্যংক থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার পরিবারের কোন আয় নেই। ঋণে জর্জরিত পরিবারটি দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। যেভাবে শহীদ হয় ১৮ জুলাই ২০২৪ বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় শহীদ তাজুল ইসলাম নিজ বাড়ি কালিগঞ্জ হতে উত্তরা কর্মস্থলে রোজা অবস্থায় আসরের নামাজ পড়ে ইফতারের জন্য কিছু কেনাকাটার জন্য বের হন। তখন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পালিত সন্ত্রাস বাহিনী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুণ্ডারা জনতার উপর এলোপাথাড়ি আক্রমণের ফলে মোহাম্মদ তাইজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হন এবং ছাত্র-জনতা প্রথমে আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য ব্যক্তি হিসেবে ভালো ছিলো। এলাকায় সবার কাছে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলো। নম্র,ভদ্র ও অমায়িক প্রকৃতির মানুষ ছিল। নামাজের বিষয়ে ছিলেন সদা সচেতন। একজন আদর্শবান, দ্বীনদার ও পরহেযগার ব্যক্তি ছিলেন। দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। আল্লাহ যেন তার শাহাদাত কবুল করেন। সেদিনের পরিস্থিতির বর্ণনা করে সিয়াম বলেন, ‘তখন হাসপাতালে রক্তাক্ত অনেক মানুষের চিৎকার আর আহাজারিতে দিশেহারা হয়ে পড়ি। এ বয়সে এত রক্ত কখনও দেখিনি। সিয়ামের ভাষ্য, আমার বাবার তো কোনও অপরাধ ছিল না। তিনি কোটা আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে ছিলেন না। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো? এখন কীভাবে চলবে আমাদের সংসারের খরচ। সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। কার কাছে বিচার চাইবো? বাবার মৃত্যুর শোকে মাও এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’ এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শহীদ মো: তাজুল ইসলাম (৫০) পেশা : ব্যবসায়ী স্থায়ী ঠিকানা : গামারুয়া মিয়াজী, ডিমডুল, বরুরা, কুমিল্লা বর্তমান ঠিকানা : বাইমারডান্দা, নাগরী, কালিগঞ্জ, গাজীপুর জন্ম তারিখ : ০১/০৯/১৯৬৬ পিতা : মৃত মো: আইয়ব আলী মাতার নাম : মৃত মোছা: জাহেদা বেগম শহীদের ছেলে-মেয়ে : ১. রিদওয়ান সিয়াম (১৮), ২. জান্নাতুল ফিরদাউস (২৫), ৩. নুসরাত জাহান লিমা(২০) পারিবারিক আয় : ১৫০০০ টাকা আক্রমণকারী : আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আহত হওয়ার স্থান ও সময়কাল : উত্তরা আমীর কমপ্লেক্স সংলগ্ন, ১৮-০৭-২০২৪, সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ১৮-০৭-২০২৪, বিকাল ৬.৪৫ মিনিট, ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা শহীদের কবরের অবস্থান : নিজ পারিবারিক কবরস্থান, কুমিল্লা যেভাবে সহযোগিতা করা যায় ১. ছেলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ২. ১৫ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে সহযোগিতা করা যায় ৩. পরিবার চালানোর ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  মো: তাজুল ইসলাম
Image of  মো: তাজুল ইসলাম
Image of  মো: তাজুল ইসলাম
Image of  মো: তাজুল ইসলাম
Image of  মো: তাজুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

শহিদুল খান

সুমন মিয়া

মেহেদী হাসান

মোহাম্মদ নুরু

 তাহমিদ ভূঁইয়া

নুর মোহাম্মদ সরদার

ইমরান হাসান

রিয়াজুল ফরাজী

আনোয়ার মিয়া

মো: কামাল মিয়া

রাহাত হোসেন শরিফ

 আফিকুল ইসলাম সাদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo