Image of মো: জুয়েল মিয়া

নাম: মো: জুয়েল মিয়া

জন্ম তারিখ: ২০ আগস্ট, ১৯৮২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : মাওনা চৌরাস্তা ওয়াপদার মোড়

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: জুয়েল মিয়া, ১৯৮২ সালের ২০ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সিংরাইল গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো: আব্দুল হাই একজন কৃষক এবং মাতা মোসা: জিনুয়ারা একজন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই আর্থিক অসচ্ছলতা জুয়েলের জীবনকে গ্রাস করেছিল। পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য ছোটবেলাতেই তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। জীবিকার তাগিদে জুয়েল গাজীপুর শহরে চলে আসেন এবং এক্সক্লুসিভ ওয়ার লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টসে লিংকিং অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন।. জুয়েলের জীবন ছিল সংগ্রামময়, কিন্তু তার চার বছরের ছেলে সন্তানের প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা। জীবনের সমস্ত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবারের সবার প্রতি তার দায়বদ্ধতা ছিল অপরিসীম। যেভাবে তিনি শহীদ হন ২০২৪ সালের জুলাই মাসের কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন জনতার আন্দোলনে পরিণত হয়, তখন জুয়েল মিয়া তার কর্তব্য থেকে পিছপা হননি। ৫ আগস্ট, তিনি ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে ঢাকা লং মার্চে অংশ নেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের সংবাদ শোনার পর বিকেল চারটার দিকে বিজয় মিছিলে যোগ দেন। গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় স্বৈরাচারী সরকারের বিজিবি বাহিনী নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালাতে শুরু করে। জুয়েল মিয়া মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হলেও ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন। জুয়েলের মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, তার এলাকার জন্যও এক গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার জানাজা শেষে সিংরাইল গ্রামের মাটিতেই তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। তার মৃত্যুর পর, পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ডুবে যায়। তার ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পথে। নিকটাত্মীয় মো: হাসমত খান বলেন, "জুয়েল একজন অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন, এবং এলাকাবাসীর প্রতি ছিল তার অপার ভালোবাসা। আমরা আল্লাহর কাছে তার শাহাদাতের কবুল প্রার্থনা করি।" শহীদ জুয়েল মিয়ার রক্তের ঋণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় সংগ্রামের শক্তি ও সাহসের কথা। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন দ্রুত একটি ব্যাপক গণআন্দোলনে রূপ নেয়। বৈষম্যবিরোধী এ আন্দোলন প্রথমে ছাত্রদের উদ্যোগে শুরু হলেও, ক্রমেই তা দেশের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এক বিশাল অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে আসে, স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এই আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে, শেখ হাসিনা সরকার ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের আগে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা জনগণের ওপর তার ঘৃণ্য গণহত্যা চালাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। খুনী তার সশস্ত্র বাহিনীকে নীরিহ আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষের ওপর লেলিয়ে দেয়; যার ফলস্বরূপ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু মানুষ নিহত ও আহত হন। এরই মধ্যে একজন শহীদ হলেন মোঃ জুয়েল মিয়া। জুয়েল মিয়া একজন নিরীহ শ্রমিক, ৫ আগস্ট,২০২৪ সাধারণ মানুষের সাথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকার দিকে লং মার্চে রওনা দেন। গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা ওয়াপদার মোড় এলাকায়, বিকেল ৪টার দিকে বিজিবি সদস্যরা তাদের পথরোধ করে। জনতার ওপর চালানো হয় নির্বিচারে গুলি। বিজিবির এই আক্রমণে জুয়েল মিয়া মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই আরও ছয়জন মানুষ নিহত হন এবং শতাধিক আহত হয়। ক্ষুব্ধ জনতা বিজিবির একটি বাস ঘিরে ফেললে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টার থেকে আবারও নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। সাধারণ, নিরস্ত্র জনতার ওপর এমন নির্মম এই আক্রমণ ইতিহাস হয়ে থাকবে। শহীদ জুয়েল মিয়ার মরদেহ জানাজা শেষে ময়মনসিংহে সমাহিত করা হয়। তাঁর এই আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামের এক উজ্জ্বল প্রতীক হয়ে থাকবে। শহীদ সম্পর্কে প্রতিবেশীর অনুভূতি শহীদ জুয়েল মিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার প্রতিবেশী মো: হাসমত খান জানান, "জুয়েল মিয়া একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এলাকার মানুষের সাথে খুব ভালো আচরণ করতেন এবং সবার খোঁজ-খবর রাখতেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তার শাহাদাত কবুল করুন।" অর্থনৈতিক বিশেষ অবস্থা শহীদ জুয়েল মিয়া ছিলেন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক, যার আয়ের উপর নির্ভর করত পুরো পরিবার। তার স্ত্রী একজন গৃহিণী, যিনি সংসারের দায়িত্ব পালন করতেন। তারা গাজীপুরের মাওনা উত্তর পাড়ায় একটি ছোট ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন, যেখানে জীবনযাত্রা ছিল সীমিত ও কষ্টকর। জুয়েল মিয়া ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তার উপার্জনেই চলত পরিবার। তিনি প্রতি মাসে তার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্যও টাকা পাঠাতেন, কারণ তার বাবা হার্টের রোগে আক্রান্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তার উপার্জনে তাদের চিকিৎসা এবং অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো হত। শহীদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলের সিংরাইলে রয়েছে একটি টিনের ঘর, যা তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। শহীদ জুয়েল মিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে তার পরিবার গভীর সংকটে পড়েছে। তার এই শূন্যতা পূরণ করা আর সম্ভব নয়। প্রস্তাবনা শহীদ জুয়েল মিয়ার পরিবার বর্তমানে চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছে। এই মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি। শহীদ জুয়েলের ছোট ছেলে মাত্র ৪ বছর বয়সী, তার শিক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাই, পরিবারটির সহযোগিতার জন্য নিম্নোক্ত প্রস্তাবনাগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়: প্রস্তাবনা ১: ছেলের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা শহীদ জুয়েল মিয়ার ছেলে এখনো খুব ছোট, তার শিক্ষার দায়িত্ব নেওয়া মানবিক কর্তব্য। তার একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে তাকে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া জরুরি। জুয়েলের অবর্তমানে তার ছেলের সঠিক শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারলে পরিবার একটু ভরসা পাবে। প্রস্তাবনা ২: পরিবারের জন্য একটি স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা পরিবারটি বর্তমানে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছে, যাতে দীর্ঘমেয়াদে থাকা অনিশ্চিত। তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে শহীদ জুয়েলের স্মৃতি ধরে রাখতে, তার পরিবারের জন্য একটি স্থায়ী ঘর তৈরি করা প্রয়োজন। প্রস্তাবনা ৩: বাবা-মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা শহীদের বৃদ্ধ বাবা-মা অর্থনৈতিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল। তার বাবা হার্টের রোগে আক্রান্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তাদের দুজনেরই চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের বয়সজনিত নানা অসুস্থতার পাশাপাশি জুয়েলের মৃত্যুতে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাদের চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করতে পারলে অন্তত এই বৃদ্ধাবস্থায় তারা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। শহীদ জুয়েল মিয়ার পরিবারকে সহায়তা করা সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ব। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: জুয়েল মিয়া জন্ম তারিখ : ২০-০৮-১৯৮২ জন্মস্থান : সিংদিই, নান্দাইল, ময়মনসিংহ নিজ জেলা : ময়মনসিংহ পেশা/পদবী : গার্মেন্টস কর্মী কর্মরত প্রতিষ্ঠান : ক্রাউন এক্সক্লুসিভ ওয়্যার লিমিটেড পদবি : লিংকিং অপারেটর ডিপার্টমেন্ট : প্রোডাকশন স্থায়ী ঠিকানা : সিংদিই, নান্দাইল, ময়মনসিংহ বর্তমান ঠিকানা : মাওনা উত্তর পাড়া, শ্রীপুর, গাজীপুর পিতার নাম : মো: আ: হাই (৬০ বছর, কৃষক) মায়ের নাম : মোসা: জিনুয়ারা (৫০ বছর, গৃহিণী) মাসিক আয় : ১০,০০০/- আয়ের উৎস : কৃষিকাজ পরিবারের সদস্য : স্ত্রী ও ১ ছেলে (৩ বছর) রক্তের গ্রুপ : এ+ ঘটনার স্থান/পয়েন্ট : ওয়াবদার মোড়, মাওনা চৌরাস্তা, শ্রীপুর, গাজীপুর আক্রমণকারী : বিজিবি আহত হওয়ার তারিখ ও সময় : ০৫-০৮-২০১৪, বিকাল ৪.০০টা মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ০৫-০৮-২০২৪, বিকাল ৪.১০টা, ওয়াবদার মোড় শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : সিংদিই, নান্দাইল, ময়মনসিংহ

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: জুয়েল মিয়া
Image of মো: জুয়েল মিয়া
Image of মো: জুয়েল মিয়া
Image of মো: জুয়েল মিয়া
Image of মো: জুয়েল মিয়া
Image of মো: জুয়েল মিয়া

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শাওন

তাহমিদ আব্দুল্লাহ অয়ন

মো: তুহিন

নাফিসা হোসেন মারওয়া

মো: আবদুর হান্নান

ইমরান হাসান

মো: ইমন

মোঃ সুজন খাঁন

শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত

মো: গণি মিয়া

মো: রুখতন মিয়া

মোশারফ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo