জন্ম তারিখ: ২ জুলাই, ১৯৬৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : আহসানুল্লাহ মেডিকেল হাসপাতাল,টঙ্গী
আনন্দ মিছিল থেকে ফেরার পথে সৎ ও হালাল ব্যবসায়ী শহীদ শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে পুলিশ কতৃক গুলি বৃদ্ধ হয়ে হঠাৎ অকালে মারা যান। দেশের জন্য মহান ব্রত নিয়ে আত্মত্যাগের ইতিহাস অল্প কয়েকজনই রচনা করেন। যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন, তারা শুধু নিজেদের জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকেন। তাদের এ আত্মত্যাগ তখন হয়ে দাঁড়ায় দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সমৃদ্ধির রক্ষাকবচ। এমন ব্যক্তিরা শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিক এবং নৈতিক শক্তি দিয়ে আগলে রাখেন জাতিকে। তাদের সাহসিকতা এবং নিষ্ঠা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হয়ে ওঠে আলোকবর্তিকা। ইতিহাসের পাতায় দেশের জন্য আত্মত্যাগ করা বীরদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে এবং তারা জাতির হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকেন। পরিচিতি শহীদ সাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত ১৯৬৪ সালের ২ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ইলাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-মাতা হলেন আব্দুল মাজীদ ও আরফাতের নেছা। তিনি গাজিপুরের টঙ্গীতে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ব্যবসা করতেন। শাহাদাত হোসেনের আয়ের মাধ্যম ছিল ব্যবসা। এছাড়াও ওনার টঙ্গীতে নিজস্ব পাকা বাড়ি রয়েছে। উনার গ্রামের বাড়িতেও কিছু জায়গা জমি আছে। শাহাদাত এর ছেলে আবু নাসের হামজার বয়স ২৬। তিনি উনার ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। তার ছোট মেয়ে ফাতেমা আক্তার হেফজ শেষ করেছেন। বর্তমানে নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই সংগঠিত মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নীরিহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় মুক্তিকামী নিরীহ ছাত্র জনতা। দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতি, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয় । আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, র্যাব সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। আন্দোলনে যোগদান এমনই একজন বীর শহীদ শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত। তিনি ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ জনতার সাথে যোগ দেয়। তিনি ছাত্র-জনতার সাথে মহাখালী পর্যন্ত যায়। আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের গণআন্দোলনে রূপ নেয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে টঙ্গী থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত। কিন্তু ঢাকায় যাওয়ার পূর্বেই জানতে পারেন গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর রাজনৈতিক সহকর্মীদের সাথে আনন্দ মিছিল নিয়ে টঙ্গীতে ফিরছিলেন তিনি কিন্তু তার আর ফেরা হয়নি। শাহাদাত বরণ এলাকায় দানবির ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত ইলাশপুর বড় মসজিদ এবং মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে টঙ্গীতে ব্যবসা করতেন। শহীদ শাখাওয়াত হোসেনের জামাতা ইকবাল হোসেন কুমিল্লার কাগজকে বলেন ব্যবসায়ীক কাজে তিনি দীর্ঘদিন থেকেই টঙ্গিতে বসবাস করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, সেই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি ও তার অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মীরা টঙ্গী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু তারা ঢাকায় যাওয়ার পূর্বেই খবর আসে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন। এরপর তারা আনন্দ মিছিল করতে করতে টঙ্গীতে ফেরার জন্য রওনা হন। কিন্তু ফেরার পথে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উত্তরা আজমপুর এলাকায় তাদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে। এসময় আমার শ্বশুরের মাথায় ও পেটে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জাহানা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে টঙ্গি মেডিকেল আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানাজা ও দাফন ৫ আগস্ট রাত ৯ টার দিকে টঙ্গীতে তার প্রথম জানাজার মানুষ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখান থেকে তার মরদেহ কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় রাত সাড়ে ৩ টার দিকে আমরা চৌদ্দগ্রাম এসে পৌঁছাই। পরদিন ৬ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকট আত্নীয়ের অনুভূতি আমার শ্বশুর অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন। তার এই মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। তাকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ চাই। এ বিষয়ে আমরা মামলা দায়ের করব। শহীদ শাখাওয়াত কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ইলাশপুর, ধনপুর গ্রামের আবদুল মজিদের পুত্র। তার বয়স হয়েছিলো ৬১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ মেয়ে ও এক পুত্র রেখে গেছেন। প্রস্তাবনা ১। রেখে যাওয়া সন্তানের ব্যবসার সম্প্রসারণে সহযোগিতা করা ২। হিফজ শেষ করে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ফাতেমা আক্তারের পড়ালেখায় সহযোগিতা করা। এক নজরে শহীদ শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাতের তথ্য শহীদের পূর্ণ নাম : শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত পিতার নাম : আব্দুল মজিদ মাতার নাম : আরাফাতের নেছা শহীদের জন্ম : ২ আগস্ট ১৯৬৪ পেশা/পদবী : ব্যবসা বর্তমান ঠিকানা : হোল্ডিং নং ১১২, আরিচপুর, টঙ্গী, গাজীপুর ঘটানার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ ঘটনার স্থান : আজমপুর, ঢাকা আক্রমণকারী : স্বৈরাচার সরকারের পুলিশ মৃত্যুর তারিখ ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট