জন্ম তারিখ: ১২ নভেম্বর, ২০১০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ছাত্র, সিরাজউদ্দীন সরকার বিদ্যানিকেতন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। শাহাদাতের স্থান : বিএনএস টাওয়ার এলাকা, উত্তরা।
সত্যের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ এর মধ্যেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিহীত। এ শ্রেষ্ঠত্ব যুগে যুগে লুফে নেয় তরুণ ছাত্র-জনতা। একজন সচেতন ছাত্র দেশ ও জাতির সক্রিয় কার্যকর প্রতিবাদী জনশক্তি। এ তরুণ ছাত্র সমাজ যখন কোনো যৌক্তিক বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে তখনই স্কুল পড়ুয়া কিশোর শহীদ মোহাম্মদ সামিউ আমান নুর ঐ গণবিপ্লবে নিজেকে সম্পৃক্ত করার জন্য উদগ্রীব হয়েছিল। সমাজে নম্র ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত কিশোর শহীদ মোহাম্মদ সামিউ আমান নুর ছিল সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এক লড়াকু তরুণ সৈনিক। তার দৃঢ়তা ও সাহস দেখে পরবর্তী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলতে প্রেরণা যোগাবে। শহীদ মো: সামিউ আমান নূর ২০১০ সালের ১২ নভেম্বর গাজীপুর জেলার পূর্ব আচিনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ আমানুল্লাহ ৫৭ বছর বয়সী প্রবাসি এবং মাথা শাহানুরা আমান গৃহিণী। মো: সামিউ আমান নূর সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। তার দুজন বোন আছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায়ও পারদর্শী ছিলেন তিনি। সামিউর শাহাদতে এলাকায় শোকে স্তব্ধ। সকলের কাছে খুবই পছন্দনীয় ছিলেন তিনি। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছাত্ররাই অজেয়- এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়। এ সফলতা যতটা না সরকার পরিবর্তন করে দেখিয়েছে তার চেয়ে বেশি পুরো রাষ্ট্র ও সমাজের বিকল অবস্থাকে সচল করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু দেশে ছাত্র বিক্ষোভে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পরিবর্তন আসে। যার সর্বশেষ উদাহরণ সৃষ্টি হয় বাংলাদেশে। ১ জুলাই ২০২৪ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। এর ফলে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে জনগণ নানান অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন ও জুলুমের নির্মম ভুক্তভোগী। এদেশের মুক্তিকামী জনতা সময়ের দাবিতে সাড়া দিয়ে এহেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারংবার রুখে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে হুংকার দিয়ে সংগ্রামী জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্রবৃন্দ। উপরন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সাক্ষী, দেশের ক্রান্তিকালে বরাবরই ছাত্রদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতি, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয় । আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, র্যাব সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই মুক্তিকামী জনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ নিরস্ত্র জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। আন্দোলনে যোগদান ছাত্র আন্দোলন 'সত্যের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ' এর মধ্যেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিহীত। এ শ্রেষ্ঠত্ব যুগে যুগে লুফে নেয় তরুণ ছাত্র-জনতা। একজন সচেতন ছাত্র দেশ ও জাতির সক্রিয় কার্যকর প্রতিবাদী জনশক্তি। এ তরুণ ছাত্র সমাজ যখন কোনো যৌক্তিক বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে তখনই তাদের যৌক্তিক দাবিগুলোর প্রাসঙ্গিকতা অনুভব করে মুক্তিকামী ছাত্র জনতার সাথে ঝাপিয়ে পড়ে মেধাবী অকুতোভয় বীর সৈনিক সামিউ আমান নূর। শাহাদাত বরণ বীর যোদ্ধা শহীদ মো: সামিউ আমান নূর ৫ আগস্ট সোমবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ জনতার সাথে যোগ দেয়। মুক্তিকামী ছাত্র জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন অবধারিত ছিল এবং অসংখ্য তাজা প্রাণের বিনিময়ে তা হলোও। সামিউ আমান বিকাল ৫.০০ ঘটিকার সময় উত্তরার বিএনএস ফ্লাইওভার এলাকায় বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার পোষা সন্ত্রাসীরা তখনো বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজয় মিছিলে জয়োল্লাসে মেতে উঠা নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ ও ঘাতক পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুহুর্তেই রাজপথ রূপ নেয় রণক্ষেত্রে; বিজয়ের আনন্দ হয়ে যায় শোকাচ্ছন্ন। পরিস্থিতির এক পর্যায়ে ঘাতকের ছোঁড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সামিউ আমান নূর। প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রতিকূল পরিস্থিতে ঘটনাস্থল থেকে সুকৌশলে তাকে উদ্ধার করে উত্তরা মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় সন্ধ্যায় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানাজা ও দাফন পরবর্তীতে শহীদের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার বাগমারা নিজ গ্রামে বিপ্লবী সামিউ আমানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শহীদ মো: সামিউ আমান নূর এর চাচা মোঃ নাসির উদ্দীন নিজের ভাতিজা সম্পর্কে জানান, সে আমার অত্যন্ত স্নেহের মেধাবী ভাতিজা ছিলেন। সে সবসময় হাসিমুখে মামা বলে ডাকতো। আমি খুবই স্নেহ করতাম। সে ইংরেজিতে কবিতা লিখতো এবং ক্রিকেট খেলায় পারদর্শী ছিলো। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আমিন। প্রস্তাবনা ৩. রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বকৃতি ও মর্যাদা প্রদান ২. শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ৩. ছোট বোনদের যাবতীয় খরচ বহন করা একনজরে শহীদ মো: সামিউ আমান নূর নাম : মো: সামিউ আমান নুর জম্ম তারিখ : ১২ নভেম্বর ২০১০ পেশা : ছাত্র প্রতিষ্ঠান : সিরাজউদ্দীন সরকার বিদ্যানিকেতন এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ঘটনার স্থান : বিএনএস ফ্লাইওভার এলাকা, উত্তরা আক্রমণকারী : স্বৈরশাসকের পেটুয়া ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪ বিকাল ৫.০০ টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট শহীদের কবরের অবস্থান : নিজ গ্রাম বাগমারায় স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ৩৩৮ কাজী নজরুল ইসলাম রোড, ইউনিয়ন: সিটি কর্পোরেশন, থানা: টঙ্গী, জেলা: গাজীপুর পিতা : মো: আমান উল্লাহ পেশা ও বয়স: ৫৭ বছর (প্রবাসী) মাতা : শাহনু আমান পেশা ও বয়স : গৃহিণী ও ৪৫ বছর মাসিক আয় : ৩০০০০ আয়ের উৎস : বাড়ি ভাড়া পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন