জন্ম তারিখ: ৫ জুলাই, ১৯৭৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : নিরাপত্তা প্রহরী। শাহাদাতের স্থান : গাজীপুর সদর হাসপাতাল।
মো: রুখতন মিয়া অকুতোভয় সৈনিক, যিনি জুলাই বিপ্লবের বীর শহীদ। তার জন্ম ৫ জুলাই ১৯৭৮ সালে, পিতা আদর আলী এবং মাতা সহর বানুর আদরের পুত্র তিনি। তার স্থায়ী ঠিকানা নারাচাতল ইউনিয়নের লুনেস্বর থানার আটপাড়া, জেলা নেত্রকোনা। বর্তমানে তিনি বাস করেন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার সফিপুর এলাকার আন্দারমানিক রোডে। পেশায় তিনি দারোয়ান হলেও, তার একমাত্র পরিচয় আজ চব্বিশের গর্বিত শহীদ, দেশ-মাতৃকার সাহসী সন্তান। তার আত্মত্যাগ আমাদের কাছে চিরকালীন এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আন্দোলন-সংগ্রাম-শহীদ বাংলাদেশে ২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া ছাত্র জনতার আন্দোলন, শহীদের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করলে, কিছু মূল বিষয় উত্থাপন করা যেতে পারে: শহীদরা আন্দোলনের চেতনাকে জীবন্ত রাখেন এবং অন্যদেরকে সংগ্রামের জন্য প্রেরণা দেন। তাদের আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মকে সামাজিক ন্যায় এবং উন্নতির জন্য আন্দোলন করার গুরুত্ব বুঝতে সহায়ক হয়। শহীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে সমাজের রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। শহীদের আত্মদানের মাধ্যমে ইতিহাসের একটি অংশ হিসেবে তাদের স্মৃতি চিরকাল মনে রাখা হয়। শহীদদের আত্মত্যাগ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদের একটি প্রতীক। তাদের সাহসী পদক্ষেপ অন্যদেরকে দুর্নীতি, নিপীড়ন ও সামাজিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে উৎসাহিত করে। শহীদদের আত্মত্যাগ অনেক সময় সমাজে বা দেশে ব্যাপক পরিবর্তন আনার প্রেরণা দেয়। আন্দোলন সফল হলে তা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি মাধ্যম হয়। শহীদরা সংগঠনের শক্তি ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করেন। তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়ে একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে। শহীদের গুরুত্ব শুধু তাদের আত্মত্যাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তারা আন্দোলনের একটি স্থায়ী চিহ্ন হয়ে ওঠেন, যাদের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের সংগ্রাম চলতে থাকে। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়। আন্দোলনটি ছিল কোটা বিরোধী আন্দোলন। ফ্যাসিস্ট এই আন্দোলন দমন করতে প্রয়োগ করে শক্তি। প্রয়োগ করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য শব্দ। বিস্ফোরিত বিক্ষোভে আন্দোলন রূপ নেয় বৈষম্যবিরোধী নামে। তারপরই শুরু হয় তুমুল নির্যাতন। নির্যাতনে আন্দোলনকারীরা হারাতে থাকেন নিজের চোখ, হাত, জবান ও জান। রাজপথ রক্তের বন্যায় প্লাবিত হয়। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আন্দোলন দাঁড়িয়ে যায় এক দফায়। পনর বছর বাংলাদেশের ঘাড়ের উপর বসা দৈত্যের পতনের আওয়াজ ওঠে। সরকার পতনের দাবীতে রাজপথ নাচতে থাকে। এই দাবী সফল হয়। পালিয়ে যায় হাসিনা। শহীদের রক্ত, শহীদের ত্যাগ আমাদের সম্বল। একটি দেশ, জাতি, সংগঠনের প্রেরণা। তারা বর্তমান ও ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা। গত হওয়া গৌরবময় ইতিহাস। এই ইতিহাস চর্চা করা জেনারেশনের দায়িত্ব। তাদের ভুলে গেলে, তারা অবমূল্যায়নে পড়লে ক্রান্তিকালে উদ্ধারের সূত্রশূন্য হয়ে যাবে। শহীদরা আমাদের বীর। আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। আমরা তাই শ্রদ্ধার কণ্ঠে বলি লও লও লও সালাম হে আমার বীর ভ্রাতা। শহীদ রুখতন মিয়া আমার বীর ভ্রাতা। তোমায় সালাম। যেভাবে শহীদ হন ৫ আগস্ট খুনি, ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যায়। লাখো জনতার উত্তাল স্লোগানে কেঁপে ওঠে হাসিনার গদি। চোরের মতো পালাতে বাধ্য হয়। জনস্রোত নামে বিজয়ের মিছিল নিয়ে। মোঃ রুখতন মিয়া দ্রুত বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। তার মনেও আনন্দের দোলা। ঘর ছাড়েন আগস্টের ৫ তারিখে আনুমানিক ৩ টা ৩০ মিনিটে। বিজয় মিছিল পৌঁছে সফিপুর আনসার একাডেমির ১ নং গেটে। মিছিল ১ নং গেটে আসতেই মিছিলে মুহুর্মুহু গুলি ছুঁড়ে হাসিনার দোসরবাহিনী। সময় তখন বিকাল প্রায় চারটা। রুখতন মিয়া মিছিলের সম্মুখভাগে। পনের বছর কথা বলতে পারেনি। স্তব্ধ ছিল মুখ। রুদ্ধ ছিল জবান। স্বৈরাচার, জালিম হাসিনার পালানোর খবরে আনন্দে মিছিল আত্মহারা। মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশে ছুঁড়ে ছুঁড়ে প্রকাশ করছেন আনন্দ। হঠাৎ গুলির শব্দে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আনসারের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন রুখতন মিয়া। বিজয় মিছিল মূহুর্তে বিষাদময় হয়ে যায়। সঙ্গীরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান গাজীপুর সদর হাসপাতালে। সন্ধ্যা প্রায় ৬ টায় চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লাশ স্বজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জানাযা ও দাফন পরবর্তীতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জন্মস্থান নেত্রকোনায়। সেখানে জানাজা শেষে কবর দেওয়া হয় স্থানীয় কবরস্থানে। প্রতিবেশীর বক্তব্য রেনা বেগম রুখতন মিয়ার প্রতিবেশী। তার মতে রুখতন মিয়া একজন ভালো মানুষ। তিনি কারও সাথে কখনও খারাপ আচরণ করতেন না। সবার সাথে মিলেমিশে থাকতেন। আমেনা বেগম বলেন রুখতন মিয়া কখনও কারও সাথে কটু কথা বলতেন না। তিনি ছিলেন সাহসী মানুষ। অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। ব্যক্তি হিসেবে খুব ভাল ছিলেন। পারিবারিক অবস্থা মোঃ রুখতন মিয়া দরিদ্র পরিবারের সন্তান। নিত্যদিনের সঙ্গী তার দুঃখ ও দারিদ্রতা। গ্রামের বাড়িতে দুই শতক জমি তার সম্বল। জীবনে সঞ্চয়ের কিছু নেই। পেশায় তিনি দারোয়ান। স্বল্প বেতন। কষ্টে জীবন যাচ্ছে। তার তিন ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে সাব্বির। বয়স ২৪ বছর। পিতার সংসারে সহযোগিতা করতে তিনিও বেছে নেন শ্রমিক জীবন। মেঝো ছেলে রাব্বির বয়স ২০ বছর। তিনি কাঁচামালের ব্যবসা করেন। ছোট ছেলে তোফায়েল ৯ম শ্রেণী আর মেয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ছেন। স্ত্রী ও ১ মেয়ে ও ৩ ছেলে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বাড়ি নেই,ঘর নেই,সঞ্চয়হীন জীবন। কষ্ট তাদের নিত্য সঙ্গী। পরিবারের প্রধান মৃত্যু বরণ করায় তারা এখন বিপর্যস্ত। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব নাজুক। জীবন চালানো খুব কষ্টের। প্রস্তাবনা ১ • শহীদের পরিবার নিঃস্ব। প্রথমেই তাদের এককালীন অনুদানের দরকার। • স্থায়ী বাসস্থানের দরকার। • স্ত্রীকে দর্জি কাজ শিখিয়ে সেলাই মেশিন কিনে দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেওয়া যায়। • দুধালো গাভীও কিনে দেওয়া যায়। প্রস্তাবনা ২ • ছেলেদের ব্যবসার পুঁজি দিয়ে কর্মক্ষম করে দেওয়া। • লেখাপড়া যারা করছে তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া। প্রস্তাবনা ৩ • নিয়মিত মাসিক ভাতা চালু করা। • মেয়েকে বিয়ের সময় বিয়ের খরচ দেওয়া। শহীদ মো: রুখতন মিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্যসমূহ নাম : মো: রুখতন মিয়া জন্ম তারিখ : ০৫-০৭-১৯৭৮ পিতা : আদর আলী মাতা : সহর বানু স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নারাচাতল, ইউনিয়ন: লুনেস্বরম থানা: আটপাড়া জেলা: নেত্রকোনা বর্তমান ঠিকানা : আন্দারমানিক রোড, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর