জন্ম তারিখ: ১ মার্চ, ১৯৯২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : প্রাণ কোম্পানীর ডিএসআর, টঙ্গী। শাহাদাতের স্থান : উত্তরা পূর্ব থানার সামনে।
মোঃ সুজন মিয়া ১৯৯২ সালের পহেলা মার্চ গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা সদরের খোলা হাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সুজা মিয়া মৃত এবং মাতা ছালমা বেগম ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা। তিনি পিতা মাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। পারিবারিক জীবন পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তিনি গাজীপুরে আসেন এবং প্রাণ কোম্পানির ডি এস আর এ যোগদান করেন। সন্তানগুলোকে কুরআনে হাফেজ বানারই তার স্বপ্ন ছিলো। সে জন্য দুই সন্তানকেই হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেন এবং তিনি তার টাকা দিয়ে মা ও স্ত্রীর ব্যয় বহন করতেন।তার বেতন দিয়ে ভরণ পোষণ কঠিন হওয়ায় তার স্ত্রী অন্যত্র বাসা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো। তাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই করুণ। উল্লেখযোগ্য সুজন মিয়ার একটি কন্যা সন্তান আছে তার বয়স ১১ বছর সে স্থানে একটি হেফজ মাদ্রাসায় হাফিজি পড়াশোনা করছেন এবং একটি ছেলে আছে সেও হেফজ মাদ্রাসায় হাফিজিয়া অধ্যায়নরত। মোঃ সুজন মিয়া ভাল মানুষ হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত ছিলেন। আন্দোলনে যোগদান টঙ্গী হোসেন মার্কেট থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে সুজন মিয়াদের মিছিল যাচ্ছিলো উত্তরার দিকে। উত্তরা থানার সামনে আসলে ভারতীয় পুলিশ,হাসিনার পোষা পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে। জনৈক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান মতে সুজন মিয়া ভারতীয় পুলিশের গুলিতে নিহত হন । একটি স্বাধীন দেশকে করদ রাজ্যে পরিনত করেছিল হাসিনা। ৫ আগস্টে সে পালিয়ে যায় ভারতে। তার আগে দেশে চালায় গণহত্যা। নির্মমভাবে হত্যা করে ছাত্র জনতাকে। জুলাইয়ের শুরুতে আন্দোলনের সূত্রপাত। কোটা সংস্কার আন্দোলনই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলনটি ছিল অহিংস। সরকার এই আন্দোলন দমন করতে প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের সব বাহিনীকে। মাঠে নামায় দলীয় সন্ত্রাসীদের। যুদ্ধাবস্থার মতো হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুঁড়ে। মানুষ নিজ বাসভবনেও খুন হন। মুক্তিকামী জনতা আরও ক্ষুব্ধ হয়। ছাত্র আন্দোলন জনতার আন্দোলন হয়ে যায়। বেজে ওঠে হাসিনার বিদায় ঘন্টাধ্বনি। সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নামে। অবরুদ্ধ মানুষ মুক্তি প্রত্যাশী হয়ে ওঠে। দীর্ঘ ষোল বছরের হিসাব মেলাতে তারা আন্দোলনে শরিক হয়। অবশেষে পালিয়ে যায় নরখেকো হাসিনা। ৫ আগস্টের দুপুরে বিশেষ বিমানে ভারত চলে যায় শেখ কন্যা। মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ মুজিব আশ্রয় নিয়েছিল পাকিস্তানে। জেলখানা ছিল ছদ্মাবরণ। দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হল প্রতিবেশীর তাবেদারী থেকে। সকল আওয়ামী নেতাকর্মীদের তোপের মুখে রেখে হাসিনাও পালিয়ে গেলেন। মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হল। শাহাদাত বরণ গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের খবরে যে বিজয় মিছিল শুরু হয় সেই বিজয় মিছিলের সাথে যোগদেন শহীদ মোহাম্মদ সুজন মিয়া। তিনি মিছিলের সাথে সাথে টঙ্গীর হোসেন মার্কেট থেকে উত্তরার দিকে গিয়েছিলেন। শান্তিপ্রিয় মিছিলটি উত্তরায় আসলে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের সন্ত্রাসী পুলিশবাহিনী মিছিলটির দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি জানান উত্তরা থানার সামনে গেলে হাসিনা সরকারের ফ্যাসিস্ট পুলিশ, ভারতীয় পুলিশ কর্তৃক গুলিতে মাথার এক পাশ থেকে গুলি প্রবেশ করে অন্যপাশ দিয়ে বেরিয়ে যাই। সাথে সাথে তিনি মাটিতে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। আনুমানিক বিকেল পাঁচটা ত্রিশ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। জানাজা ও দাফন হাসপাতাল থেকে শহীদ সুজন মিয়ার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর সময় ছিল ৫ আগস্ট আনুমানিক ৫.৩০ টা। প্রতিবেশীর বক্তব্য এলাকায় সুজন মিয়া একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি সহজ, সরল এবং মিশুক মানুষ। কারও সাথে কোন ঝগড়াঝাঁটিতে যেতেন না। প্রস্তাবনা ১। প্রাথমিকভাবে এককালীন অনুদান প্রদান। ২। মাসিক ভাতা প্রদান। ৩। স্ত্রীকে সেলাইমেশিন কিনে দেওয়া। ৪। বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া। ৫। সন্তানদের এতিমখানার আওতায় এনে শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলা। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: সুজন মিয়া জন্ম তারিখ : ০১-০৩-১৯৯২ পিতা : মো: সুজা মিয়া মাতা : মোছা: ছালমা বেগম গ্রাম : খোলাহাতা, ইউনিয়ন: পৌরসভা থানা : গাইবান্ধা সদর, জেলা: গাইবান্ধা বাসা : ২২১ হাজী আবুল হাসেম বাড়ি, এলাকা: আউচপাড়া মুক্তারপাড় থানা : টঙ্গী, জেলা: গাজীপুর সদস্য : ৪ জন; এক ছেলে,এক মেয়ে, মা ও স্ত্রী। মেয়ের বয়স ১১ বছর ও ছেলে ৯ বছর