জন্ম তারিখ: ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ছাত্র ও দোকান কর্মচারী, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর-৬, ডা: আজমল হাসপাতাল লিমিটেড।
২০০৬ সালের ০৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নে উত্তর বাহেরচর এলাকায় নুরে আলম ও মাহমুদা দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শহীদ ফয়জুল ইসলাম রাজন। পিতা-মাতার বিচ্ছেদ হওয়ায় রাজন ও তাঁর দুই সহোদর মায়ের কাছেই লালিত পালিত হয়েছেন। শাহাদাত বরণের পূর্বে মিরপুরের ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। একটি দোকানে কাজ করে যোগাড় করতেন নিজের লেখাপড়ার খরচ। ১৯ জুলাই ২০২৪ মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে নামলে পুলিশের গুলি ভেদ করে রাজনের বুক। জনমনে অসন্তুষ ২০০৮ সালে এক প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। দলপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে সুশাসনের কথা বললেও ক্ষমতায় এসে রুপ বদলায়। ধীরে ধীরে ভালো মানুষের চাদরে ঢাকা স্বৈরাচারের আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে থাকে। ক্রমেই দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্বৈরাচারি শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে। দিনের ভোট রাতে, একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার ঘৃণ্য কালচার সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় দুর্নীতি, ঘুষ, মাদক, চোরাচালান, অর্থ পাচার, ব্যাংক লুট, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ, দলীয় লোকদের দিয়ে জনগনের সম্পদ লুট, দ্রব্য মূল্যের মাত্রাতিরিক্ত উর্দ্ধগতি ইত্যাদির মাধ্যমে দেশকে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি, ঘুষের মাধ্যমে দলীয় অযোগ্য লোকদের নিয়োগ, কোটা প্রথার মাধ্যমে মেধাবীদের বঞ্চিত করাসহ নানাবিধ বৈষম্য তৈরি করা হয়। বৈষম্য চরম আকার ধারণ করলে জনমনে অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে। ২০১৮ সালে ছাত্ররা কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করে। সেখানে আন্দোলনকারীদের উপর সরকার দলের ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহীনি হামলা চালায়। তাতেও আন্দোলন থামাতে না পেরে এক নির্বাহী আদেশে কোটা প্রথা বাতিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কার্যত কোন বাস্তবায়ন দেখা যায় না। ২০২৪ সালে আবারও এই বিষয়টা সামনে চলে আসে। আদালতের এক আদেশে সরকারের নির্বাহী আদেশকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় আন্দোলন। কোটার নামে চরম বৈষম্য এদেশের মুক্তিকামী মানুষ বরদাস্ত করতে পারে না। একদিকে বৈষম্য আর জনগনের মনে চেপে থাকা দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ আন্দোলনে ফেটে পড়ে। শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থাকলেও তা ক্রমেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ সরকারের পতনের এক দফা আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়। আন্দোলন দমনে সরকার মরিয়া হয়ে উঠে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিবি, আনসার বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সরকার আন্দোলনকারীদের উপর নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। গুলি করে মানুষ হত্যা করে। সরকারের বাহিনীদের সাথে যুক্ত হয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বন্দুকধারী হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা। শাহাদতের প্রেক্ষাপট গত ১৯ জুলাই ২০২৪ বিকাল ৫.০০ টায় মিরপুর-১০ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নরপশু নেতাকর্মীরা। তাদের ছোড়া গুলিতে ফয়জুল ইসলাম রাজন গুলিবিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত রাজনকে মিরপুর-৬ এলাকার ডাক্তার আজমল হাসপাতাল লিমিটেডে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের অনুভূতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৯ জুলাই ২০২৪ ছিল ভয়ংকর একটি দিন। রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফয়জুল ইসলাম রাজন। তার বুক ভেদ করে বেরিয়ে যায় বুলেট। ক্ষতচিহ্ন রেখে যাওয়া টি-শার্ট জড়িয়ে এখনও ডুকরে কাঁদেন তার মা। আদরের ছোটভাইয়ের মরদেহ নিজ হাতে গোসল করানোর মুহুর্তটা এখনো ভুলতে পারছেন না রাকিব। তিনি বলেন, ‘আমি এবং মহল্লার একজন ভাইয়ের মরদেহ গোসল করানোর সময় আমার মাথা ঘুরেছে। ছোট ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ মরদেহ গোসল করাতে কষ্ট হয়েছে। এরপরেও আমি আমার চোখ ঢেকে নিজ হাতে ভাইকে গোসল করিয়েছি। ভাই হারানোর বেদনা কত কষ্টের তা বুঝাতে পারবোনা। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।’ রাজনের মা বলেন, ‘গুলিটা বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে। ঘটনার দিন আমার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই আজোয়া হাসপাতালে রাত দেড়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে লাশ নিয়ে আসে। আমি এই হত্যা কাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।’ পারিবারিক আর্থিক বিবৃতি ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নে উত্তর বাহেরচর এলাকায় রাজনের মায়ের সংসার। ৯ বছর আগে স্বামী অন্য সংসার গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তিন সন্তান নিয়ে শুরু হয়েছিল তার জীবন সংগ্রাম। ছোট ছেলের মৃত্যুর পর কিছুদিন আগে চাকরি হারিয়েছেন বড় ছেলেও। প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারে মাসিক সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদের বড় ভাইকে কর্মসংস্থান করে দেয়া যেতে পারে ৩. শহীদের পরিবারের বাসস্থান প্রয়োজন। নির্মাণে সহযোগিতা করা যেতে পারে। একজনরে শহীদের তত্থ্যাবলি পূর্ণনাম : শহীদ ফয়জুল ইসলাম রাজন পিতা : মো: নুরে আলম মাতা : মোছা: মাহমুদা পেশা : ছাত্র ও দোকান কর্মচারী প্রতিষ্ঠান : মিরপুর ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজ, একাদশ শ্রেণি, মানবিক বিভাগ, রোল: ৭৬২৮ জন্মসাল : ২০০৬ সালের ০৬ সেপ্টেম্বর স্থায়ী ঠিকানা : কেরানীগঞ্জ, কলাতিয়া, উত্তর বাহেরচর, ঢাকা আহতের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, মিরপুর-১০ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সংলগ্ন নিহতের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, মিরপুর-৬ ডা: আজমল হাসপাতাল লিমিটেড, বিকাল ৫.০০ টা