জন্ম তারিখ: ২০ অক্টোবর, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : চাকুরি, গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : সাদবদী বাস স্ট্যান্ড, সোনালী টাওয়ার, নরসিংদী।
দীর্ঘ ষোলো বছর বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশীদের উপর, বিশেষ করে এদেশের মুসলমানদের ঘাড়ের উপর সিন্দাবাদের ভুতের মতো চেপে বসে মেটিকিউলাস ডিজাইন এক্সপার্ট খুনি হাসিনার শত সহস্র অপকর্মের বিরুদ্ধে সর্বশেষ আন্দোলন তথা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে রাজপথে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করা এক সাহসী তরুণ শহীদ মোঃ শাওন। পরিচয় শহীদ মো: শাওন ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর নরসিংদী জেলার ইসলামাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৃত মো: মজিবুর মিয়া এবং মাতা মোসাঃ হাসিনা বেগম। শহীদ শাওনের দিনকাল পিতা অসুস্থ হওয়ার পরে মো: শাওন অভাবের সংসারে নিজের পড়াশুনা বাদ দিয়ে চাকুরীতে যোগদান করেন। ২ বছর আগে শহীদের পিতা ইহজগৎ ত্যাগ করেন। শাওন গত ৪/৫ বছর ধরে শফি টেক্সটাইলে একজন শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। সকালে নাস্তা করে ডিউটিতে যাওয়া। ডিউটি শেষ করে এসে ফ্রেশ হয়ে পরিবারের কাজে সহযোগিতা করা। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, গল্প করা। ছুটির দিনে ঘুরতে যাওয়া। মাকে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে সময় দেয়াসহ ইত্যাদি ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকা। পত্র-পত্রিকা পড়া। দেশ বিদেশের রাজনৈতিক খোঁজ খবর রাখা। এগুলোই ছিলো শহীদ মোঃ শাওনের প্রতিদিনকার রুটিন। গত ষোলো বছরে বাংলাদেশ মাথায় পট্টি আর হাতে তসবিহ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারী দিনের ভোট রাতে করা ভোট-ডাকাতদের ডাকুরানী হাসিনা টানা চতুর্থ বারের মতো প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রের অস্ত্রের মুখে ২০২৪ সালে ড্রাকুলার মতো আবারো হরন করে জাতির ভবিষ্যত; শুষে নেয় মানুষের মৌলিক অধিকার; গিলে খায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব। নিজেকে একচ্ছত্র অধিপতি মনে করা কাঁঠালরানী খ্যাত হাসিনা এই দেশ রাষ্ট্রকে তার বাপ-দাদার রেখে যাওয়া জমিদারি সাব্যস্ত করে চরম নির্লজ্জতার সাথে। ধূর্তবাজ, মূর্খ, গোবর-মগজে হাসিনা নিজেকে দেখে খেঁকশিয়াল হিসেবে আর দেশের আমজনতাকে দেখে, কখনো তুলতুলে মাংসোল খরগোশ; কখনো কুড়মুড়ে হাড্ডিসার কানাবগি। এই দেশটা যেন তার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটা খামার। আর দেশের মানুষগুলো যেনো সেই খামারের গরু-ছাগল-গাধা-ভেড়া-বকরির বিশাল এক পাল। ভিনদেশী হিংস্র জানোয়ার ব্যাঘ্র দাদারা যখন যা চায়; যাকে চায়, পরকিয়াপ্রেমী আওয়ামী সরকার তাকে নিয়েই বলি করে স্বামীর মতো প্রতিবেশী দেবতার চরণে। 'ভাঙা আর শাসন করা'য় প্রশিক্ষিত কাঁঠালরানী এই দেশ এই জাতিকে বিভিন্নভাবে ভেঙে টুকরো টুকরো করে শাসন শোষণ করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। সকল ধরনের অন্যায়-অত্যাচার-অবিচার-অনাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন মাথার উপর চাপিয়ে দিয়ে বিরোধী দলমত দমন করা তার স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য। আর টানা ষোল বছর ধরে সাম্রাজ্যবাদের ঔপনিবেশিক ঔরসে অবৈধ গর্ভপাতের ফসল সন্ত্রাসবাদী অপরাজনীতির কূটকৌশল দমন-পীড়ন নীতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের উপর প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজের জন্য খাল কেটে কুমির ডেকে আনে নৈরাজ্যের উত্তরসূরী স্বৈরাচারী হাসিনা। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন নামে রাজপথে ফিরে আসে। সরকার আগের বারের মতো এবারো নানা কূটচালে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে চেয়েছিল শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে ব্যাপক সারা জাগানো এই আন্দোলনক; কিন্তু না। সেবার ঘুঘু এসে ধান খেয়ে গেলেও এবার আর পারলো না। এবার শিক্ষার্থীরা অনেক সচেতন। তারা লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিলো। আর শিক্ষার্থীদের এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ডাকে সারা দিলেন শহীদ মো: শাওন। সকল ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি এই আন্দোলনের সর্বশেষ খবর রাখার চেষ্টা করতেন। কিছু কিছু বন্ধুকেও যুক্ত করেন এই আন্দোলনের সাথে। তাঁর ফুফাতো ভাই মো: আক্তার হোসেন নিরব একসাথেই চলাফেরা করতো। তাকেও তিনি আন্দোলনে যোগদান করালেন। এভাবে একে একে প্রায় অধিকাংশ বন্ধুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে যোগ দিলেন শহীদ শাওন। কোনো কোনো বন্ধু তো নিজে থেকেই প্রস্তুত ছিলো, শাওন বলার সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেল। এভাবে একদিন দুইদিন করে যত দিন যাচ্ছে ততই যেন চাঙা হয়ে যাচ্ছে আন্দোলন। দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবে না তারা। শিক্ষার্থীদের এমন কঠিন অবস্থান দেখে স্বৈরাচার সরকার গুলি করলো নিরহ নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর। ১৬ জুলাই রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদসহ সারা দেশে প্রায় ৬ জন শিক্ষার্থী শাহাদাত বরণ করেন। ১৭ জুলাইও হত্যাকাণ্ড চালায় হাসিনা সরকার। ১৮ জুলাই এক প্রকার গণহত্যা করে রক্তপিপাসু ড্রাকুলা পিশাচ হাসিনা। শহীদ মোঃ শাওন এবার আর ঘরে বসে থাকতে পারলেন না। খুনি সরকারের এই ন্যাক্কারজনক কাজের প্রতিবাদ না করলে আর হচ্ছে না। আন্দোলনে যোগদান সর্বপ্রথম ১৮ জুলাই ২০২৪ মাধবদী বাসস্ট্যান্ডে সমবেত জনতার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন শহীদ মোঃ শাওন। সেদিন ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিত হামলা করে আওয়ামী সরকারের দোসর খুনি দূর্নীতিবাজ পুলিশবাহিনী। তারা ছাত্র-জনতার সমাবেশ লক্ষ্য করে টিয়ারগ্যাস, ছররাগুলি, রাবার বুলেটসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে। তব্ওু থামে না আন্দোলনকারীদের সম্মিলিত কন্ঠে উচ্চারিত স্লোগান। থামে না ' নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার ' ধ্বনি। বরং দিগুণ, তিনগুণ, শতগুণ শক্তিতে উচ্চারিত হচ্ছে ছত্র আন্দোলনের নতুন নতুন বিভিন্ন জাগরণী স্লোগান। কিন্তু অনবরত গুলি আর কাঁদানো গ্যাসের সামনে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়? ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে আহত, নিহতের সংখ্যা। চারদিকে মানুষের চিৎকার আহাজারি। কে কাকে কিভাবে সাহায্য করবে তারও কোনো দিশা নাই যেন। আন্দোলনকারী যোদ্ধারা একজনের পাশে লুটিয়ে পড়ছেন অন্যজন। একটা রাবার বুলেট এসে শহীদ শাওনের পিঠে লাগে। অবশেষে চরিত্রহীন পুলিশের অনবরত আক্রমণে সেদিনের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন। শহীদ মো: শাওন পিঠে রাবার বুলেট নিয়ে ছুটে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার ঘটনাস্থলে যান কাউকে উদ্ধার করা লাগবে কি না তা দেখার জন্য। অবশেষে বন্ধু আর সহযোদ্ধাদের সাথে পরের দিন আবার সমাবেশ বা বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর বাড়ি ফিরে আসার পর শহীদ শাওনের মা তাঁকে আর আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন এসব করে আমাদের লাভ কি? আজকে যেহেতু গুলি খেয়ে বেঁচে এসেছিস তাহলে কালকে আর যাসনে বাবা। শহীদ শাওন মায়ের কথায় কোনো উত্তর দেন না। তাঁর মাথায় শুধু আন্দোলনের চিন্তা। যাকে যাকে বলার আজকেই বলে রাখতে হবে। তাই মাকে আপাতত একটা বুঝ দিয়ে শান্ত করলেন শহীদ শাওন। শহীদ হওয়ার ঘটনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার শহীদ মো: শাওন তাঁর নিজ এলাকার মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়েন। তারপর মসজিদের পাশে দাঁড়িয়েই উপস্থিত বন্ধু আর এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা সেরে নেন। সবাই ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে। অতঃপর তিনি বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে যান। মাকে বলতে খুব ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু না! মা জানতে পারলে কোনভাবেই আন্দোলনে যেতে দিবেন না। তাই মায়ের কাছে বিদায় বা দোয়া নেয়ার বাসনা আপাতত কোরবানি করা হলো। শহীদ মো: শাওন বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ একা একাই হাঁটলেন। একটু সামনে গেলে তাঁর সাথে যোগদেন আরও দুই বন্ধু। তিনজন হেঁটে আর একটু সামনে গেলে তাঁদের সাথে যোগ দিলেন আরও তিনজন ছাত্র। এবার ছয়জনের দল মহল্লার সরু রাস্তা পার হয়ে বড়ো রাস্তায় উঠলে তাঁদের সাথে যোগদান করেন অপেক্ষারত ৫ জন এলাকাবাসী। এখানে এসে শহীদ মোঃ শাওনের মনে পড়লো ফুফাতো ভাই আক্তার হোসেন নিরবের কথা। সে তো এখনো আসেনি। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে ফুফাতো ভাইকে কল করলেন তিনি। ওপাশ থেকে তাঁর ফুফাতো ভাই জানালো যে সে একটু দূরে আছে। তার পৌঁছাতে আরও কিছুক্ষণ সময় লাগবে। অতঃপর নিরবকে ছাড়াই তাঁরা রওনা দেন গন্তব্যস্থান মাধবদী চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকেই মূলত আন্দোলন শুরু হবে। আরও কিছুক্ষণ হাঁটার পর তাদের দলে যোগ হন আরও ৪ জন। তাঁদের চলার পথে এখনো সেনাবাহিনী, বিজিবি বা পুলিশ দেখা যায়নি। এটা একটা ভালো দিক। তবে কখন যে চলে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সবসময় চোখ কান খোলা রাখতে হবে। আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁরা পৌঁছে গেলো নির্ধারিত পয়েন্ট মাধবদী বাসস্ট্যান্ড সোনালী টাওয়ারের সামনে। এই টাওয়ারের মালিক আওয়ামীলীগ নেতা পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক। এখানে অনেক লোকের সমাগম। এখান থেকেই শুরু হবে বিক্ষোভ মিছিল। সবাই প্রস্তুত বিক্ষোভ মিছিলের জন্য। এমন সময় অতর্কিত গুলি! শহীদ মো: শাওন লুটিয়ে পরলেন রাস্তায়। তাজ্জব ঘটনা চারপাশে তো প্রশাসন বা অন্য কোন বাহিনীর কাউকে চোখে পড়ছে না! তাহলে? হ্যাঁ গুলি তো আসছে উপর থেকে! সোনালী টাওয়ারের দিক থেকে! ওদিকে তাকালেই সবাই দেখতে পায় সোনালী টাওয়ারের উপরে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা স্বৈরাচারের লেলিয়ে দেয়া কুকুর, আওয়ামী সন্ত্রাসী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক তার অস্ত্রধারীদেরকে নিয়ে ছাত্রজনতার উপর একযোগে গুলি ছুঁড়ছে! কিছু বুঝে ওঠার আগে আবার গুলি। আবার একজন পড়ে গেলেন রাস্তায়। এতক্ষণে সবাই ছুটাছুটি শুরু করেছে নিরাপদ অবস্থানের খোঁজে। গুলি আসছে উপর থেকে। মানুষ পালাচ্ছে এদিক সেদিক। কেউ একজন তুলতে এলেন শাওনকে। সাথে সাথে গুলিবিদ্ধ হলেন তিনিও। উপর থেকে বৃষ্টির মতো ছুঁড়ছে গুলি আর নিচে অসহায় মানুষের দৌড়াদৌড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যে গুলির শব্দ বন্ধ হয়ে গেলো। অর্থাৎ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলি ফুরিয়ে গেছে। ওরা এখন দ্রুত গতিতে নিচে নেমে আসছে। ছাত্র-জনতাকে আহত করার জন্য। এবার সাহসী কয়েকজন ছাত্র আর কয়েকজন যুবক ছুটে গেলো তাদের প্রতিরোধ করতে। মোঃ শাওন হঠাৎ একটা হিচকি দিয়ে বমি করে দিলেন। তারপর নিথর হয়ে পড়ে রইলেন আবার। কয়েকজন এসে শাওনকে তুলে নিলেন রাস্তা থেকে। বড়ো একটা গ্রুপ পথ আটকে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের। বাকিরা এসে সকল আহতকে তুলে নিয়ে ছুটলেন সদর হাসপাতালের দিকে। ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল শহীদ মো: শাওন সহ অন্যান্য আহতদের নিয়ে সদর হাসপাতালের দিকে ছুটছেন ছাত্র-জনতা। ভ্যান, রিকশা ও অটো ছাড়া আপাতত আর কোনো উপায় নেই। অনেক অনুরোধ করেও পাওয়া যায়নি এম্বুলেন্স। তাদেরও তো জীবনের ঝুঁকি আছে। সবাইকে নিয়ে নরসিংদির সদর হাসপাতালে পৌঁছালে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। বলে, প্রশাসন থেকে নির্দেশনা আছে, যেকোনো সরকারি বা আধা সরকারি বাহিনী অথবা সরকার দলীয় কারো দ্বারা আহত বা নিহত কেউ সরকারি হাসপাতালে এলাউ না। ভর্তি তো দূরের কথা, আমরা ধরেও দেখতে পারবো না। এই সব ফ্যাসিস্ট কথাবার্তা শুনে কয়েকজন ছাত্র তাদের সাথে ঝামেলা করতে গেলে তারা প্রশাসনকে ডেকে আনার হুমকি দেয়। কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন, "ভাই শুধু শুধু এখানে ঝামেলা করছেন কেনো। আমাদের হাত পা বাঁধা। আপনারা কাল বিলম্ব না করে দ্রুত অন্য কোথাও চেষ্টা করুন।" আর নিথর শাওনের দিকে আঙুল ইশারা করে বললেন, "ওনাকে নিয়ে লাভ নাই। উনি মৃত্যুবরণ করেছেন। দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে পারেন।" অবশেষে ধরে না দেখলেও ডাক্তারের মুখের এমন শক্ত ঘোষণায় সবাই বুঝতে পারলো, তরুণদের উদাহরণ মো: শাওন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হলেন। ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। জানাজা ও দাফন কাফন পরবর্তীতে নিজ গ্রামে শহীদ শাওনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে আলগী মোনোহরপুর কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। হৃদয় বিদারক অনুভূতি শহীদ মো: শাওনকে নিয়ে ছাত্র-জনতা তাঁর বাড়ি পৌঁছালে এক শোকাচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শহীদের মা যেন বিমূর্ত পাথর। প্রিয় ভাই, বন্ধুরা যেন থামাতে পারছেনা কান্না। পারিবারিক অবস্থা শহীদ শাওনের বিধবা মা হাসিনা বেগম (৪৫) একজন গৃহিণী। শাওনের বড়ো ভাই মোঃ রবিউল (২৬) সৌদি প্রবাসী। তাঁর আর এক বড়ো ভাই মোঃ অলিউল্লাহ (২৪) দোকানে চাকরি করেন। পরিবারটির আয় ৩০০০/- টাকা; যা ঘরভাড়া থেকে আসে। ঘরভাড়া ছাড়া অয়ের অন্য কোন উৎস নেই। বর্তমানে ৫টি ঘর ভাড়া দেওয়া আছে, তারা নিজ বাড়িতে থাকে। বাড়ির জায়গা পরিমাণ ৩.৭৫ শতাংশ। শাওনের বাবা ২ বছর পূর্বে মারা গেছেন। আধাপাকা বাড়িতে গোটা পরিবার বসবাস করছেন। শাওনের কোন ঋণ নেই। প্রস্তাবনা মায়ের জন্য নিয়মিত বিধবা ভাতা এবং শাওনের ইমিডিয়েট বড়ো ভাইয়ের জন্য স্থায়ী কোন ব্যবসা বা দোকান করে দেয়া যেতে পারে। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি শহীদের পূর্ণ নাম : মো: শাওন জন্ম : ২০ অক্টোবর ২০০৫ জন্মস্থান ও নিজ জেলা : ইসলামাবাদ, নুরালাপুর, নরসিংদী সদর, নরসিংদী পেশা/পদবী : চাকুরি, গার্মেন্টস কর্মী কর্মরত প্রতিষ্ঠান : শফি টেক্সটাইল স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : আলগী মনোহরপুর, ইউনিয়ন : নুরালাপুর, থানা: মাধবদী, জেলা : নরসিংদী পিতার নাম : মো: মজিবুর মিয়া (মৃত) মাতার নাম : মোসা: হাসিনা বেগম মায়ের পেশা ও বয়স : গৃহিণী (৪০) আয়ের উৎস : ৩০০০/- ঘর ভাড়া পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৩ জন। মা এবং ২ ভাই ঘটনার স্থান/পয়েন্ট/এলাকা : সাদবদী বাস স্ট্যান্ড, সোনালী টাওয়ার আক্রমণকারী/আঘাতকারীর : মো. মোশারফ (মেয়র, মাধবদী পৌরসভা) আহত হওয়ার সময়কাল : ৪টা ৩০ মিনিট মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, ৪টা ৩০ মিনিট, সাদবদী বাস স্ট্যান্ড, সোনালী টাওয়ার জানাজা : আলগী মনোহরপুর, ঈদগাহ মাঠে শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান: আলগী মোনোহরপুর কবরস্থান