জন্ম তারিখ: ২৯ অক্টোবর, ১৯৬০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২২ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : কাপড় ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : সাদবদী বড় মসজিদ বাজার,নারায়ণগঞ্জ।
মো: মোহসীন পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি ২১ অক্টোবর ১৯৬০, নারায়াণগঞ্জের বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্থায়ী ঠিকানা বাহাদুরপুর। তার পিতার নাম মো: ছলিমউদ্দীন, মাতার নাম অহিয়া বেগম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছিলেন। আগেকার দিনে মানুষ মনে করত মেয়ে হলে তার উপর মনে হয় আল্লাহ খুশি নয় তাই সকলেই ছেলে চাইতো। ছলিমুদ্দিন ও আহিয়া বেগমের ঘরে প্রথমে মেয়ে সন্তান আসায় তারা একটু অখুশিই ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তান যখন ছেলে হলেন তখন তাদের আনন্দ দেখে কে। আর সেই সন্তানের নামই মোহসীন। জন্মের সময় যেমন মা বাবাকে খুশি করেছিলেন তেমনই মৃত্যুর সময়ও আল্লাহকে খুশি করে তিনি পরকালে পাড়ি দিলেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ইসলামী আন্দোলন করা ফরজ তাই তিনি এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। শহীদ মো: মোহসীন ডায়বেটিকস এর রোগী ছিলেন। তিনি একবার ব্রেইন স্ট্রোক এবং হার্ট এটাক করেছিলেন। ২৫-৩০ বছর যাবত ব্যবসা করত। শহীদ মো: মোহসীনের ব্যবসা থেকে মাসে আনুমানিক ৭০০০ টাকা আয় হতো। তার ১৫ শতাংশ জমির উপর এাকটি বাড়ি আছে এবং ঘরভাড়া বাবদ ৭০০০ টাকা আসে। টিনের তৈরি ৫ টি ঘর ভাড়া দেওয়া আছে। তাদের কোন ফসলি জমি নেই। এসব কিছু রেখে গত ২২ জুলাই ২০২৪ তারিখে তিনি আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে শাহাদাতের সুধা পান করলেন। শাহাদাতের ঘটনা গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে বন্দী করে রেখেছিল। যাকে ইচ্ছা তাকে হত্যা করেছে, জেলে দিয়েছে, ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। তাদের মত করে তারা দেশ চালিয়েছে, জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্খার দিকে কোন নজর দেয়নি। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল মানুষ তাদের অত্যাচারের শিকার হয়েছে। হাজার হাজার মা বোনকে ধর্ষণ করেছে কিন্তু কোন বিচার হয়নি। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা তারা দেশ থেকে পাচার করেছে। এত অত্যাচার নির্যাতনের পরেও কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি তাদের ভয়ে। কিন্তু আজ ছাত্র-জনতা তাদের রক্ত চক্ষুর বিপরীতে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে। তারা শপথ করেছে এ দেশ থেকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েই ঘরে ফিরবে নয়তো শহীদ হবে। অবশেষে ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই অত্যাচারীরা নিজেরাই এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। এটা থেকেই বোঝা যায়, তাঁরা কী পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন মানুষের ওপর। তাদের পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু এর জন্য তারা শহীদ মোহসীনের মত হাজারো নিষ্পাপ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সেদিন যা হয়েছিল আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী এবং কুখ্যাত পুলিশবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন দেখে মোহসীন নিজেকে বাড়িতে বন্দী করে রাখতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকার ও তার দোসররা যখন সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে, তাদেরকে গ্রেফতার করছে তখন তিনি অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও রাজপথে নেমে আসলেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা তার নৈতিক দায়িত্ব এটা ভেবেই তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। মাধবদী বড় মসজিদ বাজারে ২২ জুলাই ২০২৪ দুপুর ১.৩০ টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায় তাঁর হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় ছাত্র-জনতা তাকে মাধবদী সিটি হাসপাতাল নিয়ে যায়। এরপর এখান থেকে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনার জন্য দায়ী এই খুনি হাসিনা সরকার, তাদের এ সকল নরকী কর্মকান্ডের ফলে কত মানুষের জীবন চলে গেছে তার কোন হিসাব নেই। তারা ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ, হত্যা, গুম, খুন সকল ধরনের অরাজকতা চালিয়েছে। তাদেরকে নিশ্চুপ করে দিতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু তাদের আশা পূর্ণ হয়নি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ সহযোগিতায় সাধারণ ছাত্র-জনতা তাদের পতন ঘটিয়েছে। এ দেশ থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের উৎখাত হয়েছে। তার এক সহকর্মীর বক্তব্য শহীদ মো: মোহসীন ছিলেন একজন সৎ কাপড় ব্যবসায়ী। কখনো মিথ্যা কথা বলতেন না এবং মিথ্যাকে প্রশ্রয় ও দেননি। যেখানে অন্যায় হতো সেখানে তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তার সব সময় চাওয়া ছিল দুর্নীতিমুক্ত এবং অভাবমুক্ত একটি বাংলাদেশ। তিনি বলতেন বাংলাদেশে যদি কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলেই এ দেশে শান্তি ফিরে আসবে। তাই তিনি কুরআনের আন্দোলনে সব সময় সক্রিয় ছিলেন। পারিবারিক অবস্থা সে কাপড় ব্যবসা কমিশনে করত। ২৫-৩০ বছর যাবত ব্যবসা করত। শহীদ মো: মোহসীনের ব্যবসায় থেকে মাসে আনুমানিক ৭০০০ টাকা আয় হয়। তার ১৫ শতাংশ জমির উপর এাকটি বাড়ি আছে এবং ঘরভাড়া বাবদ ৭০০০ টাকা আসে। টিনের তৈরি ৫ টি ঘর ভাড়া দেওয়া আছে। তাদের কোন ফসলি জমি নেই। তার বাসায় শুধু তার স্ত্রী থাকেন। এক নজরে শহীদ মো: মোহসীন নাম : মো: মোহসীন জন্ম তারিখ : ২৯-১০-১৯৬০ জন্মস্থান : আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ, পেশা : কাপড় ব্যবসায়ী বর্তমান ঠিকানা গ্রাম : বাহাদুরপুর ইউনিয়ন : রসুলপুর থানা : আড়াই হাজার , জেলা : নারায়ণগঞ্জ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : বাহাদুরপুর ইউনিয়ন : রসুলপুর থানা : আড়াই হাজার , জেলা : নারায়ণগঞ্জ পরিবার পিতার নাম : মৃত: ছলিমউদ্দীন, মাতার নাম: মৃত : আহিয়া বেগম মেয়ে : ৩ জন ১. অনিয়া(২৮) বিবাহিতা ২. রুনা আক্তার (২৫) বিবাহিতা ৩. মোছা: রিয়া (২০) বিবাহিতা আঘাতকারীর : আওয়ামীলীগ, পুলিশ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : সাদবদী বড় মসজিদ বাজার,নারায়ণগঞ্জ ২২-৭-২০২৪, দুপুর ১:৩০ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : নরসিংদী সদর হাসপাতালে ২২-৭-২০২৪ দুপুর ২:৩০ কবরস্থান : বাহাদুরপুর ঈদগাহ ময়দান প্রস্তাবনা ১. শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান ২. শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান