জন্ম তারিখ: ৯ ডিসেম্বর, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ছাত্র, শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ ,অনার্স তৃতীয় বর্ষ, শাহাদাতের স্থান : নরসিংদী সদর হাসপাতাল।
আমজাদ হোসেন শিবপুর আসাদ কলেজের প্রাণীবিদ্যা গ্রুপের অনার্স ৩য় বর্ষে একজন ছাত্র। সে ৯ ডিসেম্বর ২০০১ সালে নরসিংদী জেলার রামপুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আরমান,তিনি পেশায় একজন কৃষক। ময়ের নাম মোসা: দেলোয়ারা, তিনি একজন গৃহিণী। আমজাদ হোসেন নানুর বাড়িতে থাকতো। বাড়ি পলাশ থানায় হলেও লেখাপড়া শিবপুর থানায় করেছে। কারণ শিবপুর থানা গ্রাম থেকে কাছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও অনেক বেশি। জীবনে অনেক বড় স্বপ্ন ছিল ভালো চাকরি করবে এবং পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করবে। এজন্য শহীদ আমজাদ এসএসসি এবং এইচএসসি তে বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করেছেন। পরবর্তীতে অনার্সেও প্রাণিবিদ্যা নিয়ে লেখাপড়া করেন। সকল দিক থেকে সে ছিল গোছালো ও রুচিশীল মানুষ ছিলেন। টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতো। শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিষয় নিয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়লেও পারিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য ছোটখাটো কোন চাকরির খোঁজ করছিলেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার গোপনে মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামীলীগ ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের সরকারি চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাই আমজাদ হোসেন এই বৈষম্য দূর করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। অবশেষে ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে ইটাখোলা ফাঁড়ি পুলিশের গুলিতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের ঘটনা আমজাদ বাড়ি থেকে বের হয় খেলার মাঠে যাবে বলে যাওয়ার আগে তার মাকে বলল মা একটু ক্ষুধা লেগেছে নুডলস রান্না করে দাও। মা ছেলের কথা শুনে নুডলস রান্না করে দিল। কিন্তু কে জানে শহীদ আমজাদের মায়ের হাতের এই নুডলস জীবনের শেষ খাওয়া হবে! মা মনে করল তার ছেলে বুঝি প্রতিদিনের মতো খেলে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে। ছেলে বাড়ি ফিরল একটু রাত করে। কারণ ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়ে শাহাদাত বরণ করার পর হাসপাতালে বিভিন্ন কাগজপত্রের সমস্যায় তার বাড়ি ফিরতে দেরি গেছে। মায়ের কাছে ছেলে ঠিকই ফিরে আসলো কিন্তু বড় একটি সার্টিফিকেট নিয়ে সেটি হল শাহাদাতের মর্যাদা। আমজাদ হোসেন ১৯ জুলাই বিকাল আনুমানিক ৪ টার দিকে ছাত্র বন্ধুদের সাথে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্র-জনতা মিছিল করতে করতে ইটাখোলা ফাঁড়ির সামনে যায়। মিছিলের সামনের দিকে ছিলেন আমজাদ হোসেন। তিনি তার হৃদয়ের আবেগ অনুভূতি উজাড় করে দিয়ে ছাত্রদের এই মিছিলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। আমজাদ হোসেনের স্লোগানের শক্তিতেই যেন পিছনের সকল ছাত্র-জনতা তাদের হৃদয়ে শতগুণ শক্তি বৃদ্ধি করে নিচ্ছিল। কিন্তু স্বৈরচার আওয়ামী সরকার প্রধান শেখ হাসিনর নির্দেশে তার পোষা কিছু পুলিশ নামে সন্ত্রাসী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ হায়েনারা মিছিলের উপর এলোপাতাড়ি গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। প্রথমে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। হঠাৎ পুলিশ ও সন্ত্রাসী আওয়ামীলীগ তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করা শুরু করলো। দেশের মানুষের ঘাম ঝরানো টাকায় যে পুলিশের বেতন হয় সেই সাধারণ মানুষের পরিশ্রমের টাকায় কেনা রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়তে থাকে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে। একটু পরেই সামনের দিকে স্লোগান দিতে দেখে অকুতোভয় বীর আমজাদকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছুড়ে। একটি গুলি এসে লাগে তার মাথায়। সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে ছাত্র-জনতা তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত্ ঘোষণা করে । তখন সময় রাত ৮:৩০। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বের ইতিহাস পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে। শাশ্বত সত্য ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য আল্লাহর একান্ত প্রিয় নির্ভীক সিপাহসালার যোদ্ধাগণ যুগ যুগ ধরে সদা-সর্বদা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। অপরদিকে মিথ্যার ধারক-বাহক বলে পরিচিত যারা, সত্য যাদের অন্তরে তীরের ন্যায় বিঁধে, তারা সব সময়ই এই শাশ্বত সত্যের টুঁটি চেপে ধরে রাখতে চেয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষী দেয়, ন্যায় এবং ইনসাফকে বারবার ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্মই হয়েছে সত্যের বিরুদ্ধে। তাই তারা বারবার সত্যনিষ্ঠ পথে যারা চলতে চায় তাদেরকে জেল-জুলুম, খুন, গুম এবং ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে নিঃশেষ করতে চেয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে কোন স্বৈরশাসক শত চেষ্টা প্রচেষ্টার পরেও শত জুলুম নির্যাতনের পরেও ন্যায় এবং ইনসাফের পথে মানুষদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। অবৈধ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাও পারলো না। রায়হান নামে তার এক বন্ধুর মন্তব্য শহীদ আমজাদের সাথে আমার দীর্ঘ ৮ বছরের বন্ধুত্ব। সে একজন ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী মানুষ ছিল। নিয়মিত নামাজ পড়ত। তার ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করত সে খেলাধুলায় যেমন ভাল ছিল পড়াশুনায়ও তেমন ভালো ছিল। পরোপকারী ও মিশুক প্রকৃতির ছিল। এই আন্দোলনে শুরু থেকেই স্বক্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছে আমজাদ । আমি আমার বন্ধুর হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি এবং হুকুমদাতা সহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করছি। বড় ভাই আকরাম হোসেনের মন্তব্য আমজাদ ছিল আমাদের পরিবারের স্বপ্ন। সে মেধাবী ছিল তাই তাকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন আঁকতাম। আমাদের নিজস্ব কোন জমি জমা নেই। তাই ছোটকাল থেকেই আমরা নানার বাসায় বসবাস করি। ভেবেছিলাম আমজাদ বড় হয়ে অনেক বড় চাকরি করবে এবং আমাদের সকলের অভাব দূর করবে। যেখানেই খেলতে যেত সে সবার চাইতে ভালো খেলতো। কলেজের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সে পুরস্কার নিয়ে এসেছিল। আন্দোলনে যাওয়ার আগের দিন সে আমার সাথে পরামর্শ করেছিল যে আমরা সাধারণ ছাত্ররা কি করতে পারি এখন? আমি বলেছিলাম যেটা সঠিক সেটাই করবে। তবে আমরা যেহেতু গরিব তাই এমন কিছু যেন না করা হয় যা আমাদের ক্ষতি ডেকে আনবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সে মন থেকে যোগ দেয়। শহীদ আমজাদ হোসেনের শিক্ষা জীবন দারিদ্র পরিবারের জন্ম নিলেও শহীদ আমজাদ হোসেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ছোটকাল থেকেই অভাবের সাথে সংগ্রাম করে অনেক ভালোভাবে লেখাপড়া করে আসছিল। প্রাইমারি থেকেই শুরু করে কলেজ পর্যন্ত শিবপুর শহরেই তিনি লেখাপড়া করেছেন। প্রতিটি ক্লাসেই কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হতেন। গরিব ঘরের সন্তান হলেও অনেক ধনী পরিবারের সন্তানকে পেছনে ফেলে ক্লাসে তার স্থান হত সামনের দিকে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে ভালো ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হন। অবশেষে শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজে প্রাণিবিদ্যা নিয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছিলেন। পারিবারিক অবস্থা নিজস্ব জমি,বাড়ি কিছুই নেই। অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল। বাবা কৃষিকাজ করে। বড় ভাই আকরাম হোসেন বেকার অবস্থায় বাড়িতে আছেন । ছোটকাল থেকেই নানার বাসায় বসবাস। ছোট একটি ভাই আছে নবম শ্রেণীতে পড়ে। বর্তমান অবস্থায় ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া চালানো অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক নজরে শহীদ আমজাদ হোসেন নাম : আমজাদ হোসেন জন্ম তারিখ : ০৯-১২-২০০১ জন্মস্থান : রামপুর, পলাশ, নরসিংদী পেশা : ছাত্র, শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ ,অনার্স তৃতীয় বর্ষ, বিষয়: প্রাণিবিদ্যা বর্তমান ঠিকানা গ্রাম : রামপুর ইউনিয়ন : গজারিয়া থানা : পলাশ, জেলা : নরসিংদী স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : রামপুর ইউনিয়ন : গজারিয়া থানা : পলাশ, জেলা : নরসিংদী পিতার নাম : আরমান (৬২)কৃষিকাজ মাতার নাম : মোছাঃ দেলোয়ারা (৫৫)গৃহিণী শহীদের ভাই-বোন : ১. আকরাম হোসেন, (২৬)বিবাহিত : ২. নাসরিন, গৃহিণী (২৪) : ৩. নাজমিন, গৃহিণী (২০) : ৪.আকতার হোসেন (১৫) ছাত্র, নবম শ্রেণী আঘাতকারীর : ইটাখোলা ফাড়ির পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : ইটাখোলা নরসিংদী ১৯-৭-২০২৪, রাত ৮;০০ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : নরসিংদী সদর হাসপাতালে ১৯-৭-২০২৪, রাত ৮;৩০ কবরস্থান : রামপুর বাজার, কবরস্থানপুর প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ২. বেকার ভাইয়ের চাকরীর ব্যবস্থা করা ৩. ছোট ভাইয়ের পড়াশুনার দায়িত্ব গ্রহণ করা ৪. বাসস্থান নির্মাণ করে দেয়া