Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির

নাম: মোঃ আব্দুল্লাহ কবির

জন্ম তারিখ: ১১ নভেম্বর, ১৯৭৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসা (গার্মেন্টস থেকে পোশাকের লট ক্রয় করে বঙ্গবাজারে বিক্রয়) শাহাদাতের স্থান : মিরপুর-১০, আইডিয়াল কলেজ সংলগ্ন, ঢাকা

শহীদের জীবনী

চব্বিশের শহীদ মো: আব্দুল্লাহ কবিরের জন্ম ১৯৭৮ সালের ১১ নভেম্বর, চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ শহরে। চাঁদপুরের মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে তার জন্ম হয়। পিতা আলহাজ্ব মো: মোছলেহ উদ্দিন ও মাতা সুরাইয়া বেগমের কোল আলোকিত করে ৪৬ বছর আগে যে ছেলে এসেছিলো, সেই ছেলে একদিন দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেবেন, তা কি জানতেন মোছলেহ উদ্দিন-সুরাইয়া দম্পতি ? শহীদ আব্দুল্লাহ কবিররা দুই ভাই। হয়তো আর দশটা মধ্যবিত্ত পোড় খাওয়া মানুষের মতোই জীবন ছিলো শহীদ কবিরের। জীবিকা অর্জনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন ব্যবসা। গার্মেন্টস থেকে লট ধরে মালামাল কিনে পরে এগুলো বঙ্গবাজার মার্কেটে দোকানে-দোকানে পাইকারি দরে বিক্রি করতেন। ঢাকার মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকার শহীদ কবির পেতেছিলেন সুখের সংসার। আনাফ নামের আট বছরের একটি ছেলেও আছে তাদের সংসারে। ছোট্ট আনাফ স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। সুখের সংসারে, যাপিত জীবনে একটু যেন ছন্দপতন। জানা যায়-তার এই পাইকারি পোশাকের ব্যবসায় ব্যর্থতা ছোবল দিয়েছে। বাধ্য হয়ে ঋণ নেন তিনি। এখনও সাত লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা শহীদ পরিবারের ওপর। ব্যবসার লসের জন্য নিজেদের একমাত্র আবাস, মিরপুরের ফ্ল্যাটটাও বিক্রি করে দিতে হয়। স্ত্রী সন্তান নিয়ে জনাব কবির শেষ পর্যন্ত একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। চাঁদপুরে আব্দুল্লাহ কবিরের পৈতৃক কিছু জায়গা জমি আছে। পরিবার হিসেবে তারা যথেষ্ট সম্ভ্রান্ত। “এখন আর কেউ ফোন দিয়ে জিজ্ঞেসা করেনা- আমি কোথায়!” মানবতা এবং একটি নির্মমতার গল্প ৪ আগস্ট ২০২৪। উত্তাল দেশ। কখন কী হয়ে যায়! কাকে কখন কোথায় মেরে ফেলে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, এমন একটা ভয়ানক পরিস্থিতি। এত এত রক্তের ওপর দিয়ে খুনী হাসিনা ক্ষমতা আঁকড়ে বসে আছে। পরদিন পাঁচ তারিখ রোড মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি। গণভবন ঘেরাও করা হবে। চারদিকে ভয়ানক অশুভ পরিবেশ। বাতাসে লাশের গন্ধ। সংলাপের কথা বলে ৪ তারিখেও গুলি চালানো হলো। খুন করা হলো ছাত্র-জনতাকে। এই ৪ তারিখেই শহীদ আব্দুল্লাহ কবির গিয়েছিলেন ব্যাংকে। ঐ সময়ে মানুষের মনে আগুন জ্বলছে। বাইরে যেতেও ভীতি কাজ করত মানুষের মনে। তবু সংগ্রামী ছাত্র-জনতা রাজপথ দখলে রেখেছিল। আব্দুল্লাহ কবির সাহস করে তার দৈনন্দিন প্রয়োজনেই পথে বের হয়েছিলেন। হয়তো ভেবেছিলেন তিনি তো যাচ্ছেন কাজে! তাকে নিশ্চয়ই ফ্যাসিস্ট হাসিনার মদদপুষ্ট পোষা বাহিনী কিছু বলবে না। ব্যাংকের কাজ শেষে রিক্সায় করে মিরপুর-১০ আইডিয়াল কলেজ সংলগ্ন এলাকা হয়ে যাচ্ছিলেন বাড়ির দিকে। পথে হঠাৎ দুইজন ছাত্রকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে যা করার কথা জনাব কবির তাই করেছিলেন। তিনি রিক্সা থেকে নেমে গিয়েছিলেন ছাত্রদের সাহায্য করতে। এদের হাসপাতালে নেয়া গেলে বাঁচানো যাবে হয়তো এমনটা ভেবেই রিক্সায় করে তাদেরকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু হায়! আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নামের নরপশুরা তখন মৃত্যু পথযাত্রীকে হাসপাতালে নিতেও বাঁধা দেয়! মানুষ হয়ে মানুষকে রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে একজন মানুষ কি চুপ থাকতে পারে? না দেখে চলে যেতে পারে? শহীদ আব্দুল্লাহ কবিরও পারেননি। আর এটাই ছিলো তার অপরাধ। গুলিবিদ্ধ দুজনকে হাসপাতালে নিতে গেলে আওয়ামী লীগের অমানুষরা শুধু বাঁধা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ওরা কবিরের ওপর গুলিও চালায়। সাথে সাথেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো তৎকালীন আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার, মঈনুল খান নিখিল, সাচ্চু, এস এম জাহিদ, ইলিয়াস আলী মোল্লা ও মোবাশ্বের। গুলি লাগার পর কবির হয়তো হতভম্ব হয়েছিলেন কারণ তিনি নিশ্চয়ই কল্পনাও করতে পারেননি দুইজন গুলিবিদ্ধ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে গুলি খেতে হবে! হয়তো কল্পনা করছিলেন পুত্র আনাফের মুখটা। প্রিয় স্ত্রী অথবা তার মমতাময়ী মায়ের কথা। খবর পেয়ে কবিরের ছোট ভাই রাজু (৩৮) ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। রাজু কী তার ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ দেহ দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলেন? ছোট্ট আনাফ কী তার বাবার রক্তাক্ত দেহ দেখতে পেরেছিল? কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে দেয়া মৃত্যু সনদে সময় বিকাল চারটার কথা উল্লেখ আছে। হয়তো তখন বাসায় ফিরে তার ভাত খাওয়ার কথা ছিলো। তার ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন স্ত্রী। অথচ কবির বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে। মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক রেঞ্জ থেকে করা গুলির আঘাত। মৃত্যু সনদের শেষে লেখা হয়েছে, বুলেটের আঘাতে কার্ডিওরেসপিরেটরি ফেইলিয়রের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। চাঁদপুরের মতলবে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন শহীদ আব্দুল্লাহ কবির। মতলবে ফেরার কথা তার আগেই ছিলো। ব্যবসার লস, ঋণের বোঝা, ভাড়া বাসায় থাকা সব মিলিয়ে এই ডিসেম্বরে পরিবার নিয়ে গ্রামে ফেরার কথা ছিলো। পরিবার গ্রামে ফিরল ঠিকই কিন্তু শহীদ আব্দুল্লাহ কবিরের লাশের বোঝা কাঁধে নিয়ে। অথচ কবিরের ফেরার কথা ছিলো তার ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মায়ের কাছে। ছোট্ট আনাফের গ্রামে ফেরার কথা ছিলো বাবার আঙুল ধরে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন আর ক্ষমতার লোভ কত মানুষের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিলো। কত মানুষ তার প্রিয়জনকে হারালো। কত রক্তের বিনিময়ে কেনা আমাদের ২৪-এর এ স্বাধীনতা! শহীদের ভাই রাজু বলেন, “আমার ভাইয়া চুপচাপ স্বভাবের ছিলেন। তবে যে কোনো সামাজিক কাজে তার অংশগ্রহণ ছিল সবার আগে। যে কেউ বিপদে পড়লে তার বিপদে পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। আমাকে বাবার মতো শাসন করে আগলে রাখতেন। আমি ভাইয়া হত্যার বিচার চাই। এখন আর কেউ ফোন দিয়ে জিজ্ঞেসা করেনা- আমি কোথায়!” এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: আব্দুল্লাহ কবির পেশা : ব্যবসা (গার্মেন্টস থেকে পোশাকের লট ক্রয় করে বঙ্গবাজারে বিক্রয়) জন্ম তারিখ ও বয়স : ১১ নভেম্বর ১৯৭৮, ৪৬ বছর শহীদ হওয়ার তারিখ : ৪ আগস্ট ২০২৪, রবিবার, আনুমানিক দুপুর ৩টা শাহাদাত বরণের স্থান : মিরপুর-১০ আইডিয়াল কলেজ সংলগ্ন দাফন করা হয় : চাঁদপুর পারিবারিক কবরস্থান স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মতলব দক্ষিণ, মতলব, জেলা: চাঁদপুর পিতা : আলহাজ্ব মো: মোছলেহ উদ্দিন মাতা : সুরাইয়া বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : বসতি ও আবাদি জমি রয়েছে ভাইবোনের বিবরণ : : ১. গাউছুল্লাহ রাজু, সম্পর্ক: ছোট ভাই, বয়স: ৩৮ পেশা: ব্যবসায়ী : ২. রত্না, সম্পর্ক: বোন, বয়স: ৫২, বিবাহিতা : ৩. হিরা, সম্পর্ক: বোন, বয়স: ৪৫, বিবাহিতা : ৪. মুক্তা, সম্পর্ক: বোন, বয়স: ৪৭, বিবাহিতা : ৫. রুমা, সম্পর্ক: বোন, বয়স: ৩৯, বিবাহিতা স্ত্রী : মোসাঃ আফসানা আক্তার, পেশা: গৃহিণী, বয়স: ৪০ সন্তান: মো: আনাফ, সম্পর্ক: ছেলে, বয়স: ০৮ প্রস্তাবনা ১. শহীদের সাত লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে। পরিশোধে সহায়তা করা যেতে পারে। ২. শহীদের সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে। ৩. শহীদ পত্নীকে মাসিক অথবা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির
Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির
Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির
Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির
Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির
Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির
Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির
Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির
Image of মোঃ আব্দুল্লাহ কবির

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মো: ইসহাক জমদ্দার

মো: রমজান আলী

হাসনাইন আহমেদ

অজ্ঞাত

রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ (জয়)

অজ্ঞাত

মো: আবদুল মোতালেব

মো: লেবু শেখ

শাহরিয়ার হাসান আলভী

রাসেল মিয়া

মো: সালাউদ্দিন সুমন

মো: রিয়াজ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo