Image of রিয়া গোপ

নাম: রিয়া গোপ

জন্ম তারিখ: ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৪ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্রী, শ্রেণি- প্রথম, (নয়ামাঠ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়), শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

শহীদের জীবনী

সদা চটপটে, হাস্যোজ্জ্বল রিয়া গোপ ২৪ নভেম্বর ২০১৭ সালে জন্মগ্রহণ করে। মারা যাওয়ার সময় সে ৬ বছর ৬ মাস বয়সী একজন ছাত্রী। সে নারায়ণগঞ্জের ৩২ নং নয়ামাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। রিয়ার হাতের লেখা খুবই সুন্দর এবং সে পড়াশুনায় খুবই আগ্রহী ছিল। তার বাবা দিপক কুমার গোপ, বয়স ৪০ বছর, এবং মা বিউটি ঘোষ, বয়স ৩০ বছর। রিয়া খুবই ভ্রমণপ্রিয় ছিল। বাবার আদুরে সুযোগ পেলেই বাইরে ঘুরতে যাওয়ার বায়না ধরতো। জ্ঞানপিপাসু রিয়া শিশু শহীদ রিয়া কেবলমাত্র ঘুরাফেরা, খেলাধুলা আর বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করেই বেড়াতো না। পারিবারিক কাজে অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রতিবেশীর কাজেও সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতো এতো অল্প বয়সী হওয়ার পরেও। এতোকিছু করেও পড়াশুনা আর জ্ঞান-সাধনার আগ্রহে মোটেও ভাটা পড়েনি তার। সে যেমন ছিলো ধর্মীয় শিক্ষায় পারদর্শী তেমনি স্কুলের পড়ালেখায়ও ছিলো মেধাবী, বুদ্ধিমান ও চৌকস। সহপাঠীদের সাথে সবসময় সে আপন ভাই-বোনের মতো মেশার চেষ্টা করতো। নিজের পাঠ শেখার পাশাপাশি অন্যদেরকেও যথাসাধ্য সাহায্য করতো রিয়া। শহীদ রিয়ার ছিলো বই পড়ার নেশা। সমবয়সী অথবা বড় কাজিন ভাই-বোন ও স্কুলের প্রিয় শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বই নিয়ে পড়তো জ্ঞানপিপাসু রিয়া। বাবার পুরাতন এন্ড্রয়েড মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন কিছু জানা আর শেখার চেষ্টা করে সে। স্কুলে বন্ধুর সংখ্যাও বেড়েছে তার। সেখানেও নিয়মিত গপ্পো সপ্পো করে, বড়দের অভিজ্ঞতার কথা শুনে। বন্ধু, সহপাঠী আর বড়দের সাথে আড্ডায় চলে বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ের গল্প। প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে জনগণ নানান অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন ও জুলুমের নির্মম ভুক্তভোগী। এদেশের মুক্তিকামী জনতা সময়ের দাবিতে সাড়া দিয়ে এহেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারংবার রুখে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে হুংকার দিয়ে সংগ্রামী জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্রবৃন্দ। উপরুন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সাক্ষী, দেশের ক্রান্তিকালে বরাবরই ছাত্রদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। বাংলাদেশ নামক গাড়িটা যখন এমনভাবে ব্রেক ফেইল করলো আর বাংলাদেশী নামক যাত্রীরা যখন আতঙ্কিত; চারদিকে যখন কষ্ট, বেদনা, চিৎকার, আহাজারি আর নিশ্চিত ধ্বংসের সুস্পষ্ট লক্ষণ, তখন রাষ্ট্রযন্ত্রের এমন বর্বরতা তরুণ প্রতিবাদী সমাজ সচেতন আযিযুল মিয়ার দেখে মনে আঁচড় কাটতে পারে। কেননা সবকিছু তো তার সামনেই ঘটছে। তিনি নিজের কানেই শুনছেন মানুষের নিদারুণ আর্তনাদ; ব্যথিত মনের হাহাকার। নিজের চোখে দেখছেন কিভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে শাসক নামধারী শোষক গোষ্ঠী। দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতিন, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয়। আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। পরপারে পাড়ি সারাদেশ ছাত্র-জনতার আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল হয়ে উঠে। রাজপথে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার বজ্রকণ্ঠ হুংকার ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে। ক্ষমতা লোভী স্বৈরাচারী হাসিনা এমন বিপ্লবী আওয়াজ চিরতরে শেষ করে দিতে লাশের মিছিলে মেতে উঠে, হয়ে উঠে রক্ত পিপাসু পিশাচ। তার বর্বরোচিত পৈশাচিকতা থেকে বাদ যায়নি আবালবৃদ্ধবনিতা। বাদ যায়নি হেসে খেলে বেড়ে উঠা অবুঝ শিশু রিয়াও। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক দুঃখজনক দিন। দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চালাচ্ছিল। সেই সময় রিয়া তার বাসার ছাদে খেলছিল। বিকাল ৫ টার দিকে, একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনায় রিয়া গুলিবিদ্ধ হয়। নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ। ঘটনাটি ঘটে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার ঘাতক সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণের সময়। রিয়ার মাথায় গুলি লাগে এবং তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুঃখজনকভাবে, রিয়া ২৪ জুলাই ২০২৪, সকাল ১০ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তার মৃত্যুর খবরটি পরিবার এবং প্রতিবেশীদের জন্য গভীর শোকের সৃষ্টি করে। অনুভূতি রিয়ার মৃত্যু শুধুমাত্র একটি পরিবারকে নয়, বরং পুরো সমাজকে আহত করেছে। তার স্বপ্ন, খেলাধুলা এবং জীবনযাত্রা অকালেই থেমে গেছে। এই ঘটনার মাধ্যমে দেশবাসী একটি কঠিন সত্যের সম্মুখীন হয়েছে, যা আমাদের সবাইকে ভাবতে বাধ্য করে। রিয়া গোপের মতো নিরীহ শিশুদের প্রতি যে অন্যায় ঘটেছে, তা আমাদের মানবিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : রিয়া গোপ জন্ম তারিখ : ২৪/১১/২০১৭ বয়স : ৬ বছর ৬ মাস পেশা : ছাত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম : নয়ামাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রেণি : ১ম ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য বর্তমান ঠিকানা বাসা : ২৭ এলাকা : নয়ামাঠ থানা : সদর জেলা : নারায়নগঞ্জ পরিবারের তথ্য পিতার নাম : দিপক কুমার গোপ বয়স : ৪০ মায়ের নাম : বিউটি ঘোষ বয়স : ৩০ ঘটনার স্থান : বাসার ছাদে আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার ঘাতক সশস্ত্র বাহিনী আহত হওয়ার তারিখ ও সময় : ১৯ জুলাই ২৪, বিকাল ৫টা মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ২৪ জুলাই ২০২৪, সকাল ১০ টা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমাধী : নিজ এলাকা (দাহ) প্রস্তাবনা ১. ভালো একটা বাসস্থান খুব জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন। ২. বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of রিয়া গোপ
Image of রিয়া গোপ
Image of রিয়া গোপ
Image of রিয়া গোপ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ইরফান ভূঞা

আবদুল্লাহ আল রোমান

জাহাঙ্গীর আলম

রাহাত হোসেন শরিফ

মো: রুখতন মিয়া

ছোবহান মুন্সি

মো: রফিকুল ইসলাম

মো: মেহেদী হাসান

মানিক মিয়া

 মো: তাজুল ইসলাম

হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম

মামুন সরদার

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo