জন্ম তারিখ: ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : চাকুরীজীবি, শাহাদাতের স্থান : সানার পার চউক পাম্পের পশ্চিম পাশে রাস্তায়
আহসান কবির (শরিফ) ১৯৯০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ সানার পাড়, ডেমরা, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রো বায়োলজিতে এমএ এবং প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছেন। আহসানের পিতার নাম মো: আনোয়ার হোসেন, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং বয়স ৬২ বছর। তাঁর মায়ের নাম মোসা: খালেদা কবির, যিনি ৫১ বছর বয়সী গৃহিণী। আহসান ডিভোর্সি এবং তাঁর পরিবারে ৯ সদস্য রয়েছেন, যার মধ্যে বড় ভাই মাহবুব কবীর সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন এবং বোন রোকেয়া কবীর বিবাহিত ও গৃহিণী। তিনি মাস্টার বাড়ী, দক্ষিণ মানার পার, ডেমরা, ঢাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করতেন। তার মাসিক আয় ২০,০০০ টাকা ছিল। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিস্তারিত বিবরণ জনাব আহসান কবীরের ৬ কাঠা জমি আছে ঢাকার ডেমরা সানার পাড় এলাকায়। দুই তলা ৪০০ স্কয়ার ফুট বিশিষ্ট বিল্ডিং আছে। কুমিল্লার তিতাস গ্রামে ৬ শতাংশ জমি আছে। শহীদ পরিবারের বর্তমানে নিয়মিত কোন মাসিক আয় নেই। শহীদের বড় ভাই সিঙ্গাপুর থাকেন। মাঝে মধ্যে পরিবারের জন্য খরচের টাকা পাঠান। পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য শহীদ আহসান কবীর বিবাহিত ছিলেন। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে তাদের ডিভোর্স হয়। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরুর দিকে দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন শহীদ আহসান কবীর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটা সংগঠন তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহার আহবান জানানো হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার এ কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করা হয়। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। লাগাতার আন্দোলনের ফলে ৪ অক্টোবর ২০১৮ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। উক্ত পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সাত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৬ ডিসেম্বর ২০২১ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ৫ জুন ২০২৪ বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরিপত্র বাতিল করে রায় দেন। ৬ জুন ২০২৪ হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর ১ জুলাই ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূচনা হয়। এরপর থেকেই পরিস্থিতি বুঝে তাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনে গুন্ডা ছাত্রলীগ যুবলীগ আর আওয়ামীলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের অন্য কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। ১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটা অপ্রত্যাশিত ভিডিও দেখা যায়। ভিডিওতে সে দেখে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করছে। অকুতোভয় আবু সাঈদ দুইহাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের পদলেহনকারী বজ্জাত পুলিশের কাছে। কতোটা কাপুরুষতা আর কতটা নির্লজ্জতার সাথে তারা গুলি করো আবু সাঈদের বুকে, পেটে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় গোটা দেশের ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ঘটনা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ ২১ জুলাই ২০২৪ ঢাকার ডেমরা সানারপার চউক পাম্পের পশ্চিমে-রাস্তার পাশে চায়ের দোকানের পাশে আন্দোলনের ছবি তুলছিলেন। তখন দুপুর প্রায় ৩ টার সময় হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে গুলি এসে আহসান কবীরের বুক বরাবর লেগে কোমরের পিছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শহীদ আহসান কবির। জানাজা ও দাফন শহীদ আহসান কবীরের মরদেহ হাসপাতালে থাকা অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক পোষ্টমর্টেম না করে দ্রুত লাশ দাফন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে, অতপর শহীদের পরিবার হুমকি ও ভয়ে পোষ্টমর্টেম না করিয়া বাদ মাগরিব জানাজা শেষে স্থানীয় শুকুরসী কবরস্থানে তাকে দাফন করেন। শহীদ সম্পর্কে পিতার অনুভূতি শহীদের পিতা মোঃ হুমায়ুন কবীর নিজ পুত্র সম্পর্কে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, আহসান কবীর ছাত্র জীবনে খুব মেধাবী ছিলেন এবং অনেক মিশুক প্রকৃতির ছিলেন। বাবা মায়ের ছোট সন্তান ছিলেন। পরিবার এবং গ্রামের মানুষদের খুব ভালোবাসতেন। খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতেন। কর্ম জীবনে খুবই দক্ষ ছিলেন। মামলা সংক্রান্ত তথ্য শহীদের পিতা মোঃ হুমায়ুন কবির নিজে বাদি হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় খুনি শেখ হাসিনাকে এক নম্বর আসামী ও যথাক্রমে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ওবায়দুল কাদের, জুনায়েদ আহমেদ পলক, শামিম ওসমান কে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সারা দেশ যখন উত্তাল তখন প্রতিবাদী কণ্ঠ মেধাবী, কর্মঠ ব্যক্তিত্ব আহসান কবির সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে যোগদান করেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ঘাতক বাহিনী বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়লে ভিকটিম আহসান কবির শরিফ বুকের মধ্যখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এক পর্যয়ে আসামীগণ জড়ো হওয়া ছাত্র-জনতাকে সাবধান করে বলে, এই ধরনের দাবী আবার উত্থাপন করলে সবাইকে খুন ও গুম করা হবে মর্মে হুমকী প্রদান করে। মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ আছে, শহীদের পিতা মোঃ হুমায়ুন কবির ছেলের বন্ধু মারফত খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান এবং মোঃ আরিফ, রাকিব, রজ্জব ও জনি সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন লোকের সহযোগীতায় তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ সানারপাড় ইস্ট ভিউ হাসপাতালে নিয়ে যান, তখন উপস্থিত ডাক্তার তাকে চিকিৎসা দেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত ডাক্তার, বিকাল আনুমানিক ৩.৩০ টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে স্থানীয় আসামীগণ পোষ্টমর্টেম না করে দ্রুত লাশ দাফন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে, অতপর শহীদের পরিবার আসামীগনের হুমকি ও ভয়ে পোষ্টমর্টেম না করিয়া বাদ মাগরিব জানাজা শেষে স্থানীয় শুকুরসী কবরস্থানে তাকে দাফন করেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : আহসান কবির (শরিফ) জন্ম তারিখ : ০৩/০৯/১৯৯০ পেশা : চাকুরীজীবি জান্মস্থান : দক্ষিণ সানার পাড়, ডেমরা, ঢাকা কর্মরত প্রতিষ্ঠানের নাম : ডিআইওয়াই বিডি লি. স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম : দক্ষিণ সানার পাড় ইউনিয়ন : সারুলিয়া-১৩৫১ থানা : ডেমরা জেলা : ঢাকা বর্তমান ঠিকানা বাসা/ মহল্লা : মাস্টার বাড়ী এলাকা : দক্ষিন মানার পার থানা : ডেমরা জেলা : ঢাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম : ঢাকা ইউনিভার্সিটি বিষয় : বিজনেজ স্টাডিজ শ্রেণি/বর্ষ : মাস্টার্স আহত হওয়ার স্থান : সানার পার চউক পাম্পের পশ্চিম পাশে রাস্তায় আক্রমণকারী : হেলিকপ্টার থেকে ঘাতক পুলিশ/বিজিবি আহত হওয়ার তারিখ ও সময় : ২১ জুলাই ২০২৪, দুপুর ৩.৩০ টা মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ২১ জুলাই ২০২৪, দুপুর ৩.৩০ টা, ঘটনাস্থল শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : শুকুরসী কবরস্থান ডেমরা পরিবারের তথ্য পিতার নাম : মো: হুমায়ুন কবীর, পিতার পেশা ও বয়স: অবসর শিক্ষক (৬২) মায়ের নাম : মোসা: খালেদা কবির, মায়ের পেশা ও বয়স: গৃহিণী (৬১) মাসিক আয় : ২০০০০/- বৈবাহিক সম্পর্ক : ডিভোর্স পরিবারের সদস্য : ছেলে মেয়ে ভাই ০৯. বড় ভাই : মাহবুব কবীর (৩৭), সিঙ্গাপুর বোন : রোকেয়া কবীর (৩৯), বিবাহিত, গৃহিণী প্রস্তাবনা ১. শহীদের পিতার জন্য ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেয়া যেতে পারে ২. শহীদের পরিবারেরে জন্য এককালীন অনুদান প্রদান করা