জন্ম তারিখ: ৫ মে, ১৯৬৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : বাস ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান : ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার সামনে।
ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার পূর্ব খাবাশপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন শহীদ সামচু মোল্যা। পিতা মো: মোতালেব মোল্যা মাতা আম্বিয়া খাতুনের নয় ছেলে মেয়ের মধ্যে সামচু মোল্যা ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করে দারিদ্রতার কারণে নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেই জীবিকার তাগিদে বাস ড্রাইভারের কাজ শুরু করেন। মৃত্যুকালীন তিনি ফরিদপুর টু ঢাকা বিকাশ পরিবহনে ড্রাইভার কর্মরত ছিলেন। সামচু মোল্যা দীর্ঘদিন সংসার করার পরে গত ৮ বছর আগে প্রথম স্ত্রীর সাথে বিভিন্ন সমস্যায় বিচ্ছেদ হয়ে যায়। প্রথম স্ত্রীর ঘরে সামচু মোল্যার এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। ছেলে মেয়ে উভয়েরই তিনি সুন্দরভাবে বিয়ে দিয়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি মেঘলা বেগমকে বিয়ে করে খুব সুখের সাথেই দিনাতিপাত করছিলেন। মেঘলা বেগমের ঘরে একটি সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে আছে। মেয়েটির বয়স পাঁচ বছর। মেয়েকে নিয়ে সামচু মোল্যার অনেক স্বপ্ন। তিনি মেয়েকে কষ্ট করে হলেও একজন বড় ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল জালিম আওয়ামীলীগ পুলিশ তার স্বপ্নকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে বুলেটের আঘাতে তাকে শহীদ করে দিল। সামচু মোল্যার কল্পনাও করেনি বিজয়ের এই দিনে পুলিশের বুলেটের আঘাতে তাকে শাহাদাত বরণ করতে হবে। শাহাদাতের ঘটনা আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদকাল (২০০৯-২০২৪) ছিল অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং ব্যাপক দুর্নীতি দ্বারা সমালোচিত, যার ফলে ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, যুব বেকারত্ব এবং ব্যাংকিং অনিয়ম নজরে আসে। এই সময়ে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক মার্কিন ১৫০ বিলিয়ন ডলার বা ১৭.৬ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ২০২২ সালে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০২৪ সালের জুনে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী নতুন ছাত্রবিক্ষোভ শুরু হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আধাসামরিক বাহিনী দ্বারা এই বিক্ষোভ নৃশংস দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল, যার ফলে অনেক ছাত্র নিহত হয়েছিল। আগস্টের শুরুতে, এই বিক্ষোভ সরকারের বিরুদ্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়, যা শেষ পর্যন্ত হাসিনাকে পদত্যাগ এবং ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। ৫ আগস্ট ২০২৪ বিকেল ৪:৩০ টা, শহীদ সামচু মোল্যা তার মেয়েকে অনেক আদর করে বলল মা সাম্মি তুমি কিন্তু সন্ধ্যার পরে তোমার আম্মুর কাছে পড়তে বসবে। ভালো করে লেখাপড়া না করলে বড় ডাক্তার হওয়া যায় না। আর ডাক্তার না হলে মানুষের সেবা করা কঠিন হয়ে যাবে। মেয়ে শহীদ সামচু মোল্যার গলা জড়িয়ে ধরে কপালে একটি চুমু দিল এবং বলল আব্বু আমার জন্য ডাক্তারের মেলা কিছু জিনিস নিয়ে এসে দিবে কিন্তু। আমি সেগুলো দিয়ে খেলা করবো। সামচু মোল্যা ও তার মেয়েকে একটি চুমু দিয়ে স্ত্রী মেঘলা বেগমকে বললেন তুমি আমার মেয়েকে সন্ধ্যার পরে ভালোভাবে পড়াবে তাকে নিয়ে আমার অনেক বড় স্বপ্ন। বিকেল ৪:৫০ টার দিকে সামচু মোল্যা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল স্বৈরাচার পতনের আনন্দ মিছিলে অংশ নেওয়ার জন্য এবং তার কর্ম ক্ষেত্রে যাবার জন্য। কে জানে যে এই যাওয়াই সামচু মোল্যার শেষ যাওয়া আর কখনো জীবিত অবস্থায় ফেরা সম্ভাব হবেনা? স্বৈরাচার পতন হয়েছে তার পরেও তাদের দোসরদের রাক্ষসে মনোভাব যায়নি। তাইতো সামচু মোল্যাকে গুলি করে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিল। তারা কি জানে না সামচু মোল্যার ঘরে বউ বাচ্চা আছে তাদের দেখার আর কেউ নেই, সামচু মোল্যা না থাকলে তাদের মুখে ভাত জুটবে না, এটা তো তাদের জানার কথা ছিল। কিন্তু তারা তো মানুষ নামে কলঙ্ক তাদের ভিতরে বিবেক বলে কিছু নেই, তারা যে পশুর চাইতেও নিকৃষ্ট, তারা জানবে কিভাবে। শহীদ সামচু মোল্যা ৫ আগস্ট বিকেল ৫ টার দিকে বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার সামনে চা খেতে বসেছে একটি চায়ের দোকানে। একটু পর হঠাৎ পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগ বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনে এগিয়ে আসছে। রাস্তার মানুষ দৌড়ে পালাচ্ছে আর দোকানের মানুষগুলো কেউ রাস্তার দিকে কেউবা দোকানের শাটার নামিয়ে দোকানের ভিতরে ঢুকে পড়ছে। মানুষ কত বিবেকহীন হলে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারে। নিরস্ত্র মানুষের উপর এভাবে কেউ গুলি করে! তাও আবার পরাজয়ের পরে! পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটেনি। যাইহে সামচু মোল্যা চা টা রেখে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য রাস্তা ধরে পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু সন্ত্রাসী পুলিশের একটি বুলেট এসে তার মাথায় আঘাত করে। তৎক্ষণাৎ রাস্তায় ঢলে পড়েন সামচু মোল্যা। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। শহীদ সামচু মোল্যার স্ত্রীর কথা আমার স্বামী সব সময় ইসলামের পক্ষে থাকত, নামাজ পড়তো। শেখ হাসিনা পতনের পর সে আমাকে বললো "আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা আজ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের দেশটাকে লুটেপুটে খেয়েছে। কেউ শান্তির সাথে ঘুমাতে পারেনি। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছিল আওয়ামীলীগ সরকার। এত সুন্দর একটি বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা সরকার বসবাসের অযোগ্য বানিয়ে দিয়েছিল।" আমার স্বামী তো কোন দোষ করে নাই, কোন অন্যায় করেনি। সে সারা জীবন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে কিন্তু তাকে কেন হত্যা করা হলো। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এখন কি করব কিভাবে বাচব? যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। পারিবারিক অবস্থা শহীদ সামচু মোল্যার ১ম স্ত্রীর ঘরে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে আছে। তারা বিবাহ করে নিজেরা সংসার করছে।বর্তমান ঘর ছাড়া তাদের কোন সম্পত্তি নেই। সামচু মোল্যাই ছিলেন আয়ের একমাত্র উৎস। এখন তার স্ত্রী মেঘলা বেগম এক মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা অবস্থায় দিন যাপন করছেন। এক নজরে শহীদ মোঃ শামচু মোল্লা নাম : মো: সামচু মোল্যা জন্ম তারিখ : ০৫-০৫-১৯৬৫ জন্মস্থান : পূর্ব খাবাশপুর, কোতোয়ালী, ফরিদপুর পেশা : বাস ড্রাইভার বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: পূর্ব খাবাসপুর, ইউনিয়ন: ফরিদপুর সদর, থানা: কোতোয়ালী, জেলা: ফরিদপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পূর্ব খাবাসপুর, ইউনিয়ন: ফরিদপুর সদর, থানা: কোতোয়ালী, জেলা: ফরিদপুর পিতার নাম : মৃত মোতালেব মোল্যা মাতার নাম : মৃত আম্বিয়া খাতুন স্ত্রী : মেঘলা বেগম দুই মেয়ে : ১.মরিয়ম আক্তার,(১৩), আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, সপ্তম শ্রেণী ২. সাম্মি আক্তার (৫), পূর্ব খাবাশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, নার্সারি আঘাতকারীর : আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী ও পুলিশ আহত হওয়া, স্থান ও সময় : ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার সামনে, ০৫-৮-২০২৪, বিকেল ৫:৩০ মিনিট মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার সামনে, ০৫-০৮-২০২৪, বিকেল ৫:৩৫ মিনিট কবরস্থান : ০৬-০৮-২০২৪ আলিপুর পৌর কবরস্থান, ফরিদপুর প্রস্তাবনা শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান ও নিয়মিত মাসিক ভাতা প্রদান ছোট মেয়ের পড়াশুনা সহ ডাক্তার হওয়ার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করা শহীদের দ্বিতীয় স্ত্রীর যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা