Image of মো: রিয়াজ হোসেন

নাম: মো: রিয়াজ হোসেন

জন্ম তারিখ: ৯ মার্চ, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষার্থী ও দোকান কর্মচারী, শাহাদাতের স্থান : সেবাদাস হাসপাতাল,বসিলা ব্রিজ, ঢাকা

শহীদের জীবনী

শহীদ রিয়াজ, জন্ম ২০০৩ সালে। দরিদ্র পরিবারের এই ছেলেটি জীবনের প্রথম থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। পিতা একজন বৃদ্ধ প্রতিম ব্যক্তি, জীবিকার সংগ্রাম তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত, আর এই সংগ্রামের কষ্ট ছাপিয়ে উঠতো রিয়াজের জীবনেও। তার শৈশব ছিল দুরন্ত, গ্রামবাংলার সবুজ মাঠে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দে ভরা। শিশির ভেজা ঘাসে খালি পায়ে ছুটে চলার সে মুহূর্তগুলো যেন ছিল তার মুক্তির প্রতীক। মাঠে-মাঠে ঘুরে বেড়াত, গ্রামের মেঠোপথে খেলা করত। মাথার ওপর নীল আকাশ আর মনের মাঝে হাজারো রঙিন স্বপ্ন। দুরন্তপনা আর সৃষ্টিশীলতা মিলেমিশে তার শৈশবকে বানিয়ে তুলেছিল এক বিশুদ্ধ আনন্দের উৎস। তবে সে ছিল শুধু দুরন্তই নয়, অত্যন্ত মেধাবীও। প্রতিনিয়ত সে শিক্ষায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে চলত। দারিদ্র্যের দংশন সত্ত্বেও তার মনের মাঝে লুকিয়ে ছিল অসীম সম্ভাবনা। তার স্বপ্ন ছিল অনেক, চোখের সামনে ভেসে উঠত এক নতুন দিনের ছবি, যেখানে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখত। হাজারো স্বপ্ন বুনে সে এগিয়ে যাচ্ছিল জীবনের পথে, নিজের ও পরিবারের দারিদ্র্যের বেড়াজাল ছিন্ন করার সংকল্পে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। রিয়াজের জীবন ছিল গ্রাম বাংলার এক সাধারণ ছেলের অসাধারণ সংগ্রামের কাহিনী, যে মেধা, মনন ও স্বপ্নের আলোয় জীবনের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যেতে চেয়েছিল। যেভাবে শহীদ হলেন ১৯ জুলাই ২০২৪, বসিলা ব্রিজে এক সংগ্রামী অধ্যায় রচিত হয়, যেখানে ছাত্র-জনতা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মশাল জ্বালিয়ে দাঁড়িয়েছিল। সারা দেশজুড়ে তখন বিক্ষোভের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল। সেই আগুনের শিখায় ছিলেন শহীদ রিয়াজ, এক দুরন্ত কিশোর, যে জন্মসূত্রেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আগুন ধারণ করেছিল। হাসিনার নানা অপকর্ম আর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল অবিচল ও নির্ভীক। সেদিন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার মিছিল বসিলা ব্রিজের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, আর তাদের প্রতিরোধের শক্তি দেখে পুলিশের মনে ভীতি ও ক্রোধের সঞ্চার হচ্ছিল। আচমকাই সংঘর্ষের সূত্রপাত। পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা অস্ত্র হাতে শাস্ত্রের নামে আক্রমণ শুরু করলো। তাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলো আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একদল উগ্র কর্মী, যারা হেলমেট পরিহিত, হাতে লাঠি, রামদা, আর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের দিকে এগিয়ে আসছিল, যেন এদের কণ্ঠস্বর চিরতরে স্তব্ধ করতে চায়। রিয়াজ ছিলেন এই আন্দোলনের অগ্রপথিক। নির্ভীক ও সাহসী, তিনি কোনো বাধার সামনে থেমে থাকেননি। মিছিলে প্রথম সারিতে ছিলেন তিনি, তার চোখে ছিল স্বাধীনতার অঙ্গীকার, হাতে ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার শপথ। হঠাৎ, গুলির আওয়াজে আকাশ কেঁপে উঠলো। রিয়াজ মাথায় গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। তার রক্তে ভিজে উঠল সেই ব্রিজ, যা সাক্ষী হলো তার বীরত্বের। রিয়াজের নিথর দেহ মাটিতে পড়ে থাকলেও তার সাহসিকতা সেই মুহূর্তে অমর হয়ে গেল। দুদিন পর, হাসপাতালের মর্গে তার নিথর দেহ পাওয়া যায়। পরিবারের জন্য যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। যে ছেলে ছিল তাদের স্বপ্ন, তাদের ভবিষ্যতের আলো, সেই আলো নিভে গেল ঘাতকের এক নির্মম গুলিতে। মায়ের চোখে ছিলো অশ্রুধারা, বাবার কণ্ঠে নীরব হাহাকার। তাদের সমস্ত আশা আর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো এক মুহূর্তে। শহীদ রিয়াজ, যে তার সাহসিকতা আর বলিষ্ঠ অবস্থানের জন্য আজও স্মরণীয়, নিজের জীবন দিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পতাকা উড়িয়েছিলেন। তার রক্তে ভিজে গেছে বাংলাদেশের মাটি, আর সেই মাটিই তাকে এক অমর শহীদ করে রেখেছে। শহীদ সম্পকে নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শহীদ রিয়াজ ছিল আমাদের সবার প্রিয়, প্রাণবন্ত একটি ছেলে। তার মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকত, যেন দুঃখ-কষ্ট তাকে ছুঁতে পারত না। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে, সে সদালাপী স্বভাবেই মিষ্টি ভাষায় উত্তর দিত। এই সরলতা আর ভালো ব্যবহারের জন্য সবার কাছেই ছিল সে অতি আপনজন। তাকে দেখলে বোঝা যেত, শৈশবের দুরন্তপনা তার রক্তে মিশে ছিল। মাঠে গেলেই রিয়াজকে দেখা যেত দৌড়ঝাঁপ করছে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠেছে। কিন্তু খেলাধুলার পাশাপাশি দায়িত্ববোধও তার সমান ছিল। যতই খেলায় মগ্ন থাকুক, সময়মতো কাজের ফাঁকে মাঠের কাজও সে করতো নিষ্ঠার সঙ্গে। ধর্মের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়তো সে। মাঠে খেলতে খেলতে যখন নামাজের সময় হত, রিয়াজ আর এক মুহূর্ত দেরি করত না। নামাজের সময় হলে সে সব কাজ ফেলে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর কাছে দোয়া করতো। আমরা আজও রিয়াজকে স্মরণ করি সেই সদাহাস্য, সদালাপী দুরন্ত কিশোর হিসেবে, যার জীবনের প্রতিটি দিনই যেন মাঠে কাজ আর খেলার মধ্য দিয়ে এক সুসমন্বয়ে কাটত। শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ রিয়াজের গল্প এক মর্মান্তিক দারিদ্রের প্রতিচ্ছবি। ছোটবেলা থেকেই রিয়াজ দেখেছে কীভাবে তার বাবা অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করেন, সারাদিনের ক্লান্ত পরিশ্রমের পরও যা পেটে খাবার জোটাতে যথেষ্ট নয়। সংসারে চার ভাইবোন, তাদের ভবিষ্যৎ গড়া তো দূরের কথা, প্রতিদিনের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। মায়ের মুখে কষ্টের চিহ্ন দিনদিন গাঢ় হতে থাকে। কখনো কখনো ঘরে চাল না থাকলে সবাইকে উপোস করে কাটাতে হতো। তবু, এই দৈন্যদশার মধ্যেও রিয়াজের বাবা-মা স্বপ্ন দেখতেন, সন্তানদের শিক্ষিত মানুষ করার। তাদের বিশ্বাস ছিল, পড়াশোনা করলেই একদিন এই দারিদ্র্যের বেড়াজাল ভেঙে রিয়াজ আর তার ভাইবোনেরা আলোর পথে চলবে। কিন্তু বাস্তবের কঠিন লড়াইয়ে সেই স্বপ্নগুলি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছিল। রিয়াজের জীবনে শৈশব বলতে ছিল না কোনো রূপকথা, ছিল না কোনো খেলাধুলার অবসর। মাঠে অন্যের জমিতে কাজ করতে করতেই তার দিন গড়াত। আর বাবা, প্রতিটি ধানগাছের মধ্যে স্বপ্ন বুনতেন যে কোনোদিন হয়তো এই কষ্টের দিন শেষ হবে। কিন্তু দিনগুলো শুধু কষ্টের জাল আরও শক্ত করে বেঁধে রাখত তাদের। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: রিয়াজ হোসেন জন্ম তারিখ : ০৯/০৩/২০০৩ পেশা : শিক্ষার্থী ও দোকান কর্মচারী স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: ছোট ভাউয়াল, ইউনিয়ন : তারা নগর, থানা: কেরানীগঞ্জ, জেলা: ঢাকা পিতার নাম : আসহাব উদ্দিন বয়স : ৭০, কৃষি কাজ, মাতার নাম : শেফালি বেগম, ৫৪ পেশা-গৃহিণী মাসিক আয় : ৫০০০/- আয়ের উৎস : দোকান কর্মচারী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন : ১) জুয়েল, বয়স- ২৭, বেকার : ২) রানা, বয়স- ২২, দোকান কর্মচারী ঘটনার স্থান : বসিলা ব্রিজ, ঢাকা আক্রমণকারী : ঘাতক পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : তারিখ-১৯ জুলাই,২০২৪ নিহত হওয়ার সময়কাল : তারিখ-১৯ জুলাই, ২০২৪, সেবাদাস হাসপাতাল কবরস্থান : পারিবারিক কবরস্থান প্রস্তাবনা বড় ভাই বেকার, তাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া স্থায়ী একটি ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রিয়াজ হোসেন
Image of মো: রিয়াজ হোসেন
Image of মো: রিয়াজ হোসেন
Image of মো: রিয়াজ হোসেন
Image of মো: রিয়াজ হোসেন
Image of মো: রিয়াজ হোসেন
Image of মো: রিয়াজ হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সোহেল

মো: জুনায়েত হোসেন

ইমরান হাসান

মোঃ সুজন খাঁন

মো: মেহেদী হাসান

মো: সুজন মিয়া

মাহবুবুর রহমান সোহেল

নাফিসা হোসেন মারওয়া

জাহাঙ্গীর আলম

পারভেজ হাওলাদার

শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন

হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo