জন্ম তারিখ: ১২ জুলাই, ২০২০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : শিশু, শাহাদাতের স্থান : শান্তি নিবাস-২, মিরাজনগর, পুখুরিয়া, ভাঙা, ফরিদপুর
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ এক ঘৃণ্য নাম। দলটি যতবারই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পেয়েছে ততবারই ফ্যাসিবাদ কায়েম করে জনগণের সকল ধরনের অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে। ‘৭২-‘৭৫ একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েমের ফলশ্রুতিতে সেনাবিদ্রোহে স্বপরিবারে নিহত হয় তৎকালীন একনায়ক শাসক শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর কিছুদিন দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদারতায় অন্যান্য দলের মত আওয়ামী রাজনীতি করার বৈধতা পেলেও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে কাটাতে হয় দলটিকে। এরশাদের স্বৈরশাসনের কারণে আবারও পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায় আওয়ামীলীগ। প্রথমে ক্ষমতায় যেতে না পারলেও ১৯৯৬ সালে আরও একবার ক্ষমতার স্বাদ পায় দলটি। ক্ষমতা পেয়েই আবার পূর্বের আচরণে ফিরে আসতে চেষ্টা করে দলটি। এরই মধ্যে কেটে যায় পাঁচ বছর। জনগণও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে ২০০১ সালের নির্বাচনে। বিভিন্ন সূত্রে জানায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে যোগসাজশ করেছে, নির্বাচনের আগেই ক্ষমতা নিশ্চিত হয় আওয়ামীলীগের। নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী হন শেখ মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। শুরুতেই পূর্বপরিকল্পিত কথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে চৌকস সেনা অফিসার হত্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মেরুদণ্ডহীন করার উদ্যোগ। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দিয়ে ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত। একে একে বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দুর্নীতি দমন কমিশন, আমলাতন্ত্রসহ সকল কিছুকে জনগণের সেবার পরিবর্তে বানানো হয় শেখ হাসিনার ক্ষমতার হাতিয়ার। সরকারি চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয় শেখ হাসিনার ক্ষমতার সুবিধাজনক নিয়ম। আওয়ামী নেতাদের জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনীদের চাকুরী দিয়ে মেধাবীদের বঞ্চিত করে তৈরী করা হয় ৫৬% কোটা সিস্টেম। শহীদ আব্দুল আহাদের পরিচয় শিশু শহীদ আব্দুল আহাদ ২০২০ সালের ১২ জুলাই ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করে। চমৎকার একটি মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠতে যাচ্ছিল সে। কথা বলা শেখার সাথে সাথে সে শিখেছিল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)। দিনের অধিকাংশ সময় মোবাইলে কুরআন তিলাওয়াত শুনে সময় কাটত তার। মাকে নামাজ পড়তে দেখলেই পাশে দাঁড়িয়ে যেত সে মাকে অনুকরণ করতে। চোখের পানি সত্যিই ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায় যখন আমরা জানতে পেরেছি, এরকম একটি নিষ্পাপ শিশুও স্বৈরাচারের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। যা ঘটেছিলো ১৯ জুলাই ২০২৪। দিনটি ছিল শুক্রবার। বাবা মায়ের সাথে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল শিশু আহাদ। আপন মনে এটা ওটা দিয়ে খেলছিল। এই দুনিয়ার নির্মমতা বুঝার বয়স তার হয়নি। কারও প্রতি হিংসা-দ্বেষ-ক্ষোভ ছিল না তার মাসুম হৃদয়ে। বাসা থেকে অনেকটা দূরেই কোটার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে বের হয়েছিল। সেই মিছিলে স্বৈরাচার সরকারের আদেশে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে পুলিশ ও আনসার বাহিনী। সাথে যোগ দেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী। লাঠিপেটা, কোপানোর সাথে চলতে থাকে অজস্র গুলি। তার একটি গুলি চলে আসে আহাদদের বাসায়। গুলির শব্দ শুনে পিছন ফিরে আহাদের মা দেখেন চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে আহাদ। চিৎকার দিয়ে মূর্ছা যান মিসেস সুমি। আহাদকে নেয়া হয় হাসপাতালে। ডাক্তাররা জানান আহাদ আর নেই। মাসুম বাচ্চার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে পরিবারটিতে। এখনো পাগলের মত আহাদের জিনিসপত্র নিয়ে ঝিম ধরে বসে থাকেন আহাদের মা। কখনো কখনো ঢুকরে কেঁদে উঠেন। পারিবারিক অবস্থা আহাদদের পারিবারিক অবস্থা ভালো। তার বাবা একজন আয়কর কর্মকর্তা। সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে ইসলামী সুশিক্ষায় শিক্ষিত করছিলেন তিনি। সে স্বপ্নের প্রদীপ নিভে গেলো একটি ঝড়ো বাতাসে। পরিবারে এখন কেবলই শোকের কালো ছায়া। একনজরে শহীদ আহাদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: আব্দুল আহাদ জন্ম : ১২ই জুলাই ২০২০, ফরিদপুর শহীদের পেশা : শিশু পিতা : আবুল হাসান শান্ত, আয়কর কর্মকর্তা মাতা : কুহিনূর আক্তার সুমি, গৃহিণী স্থায়ী ঠিকানা : পুখুরিয়া, ভাঙা, ফরিদপুর পরিবারের অন্যান্য সদস্য : ১ ভাই: মেহরাব হাসান বিহান (৮), ছাত্র, হিফজ শাহাদাৎ : ১৯ জুলাই, ২০২৪ শান্তি নিবাস-২, মিরাজনগর, পুখুরিয়া, ভাঙা, ফরিদপুর