Image of সাবিদ হোসেন

নাম: সাবিদ হোসেন

জন্ম তারিখ: ১ ডিসেম্বর, ২০০৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষার্থী শাহাদাতের স্থান : কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, উত্তরা,ঢাকা

শহীদের জীবনী

শহীদ সাবিদ হোসেন বাংলার মাটিতে জন্ম নেওয়া এক সাহসী ও প্রতিভাবান তরুণ। তিনি ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর থানার ডিগ্রীকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাহমুদুল হোসেন কৃষক হিসেবে জীবনযাপন করেন এবং মাতা সালমা জাকেরা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। সাবিদ ছোটবেলায় গাজীপুরে চলে আসেন এবং সেখানে তাঁর আঙ্কেলের(ফুফা ফুফুর বাসা) কাছে থেকে পড়ালেখা শুরু করেন। সেখানে তিনি একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পড়ালেখার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল, এবং বাবা-মায়ের থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও তিনি কঠোর পরিশ্রম করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতেন। মৃত্যুকালে সাবিদ গাজীপুরের রেঁনেসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন এবং তাঁর এসএসসি পরীক্ষা শিগগিরই অনুষ্ঠিত হতে চলেছিল। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও বুদ্ধিমান বালক। তিনি দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট, এবং তাঁর বড় বোন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। দুঃখজনকভাবে, সাবিদ অকালেই মৃত্যুবরণ করেন, যা তাঁর পরিবার ও আত্মীয়দের জন্য একটি গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মা-বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাঁর শোকসাগরে ডুবে রয়েছেন। শহীদ সাবিদ হোসেনের জীবন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রতিটি তরুণের মধ্যে অসীম সম্ভাবনা থাকে এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদের সমর্থন প্রয়োজন। তাঁর স্মৃতি ও আদর্শ চিরকাল আমাদের মনে থাকবে। শাহাদাতের ঘটনার বর্ণনা শহীদ সাবিত হোসেন ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিল থেকে শাহাদাত বরণ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে স্বৈরাচারী হাসিনা রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপদান করেন। ৫৬% অযৌক্তিক কোটার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশকে দমন করার লক্ষ্যে লেলিয়ে দেয় পুলিশ ও দলীয় গুণ্ডা বাহিনী। সারাদেশে চালানো হয় শিক্ষার্থীদের উপরে ক্র্যাকডাউন। ১৫ জুলাই থেকে দেশের পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যেন ছাত্র পরিচয় একটি আতংকের নাম। কোন শিক্ষার্থী তাদের নিজস্ব পরিচয় নিয়ে রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজারে বের হতে পারেনি। যেখানেই কোন ছাত্র বা ছাত্রী পেয়েছে সেখানেই তাদের উপর চালিয়েছে নৃশংস হামলা। বাসা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে দেওয়া হয়েছে হত্যা মামলার মত জঘন্য মিথ্যা মামলা। রাস্তায় বের হলে পুলিশ বিজিবি নির্দ্বিধায় গুলি করে মেরেছে ছাত্রদেরকে। প্রথমদিকে ছাত্রদের আন্দোলন থাকলেও ১৮ তারিখের পরে তা রূপ নেয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমন করার জন্য দেওয়া হয়েছিল কারফিউ। কারফিউর মধ্যেই ছাত্র-জনতা রাস্তায় নামলে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। যা মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড সেবা বন্ধ করে দিয়ে বিশ্বের কাছে লুকাতে চেয়েছে স্বৈরাচারী সরকার। ক্রমান্বয়ে আন্দোলন দেশ থেকে বিদেশেও ছড়িয়ে যায়। বিদেশ থেকে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে দেয়। বিদেশ থেকে প্রবাসীরা এভাবেই হাসিনার হত্যা মহাযজ্ঞের প্রতিবাদ করেছিল। শেষ পর্যায়ে ৫ তারিখে হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য। ১৫ বছরের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেয়ে দেশের সকল মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা রাস্তায় বিজয় উল্লাস করতে থাকে। সেই বিজয় উল্লাসে অংশগ্রহণ করতে শহীদ সাবিদ ও তার কয়েকজন বন্ধু বাসা থেকে বের হয়। তারা টঙ্গী থেকে বিজয় মিছিল করতে করতে উত্তরা আজমপুর এর কাছে আসে। সেখানে দেখতে পান পুলিশ ও যুবলীগ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের উপর গুলি চালাচ্ছে। দুর্ভাগ্য ক্রমে শহীদ সাবিদের মাথায় একটি গুলি বিদ্ধ হয়। শহীদ সাবিত কে সেখান থেকে তার বন্ধু সাগর ও অন্যান্য বন্ধুর সাহায্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের কারণে শহীদ সাবিত মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।তার বন্ধু সাগর শহীদ সাবিদের পিতাকে বিকাল ৫ টার দিকে ফোন দিয়ে তার শাহাদাতের খবর জানালে পরিবারের সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পিতা-মাতার একমাত্র ছেলে সন্তান কে হারিয়ে যেন তারা এখন নিঃস্ব। শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শহীদের পিতা কৃষিকাজ করেন এবং তার মাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। শহীদের একটিমাত্র বোন যিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ২০২৪ সালেই। পিতা মাতা সন্তানকে হারিয়ে নিঃস্ব হলেও অর্থনৈতিকভাবে তারা কিছুটা স্বাবলম্বী। শহীদের স্বজনদের স্মৃতি বর্ণনা রেঁনেসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, মানুষ বিভিন্নভাবে মারা যায়। কেউ মারা যায় সৎ পথে, দেশের জন্য যুদ্ধ করতে করতে। আমাদের শহীদ সাবিদ খুবই ভালো ছেলে, যে দেশের জন্য শাহাদাত বরণ করেছেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শহীদ সাবিদ হোসেন জন্ম তারিখ : ০১-১২-২০০৯ ধর্ম : ইসলাম পেশা : শিক্ষার্থী জাতীয়তা : বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান : রেনেসাঁ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টঙ্গী, গাজীপুর বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত পিতার নাম, বয়স,অবস্থা : মো: মাহমুদ হোসেন, পেশা: কৃষি কাজ মায়ের নাম, পেশা : সালমা জাকেরা, পেশা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পারিবারিক সদস্য : ৩ জন ভাই বোন সংখ্যা : এক ভাই, এক বোন : ১.ফারজানা তাসনিম, পেশা: শিক্ষার্থী, শ্রেণী: এইচএসসি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ডিগ্রী কান্দি, ইউনিয়ন: উজানি, থানা: মকসুদপুর, জেলা: গোপালগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : টঙ্গী, গাজীপুর ঘটনার স্থান : উত্তরা আজমপুর আঘাতকারী : পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪ ইং, আনুমানিক বিকাল পাঁচটা। নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, উত্তরা,ঢাকা শহীদের কবরে বর্তমান অবস্থান : ডিগ্রিকান্দি, উজানী, মোকসেদপুর, গোপালগঞ্জ। নিজ গ্রামে প্রস্তাবনা : শহীদ সাবিদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করা। : একমাত্র বোনের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা। : এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of সাবিদ হোসেন
Image of সাবিদ হোসেন
Image of সাবিদ হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মেহেদী হাসান

মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন

সজল মিয়া

মোস্তফা জামান সমুদ্র

মো: মাহফুজ

শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত

মো: আব্দুল আহাদ

আক্কাস আলী

সাজ্জাদ হোসেন সজল

আবু মুজাহিদ মল্লিক

আবদুল্লাহ আল রোমান

মামুন সরদার

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo