জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : রিকশাচালক, শাহাদাতের স্থান : ফরাজি হাসপাতাল, রামপুরা, ঢাকা
শহীদ বাবু মোল্লা, গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর থানার দক্ষিণ গঙ্গারামপুর গ্রামের সন্তান, একজন সংগ্রামী ব্যক্তি যিনি জীবনের প্রতিটি বাঁকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, তিনি অতি ছোটবেলা থেকেই কঠোর বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করেন। পিতা ফারুক মোল্লার অকাল মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে কঠিন বিপর্যয়। মায়ের সাহসে বেড়ে ওঠা শহীদ বাবু, যিনি ছোটবেলায় অনেক কষ্ট সয়ে বড় হন, অটোরিকশাচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জীবন সংগ্রাম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বাবু মোল্লা জীবনের প্রতি আশাবাদী ছিলেন। তিন সন্তানের পিতা হিসেবে, তার জীবনের লক্ষ্য ছিল সন্তানদের ভালোর পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বড় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে, তিনি আশা করেছিলেন যে তার মেয়ে একদিন তাদের পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু সংসারের দায়িত্বের কারণে একবার ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছোট মেয়ের জন্মের সময় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়। রিকশার মালিক রিকশাটি বিক্রি করে দেওয়ার পর, বাবু বাধ্য হয়ে ঢাকা শহরে চলে যান ঋণ পরিশোধের জন্য। স্বপ্নের পরাজয় ঢাকায় তিন দিন রিকশা চালনোর পরেই বাবু মোল্লা দুর্ভাগ্যক্রমে শহীদ হয়ে যান। তার জীবন সংগ্রাম, স্বপ্ন ও আশা, সব কিছুই থেমে যায়। তবুও, তার রেখে যাওয়া তিনটি সন্তান দুই মেয়ে ও এক ছেলে বাবার স্বপ্ন ও আদর্শকে ধারক হিসাবে নিয়ে চলবে। বাবু মোল্লার জীবন একটি প্রেরণা, যেখানে দারিদ্র এবং সংগ্রামের মধ্যেও একটি পরিবারে ভালোবাসা এবং আশা বিদ্যমান। মৃত্যুর পরেও বাবু মোল্লার স্মৃতি, তার অসীম সাহস ও আত্মত্যাগ, সন্তানদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তাদের জীবনযাত্রা ও শিক্ষার মধ্যে বাবু মোল্লার মূল্যবোধের ছাপ স্পষ্টভাবে দেখা যাবে, যা তার সত্যিকারের অর্জন। শহীদের শাহাদাত বরণের ঘটনা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় কোটার সংস্কার দাবিতে। প্রথমে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসলেও দ্রুতই আন্দোলনে সাধারণ জনগণ ও অভিভাবকরাও যুক্ত হন। ১৮ জুলাই, ছাত্ররা সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয়, যা ঢাকাসহ সারাদেশে কার্যকর হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশী নির্যাতন শুরু হয়, এবং সরকার মোবাইল ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ১৯ জুলাই, আন্দোলনের সমর্থনে রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশ এবং যুবলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালায়। দেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়ন করা হয়। বিজিবি ও পুলিশ নৃশংস ভাবে হত্যা করে ছাত্র জনতাকে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে পুলিশ বাহিনী। এরই মধ্যে বাবু মোল্লাকে ঢাকা যেতে হয়। অটো রিকশাচালক বাবু মোল্লার ছোট মেয়ের জন্মের সময় পাঁচ হাজার টাকা ঋণ করতে হয়। মেয়ের জন্মের কিছুদিন পর অটোরিকশার মালিক রিকশা বিক্রি করে দিলে বিপদে পরে যান তিনি। কোন উপায় না পেয়ে ১৪ জুলাইয়ে তিনি ঢাকা শহরে যান রিকশা চালানোর জন্য। রিকশা চালিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারলে তিনি আবার ফিরে আসবেন গ্রামে ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীর কাছে। তিনি ঢাকায় গিয়ে গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে বেশ ভালোভাবেই রিকশা চালাচ্ছিলেন। ১৮, ১৯ তারিখে ছাত্র আন্দোলনের অনেককেই পুলিশ গুলি করে আহত-নিহত করলে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সহায়তা করেন তিনি। ১৯ তারিখ শুক্রবার জুমার নামাজের পরে রিকশা নিয়ে তার ভগ্নিপতির সাথে বের হন। একটু পর পুলিশ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীরা ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালাতে থাকে। বিকাল ৪ টার দিকে রিকশা চালানো অবস্থায় শহীদ বাবু মোল্লার শরীরে গুলি লাগে। তার ভগ্নিপতি ও স্থানীয়রা তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত আটটার সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জনাব বাবু মোল্লা। তিন শিশু সন্তানের অসহায়ত্ব শহীদ বাবু মোল্লার ছোট ছোট তিনটি বাচ্চা সন্তান রয়েছে। তার ছোট মেয়ের বয়স মাত্র ৫ বছর। এই মুহূর্তে স্ত্রীর পক্ষে কোন কাজ করা সম্ভব নয়। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী তার সন্তানদেরকে নিয়ে এক মানবেতর জীবন যাপন। তার পরিবারকে দেখাশোনা করার মত কোন ব্যক্তি আর নেই। কে দেখবে এই পাঁচ সাত বছরের ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনা। কে নিবে তাদের পড়াশোনা ও লালন পালনের দায়িত্ব? তাদের জীবনের এই করুণ পরিস্থিতি লিখে প্রকাশ করার সম্ভব নয়। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শহীদ বাবু মোল্লা ধর্ম : ইসলাম পেশা : রিকশাচালক বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত পরিবারিক সদস্য : ৪ জন ছেলেমেয়ে : ৩ জন ১. মেয়ে: রোজা মণি, বয়স: ৮, শ্রেই: শিশু শ্রেণী ২. ছেলে: ইয়ামিন মোল্লা, বয়স: ০৫ ৩. মেয়ে: বয়স: ২ মাস পিতার নাম : মৃত ফারুক মোল্লা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিণ গঙ্গারামপুর, ইউনিয়ন: সিন্দাঘাট, থানা: মকসুদপুর, জেল: গোপালগঞ্জ বর্তমান ঠিকান : দক্ষিণ গঙ্গারামপুর, ইউনিয়ন: সিন্দাঘাট, থানা: মকসুদপুর, জেল: গোপালগঞ্জ ঘটনার স্থান : রামপুরা আঘাতকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪ আনুমানিক বিকাল ৪: ০০টা নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, রাত ৮.০০ টা, ফরাজি হাসপাতাল, রামপুরা, ঢাকা শহীদের কবরে বর্তমান অবস্থান : নিজ গ্রামে