জন্ম তারিখ: ১৯ আগস্ট, ২০০৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র , শাহাদাতের স্থান : শকুনী লেক, মাদারীপুর।
দীপ্ত দে ২০০৩ সালের ১৯ আগস্ট মাদারীপুর জেলার সদর থানার তর মুগরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এক দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠেন, যেখানে তাঁর পিতা স্বপন কুমার দে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং মাতার নাম মনিকা দে, যিনি একজন গৃহিণী। তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন এবং মাসিক আয় মাত্র ১২,০০০ টাকা। দীপ্ত মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন এবং তাঁর রোল নম্বর ছিল ৩১২১২২০০২। তিনি তাঁর ধর্মের মাধ্যমে অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রেরণা লাভ করেন এবং কলেজে পড়ার সময় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতেন। ১৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে আন্দোলনের সময় পুলিশের হামলায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে কলেজ ও পরিবার-পরিজনের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া ফেলে, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শোকবার্তা পাঠানো হয়। দীপ্তের জীবন ও সংগ্রাম ভবিষ্যতের ছাত্রদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, যা শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করে। দীপ্তকে হারিয়ে দীপ্তের পরিবার স্বজনেরা আজ পাগলপ্রায় অবস্থায় পতিত হয়েছে। এই অপূরণীয় ক্ষতি কখনো পোষাবার নয়। শাহাদাতের ঘটনা ১৬ তারিখে রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া সারাদেশে প্রায় ৬ জন ছাত্রকে হত্যা করে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী ও পুলিশলীগ। পরদিন আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। অনেক জায়গায় গোলাগুলি চলতে থাকে।১৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে মাদারীপুরে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে তিনিও চলে আসেন। সকাল ৯:৩০ মিনিটে তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন, তারা ডিসি অফিসের লেকের পাশে জড়ো হয়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজিত হয়ে ওঠে। 'আমার ভাই মরলো কেন খুনি হাসিনা জবাব দে'এমন প্রতিবাদে উত্তাল জায়গাটি। প্রায় সাড়ে দশটার দিকে, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং পুলিশ বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা শুরু করে। এই হামলা দেখতে পেয়ে ছাত্র জনতার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে তারা। দীপ্তও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লেকের দিকে দৌড়াতে শুরু করেন। পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী মাদারীপুর শকুনি লেকের পানিতে ঝাঁপ দিতে বাধ্য হন। দীপ্তও এই বিপদময় পরিস্থিতি থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন এবং তিনি সাঁতরে পাড়ে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, হামলাকারীরা তাঁকে বাধা দেয়, তারা তার উপর টিয়ারশেলও নিক্ষেপ করে। কয়েকবার তিনি উঠে আসার চেষ্টা করলেও, তাঁকে পিটিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও তার শরীরে টিয়ারশেল লাগার কারণে তিনি সেখান থেকে উঠতে পারেনি। এক পর্যায়ে, তিনি পানিতে তলিয়ে যান। অনেকক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। দীপ্তের মৃত্যু পুরো ছাত্র সমাজে শোকের ছায়া ফেলে। তাঁর মৃত্যু আন্দোলনটির গুরুত্বকে নতুন মাত্রা দেয় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকারের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করে। দীপ্তের শাহাদাত, মাদারীপুরের ছাত্র আন্দোলনে একটি স্মরণীয় ও মর্মান্তিক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা ছাত্রদের সংগ্রামে নতুন উদ্দীপনা ও শক্তি যোগায়। এই ঘটনার ফলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে, এবং শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন। দীপ্তের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে তারা একত্রিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে অনেক পাহাড় মাড়িয়ে ৫ তারিখে আসে ছাত্র-জনতা বিজয়। পারিবারিক অবস্থা দীপ্তদের পরিবার অর্থনৈতিকভাবে খুবই সংকটপন্ন। তাদের পরিবারকে থাকার জন্য ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। বাবা চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে বাবার সামান্য আয় দিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পুলিশের নির্মমতা স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপরে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, বুলেট ইত্যাদি নিক্ষেপ করতে থাকে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য লেকের পাড় দিয়ে দৌড়াতে থাকে। অনেকেই নিজের জীবনকে বাঁচানোর জন্য লেকে ঝাঁপ দেয়। লেক থেকে পাড়ে ওঠার সময় তাদের উপরে চালানো হয় আবার অত্যাচার। উঠতে দেওয়া হয় না লেকের পারে। এদিকে মাদারীপুর থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির নিশ্চিত করেছিলেন, শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ অন্তত একশ রাউন্ড ফাঁকাগুলি করেছে। আসলে হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী ছত্রভঙ্গ করতে নয় বরং ছাত্র-জনতা হত্যা করতে গুলি চালিয়েছিল। এমন নৃশংস ঘটনা বিবেকবান কোন মানুষ করতে পারে না। এদের সাথে সহযোগিতা করেছে আওয়ামীলীগ যুবলীগ এর সন্ত্রাসীরা। যা খুবই নির্মমতা ও নির্লজ্জ। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য সমূহ নাম : শহীদ দীপ্ত দে জন্ম : ১৯ আগস্ট ২০০৩ জন্মস্থান : মাদারীপুর জেলা, সদর থানার তর মুগরিয়া গ্রাম পিতার নাম : স্বপন কুমার দে (অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মাতার নাম : মনিকা দে (গৃহিণী) পারিবারিক অবস্থান : দরিদ্র পরিবার পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ মাসিক আয় : ১২,০০০ টাকা ঘটনার স্থান : শকুনী লেক, মাদারীপুর আক্রমণকারী : ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগ ও পুলিশ আহত হওয়ার সময় কাল : ১৮ জুলাই ২০২৪ সকাল ১১ টা, মৃত্যুর সময়কাল ও স্থান : ১৮ জুলাই ২০১৪, আনুমানিক সাড়ে এগারোটা, সকলের মাদারীপুর কবর/শ্মশান : সার্বজনীন শ্রী শ্রী শ্মশান কালী মন্দির, দরগাখোলা, মাদারীপুর প্রস্তাবনা শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান স্থায়ী আবাসস্থল করে দেয়া অবসরপ্রাপ্ত শহীদের বাবাকে একটি ব্যবসা ধরিয়ে দেয়া