জন্ম তারিখ: ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : বিকাশ কোম্পানির কর্মকর্তা, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর ১০ নম্বর
শহীদ মামুন সরদার ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিবাদী যুবক। দেশ ও মাতৃকার জন্য তার আত্মত্যাগ সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালে মাদারীপুর জেলার সদর থানাধীন ঘাটমাঝি গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মোটামুটি স্বাবলম্বী পরিবারে দ্বিতীয় ছেলে সন্তান হওয়ায় পিতা মাতা যেমন খুশি তেমনি আত্মীয় স্বজনের মধ্যে আনন্দের ঢেউ লাগে। মামুন সরদার ছোটবেলা থেকে খুবই মেধাবী ছিলেন। লেখাপডা শেষে বিকাশ কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে কাজে যোগদান করেন। এ সময় শাহিনুর নামে এক মেয়ের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের কোল আলোকিত করে এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই পাঁচ বোনের বড় সংসারে মা আগেই মৃত্যুবরণ করেন। পিতা আবু তালেব সরদার সকল সন্তানকে আগলে রেখে তাদের মানুষ করেছিলেন। কিন্তু হায়নার দল পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ তুলে দিলেন। ভাইদের মধ্যে মামুন সরদার ছিলেন খুবই সাহসী ও দেশপ্রেমিক। অন্যায়কে কখনো মাথা পেতে নেননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে তিনি এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। উত্তাল আন্দোলনে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করার মানসে মামুন সরদার জীবন বাজি রেখে সহযোগিতা করেছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাতক পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন। মুহূর্তেই সুন্দর সোনার সংসারে অন্ধকারের কালো ছায়া নেমে আসে। ফুটফুটে সুন্দর শিশুটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হয়। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয়ের জন্য মামুন সরদার কোটি মানুষের হৃদয়ে অনুপ্রেরণার উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। যেভাবে শহীদ হলেন সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন মামুন সরদার মনের ভিতর সব সময় লালন করতেন। কিন্তু কার্যকর কোন প্লাটফর্ম না পাওয়ায় মনোঃকষ্ট অনুভব করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তিনি এটাকে স্বাগত জানান। এ আন্দোলনকে বেগবান করতে তিনি প্রথম থেকে সক্রিয় সহযোগিতা করেন। ১৭ জুলাই উত্তাল এ আন্দোলনে তিনি যোগদান করেন। বাসায় আসার পর স্ত্রী শাহিনুর বলেন, তুমি আর আন্দোলনে যাবে না। তোমার কিছু হলে আমাদের কি হবে। মামুন প্রতি উত্তরে বলেন, আমরা যদি মাঠে না নামি তাহলে ছাত্রদের আন্দোলন কিভাবে সফল হবে। পরদিন ১৯ জুলাই ২০২৪ মামুন সরদার দুপুরের খাওয়া শেষে তার খালাতো ভাই ও অধীনস্থ কর্মচারীদের সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগদান করেন। মুহূর্তেই আওয়ামী স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ বাহিনী বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ করতে থাকেন। সাথে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুন্ডাবাহিনী আমাদের উপর অর্তকিত আক্রমণ শুরু করলো। প্রথমে আমরা পাশে এক গলিতে ঢুকে পড়লাম। মিরপুর ১০ নম্বরের ওই স্থানের নেতৃত্বে ছিলেন মামুন সরদার। ফলে তিনি সাহস নিয়ে গলি থেকে রাজপথে বেরিয়ে আসলেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ঘাতক পুলিশ বাহিনী মামুনকে টার্গেট করে বুকে গুলি করে। মুহুর্তেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খালাতো ভাইসহ অন্য সাথীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে আসেন। পরবর্তীতে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দেশমাতৃকার জন্য লড়াইয়ে থাকা মামুন সরদার ইতিহাস হয়ে গেলেন। অন্যায় ও বৈষম্যর বিরুদ্ধে যারা কাজ করেছে মামুন সরকার তাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে রইলেন। শহীদ সম্পর্কে নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীর বক্তব্য শহীদ মামুন সরদার ছিলেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মানের অন্যতম পথ প্রদর্শক। সেটি তিনি সারা জীবন মনে লালন করতেন। প্রতিবেশীরা তার সম্পর্কে বলেন, মামুন সরদার অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল। আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতো। স্ত্রী শাহিনুর বলেন, মামুন সরদার তার অমায়িক ব্যবহারের কারণে সকলের কাছে সুপরিচিত ছিল। আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আমাকে একাকি কোথাও ছেড়ে দেননি। অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সে শহীদ হয়েছে। রাষ্ট্র তাকে বীরত্বের খেতাব দিবে এটা আমরা প্রত্যাশা করি। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা মামুন সরদারের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। মামুনের বড় ভাই নিজে প্রতিষ্ঠিত। বাবা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। ছোট ভাই ইতালি প্রবাসী। স্ত্রী শাহিনুর তার ১৬ মাসের ফুটফুটে কন্যা সন্তান মানহাকে নিয়ে মানুষিক যন্ত্রণায় আছে। কি হবে আমার ও আমার সন্তানের ভবিষ্যত। মেয়ের একটা ভালো ভবিষ্যতের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মামুন সরদার জন্ম : ২০/০৯/১৯৯১ পিতা : আবু তালেব সরদার মাতা : ইউনা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : ঘট মাঝি, ইউনিয়ন : ঘটমাঝি, থানা: মাদারীপুর সদর, জেলা : মাদারীপুর বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত স্ত্রী : শাহিনুর পেশা : বিকাশ কোম্পানির কর্মকর্তা ঘটনার স্থান: : মিরপুর ১০ নম্বর আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই আনুমানিক বিকাল ৩.০০টা শাহাদাতের সময়কাল : ১৯ জুলাই বিকাল ৪.০০টা আঘাতের ধরণ: বুকে গুলি করে আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের অবস্থান : ঘটমাঝি, মাদারীপুর প্রস্তাবনা ১. মামুন সরদারের এতিম মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন ২. ভবিষ্যৎ জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়তে পারে এজন্য সবসময় খোঁজখবর নেওয়া